কমলগঞ্জ প্রতিনিধি

২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:৩১

বাড়ির বাঁশঝাড়ে শত বকের আবাস!

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের সরিষকান্দি গ্রামের আনোয়ার খানের বাড়িতে বক পাখির কলকাকলী আর কিচির-মিচির শব্দে লোকজনের রাত পোহায়। পাখির সাথে মিতালী গড়ে তোলেছে বাড়ির লোকজন।

উপজেলা পরিষদের প্রয়াত প্রাক্তন চেয়ারম্যান আনোয়ার খান ও তাঁর পাশের বাড়ির বাঁশঝাড়ে গত কয়েক বছর যাবত সাদা বক পাখি নিরাপদ আবাসস্থল গড়ে তোলছে। বছরের একটি মৌসুমে অসংখ্য সাদা বকসহ কয়েকটি প্রজাতির পাখির নিরাপদ অভয়ারণ্য যে কাউকে মুগ্ধ করে। পাখির নিরাপদ এই অভয়ারণ্যেও শিকারীদের কিছু তৎপরতা থাকলেও সেটিও রুখে দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

অতীতের মতো গ্রামের বাড়িঘরে গাছের ডালে, বাঁশঝাড় ও সুপারি গাছে পাখির বাসা। বিদেশী প্রজাতির গাছগাছালি, রাসায়নিক সার, কীটনাশক আর মনুষ্যসৃষ্ট কর্মকান্ডে প্রজননে বাঁধাগ্রস্ত, আবাসস্থল বিনষ্ট ও খাদ্য সংকটের কারনে বিপন্ন হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন ধরনের পাখি। ফলে সংকটাপন্ন হয়ে পড়ছে দেশীয় প্রজাতির পাখি। এসব ভেদ করে এখনও কোন কোন স্থানে গ্রামগঞ্জের বাড়ির আশেপাশে প্রাচীনতম গাছ আর বাঁশঝাড়ে পাখি বাসা বাঁধছে। আর