বিবিসি বাংলা

০৪ এপ্রিল, ২০১৯ ২২:১৯

ভবন ব্যবহার সনদ আসলে কী?

গত দশ বছরে ৪০ হাজার ভবন অনুমোদন পেলেও অকুপেন্সি বা ব্যবহার সনদ আছে মাত্র ১৬২টির। কিন্তু এ সনদটি আসলে কী?

২০০৮ সালের ঢাকা মহানগর ইমারত বিধিমালা অনুযায়ী, কোনো ভবন নির্মাণ করা হলে সেটি ব্যবহার বা বসবাসের আগে ব্যবহার সনদ বা অকুপেন্সি সার্টিফিকেট নিতে হবে। এই সনদ না নিয়ে ভবন ব্যবহার করা যাবেনা। যদিও স্থপতি ইকবাল হাবীব বলছেন, রাজউক নিজেই এই বিধিমালা পাশের পর ৪০ হাজার ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে যেগুলোর মধ্যে মাত্র ১৬২টিতে এ সনদ আছে।

অকুপেন্সি সার্টিফিকেট বা ব্যবহার সনদ আসলে কী?
রাজউকের সদস্য (পরিকল্পনা) মেজর প্রকৌশলী শামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলছেন, একটি ভবন সঠিক ভাবে তৈরি হয়েছে কি-না, ভবনটি ব্যবহারের জন্য নিরাপদ কি-না, সেটি নিশ্চিত করার জন্যই অকুপেন্সি সার্টিফিকেট বা ব্যবহার সনদ।

তিনি বলেন, এ সনদ থাকলে ফ্লাট রেজিস্ট্রেশন কিংবা হস্তান্তরের মতো কাজগুলো করা যাওয়ার কথা নয়। এমনকি ফ্লাট বা ভবনের বিপরীতে ব্যাংক ঋণ নিতে হলেও এ সনদ থাকতে হবে।

তাহলে ৪০ হাজার ভবনের মধ্যে মাত্র ১৬২ টির এ সনদ কেনো - এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন এগুলো নিয়ে রাজউক এখন কাজ করছে। এসব বিষয়ে রাজউক আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে বলে আর কোনো মন্তব্য তিনি করতে রাজী হননি।

অকুপেন্সি সার্টিফিকেট কিভাবে প্রচলন হলো?
স্থপতি ইকবাল হাবিব বিবিসি বাংলাকে জানান, যে ২০০৮ সালে যখন ইমারত নির্মাণ বিধিমালা প্রণয়নের প্রস্তুতি নেয়া হয় তখন রাজউক দাবি করলো এতো ভবন দেখার মতো পর্যাপ্ত লোকবল তাদের তাদের নেই।

"তখন সিদ্ধান্ত হলো যে প্রত্যেকটি ভবনের সাথে সংশ্লিষ্ট সুপারভাইজার, প্রকৌশলীসহ নির্মাণ পর্যায়ে যারা জড়িত তারা ভবনটিতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা আছে নিশ্চিত করে একটি সার্টিফিকেট দেবে।"

এরপর তারা সেটি রাজউককে দিলে রাজউক তার পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করে ওই সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে ব্যবহার সনদ বা অকুপেন্সি সার্টিফিকেট দিবে বলে জানান হাবিব। কিন্তু রাজউক তার সেই প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেনি। তারা শুধু ব্যবহার সনদ দেয়ার ক্ষেত্রেই গাফলতি করেনি, এমনকি যে ১৬২ টি ভবন এই সনদ নিয়েছে সেগুলোর অনেকগুলোর সনদ নবায়ন নিশ্চিত করারও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, বলেন হাবিব।

তিনি জানান, যে নবায়ন করার সময়েও রাজউকের দেখার কথা যে ভবনটিতে ফায়ার ফাইটিং থেকে শুরু করে সব নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে কি-না সেটি পর্যবেক্ষণ ও নিশ্চিত করা। কিন্তু এসব কিছুই তারা করেনি। অথচ বাংলাদেশ বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন অ্যাক্ট ১৯৫২ এর অধীনে বিধিমালার আধুনিকায়ন করে ২০০৮ সালে অগ্নি ও পার্কিংয়ের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার পর এই ব্যবহার সনদ নেয়াকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

কিভাবে নিতে হয় ব্যবহার সনদ?
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্লানার্সের সাধারণ সম্পাদক স্থপতি আদিল মোহাম্মদ খান বিবিসি বাংলাকে বলেন, ব্যবহার সনদের সুনির্দিষ্ট ফরম আছে।

"ভবনটি কি আবাসিক নাকি কমার্শিয়াল হবে সেটি জানিয়ে ভূমি ব্যবহারের যে অনুমোদন নেয়া হয় তার ভিত্তিতে যে নকশা অনুমোদন হয়েছে ভবনটি ঠিক সেরকম তৈরি হয়েছে কি-না সেটি নিশ্চিত করতে হয়"। অর্থাৎ কেউ যখন কোনো ভবন নির্মাণ করবেন তা নির্ধারিত নকশা অনুযায়ী সিঁড়ি, ফায়ার ফাইটিং, ফায়ার এক্সিট, ব্যবহারের ধরণ আছে কি-না সেটি দেখার পরই অকুপেন্সি সার্টিফিকেট পাওয়ার কথা।

স্থপতি ইকবাল হাবিব বলছেন, এগুলো না থাকলে ভবনটি ব্যবহারের কোনো অনুমোদনই পাওয়ার কথা নয়।

তাছাড়া এগুলো থাকলেই কেবল ওই ভবনে গ্যাস বিদ্যুতের মতো পরিষেবা সেবা পাওয়ার কথা বলে জানান স্থপতি আদিল মোহাম্মদ খান।

তিনি বলেন, বিদ্যমান আইন অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ যদি দেখতে পায় কোনো ভবন এই সনদ ছাড়াই চলছে তাহলে সেটি বন্ধ করে দেয়ার ক্ষমতা তাদের আছে।

তবে রাজউকের কর্মকর্তারা ভবন পর্যবেক্ষণ চলার কথা জানিয়ে এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি।

স্থপতি ইকবাল হাবিব বলছেন, রাজউকের বলার আর কিছু থাকতে পারেনা, তাদের এখন খুঁজে বের করা উচিত কারা সনদ ছাড়াই ভবন ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে।

গ্যাস বিদ্যুৎ সংযোগের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হয়েছিলো?
জানা গেছে, প্রায় এক বছর আগে পরিষেবা সংযোগ অর্থাৎ গ্যাস বিদ্যুতের মতো সেবাগুলো নিতে ভবন ব্যবহার সনদ (অকুপেন্সি সার্টিফিকেট) বাধ্যতামূলক করে নির্দেশনাও জারি করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এরপর বিদ্যুৎ বিভাগের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয় সভায় এটি অনুসরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সিদ্ধান্ত মোতাবেক নতুন সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে মূল নকশার সাথে সব ঠিক থাকলেই সংযোগ দেবে বিতরণ কোম্পানিগুলো। কিন্তু কার্যত শেষ পর্যন্ত এগুলো কিছুই আর মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়িত হয়নি।

স্থপতি আদিল মোহাম্মদ খান বলছেন, "কারা ভবন করেছে- নির্মাতা, প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক, স্থপতি- সবারই দায় আছে। এবং এদের কাছ থেকে সার্টিফিকেট নেয়ার দায়িত্ব ছিলো রাজউকের।"

"কিন্তু তারা সেটি পালন করেনি আবার সনদ ছাড়াই ভবন ব্যবহারে তারা বাধা না দিয়ে বরং অনুমোদন দিয়েছে।"

আপনার মন্তব্য

আলোচিত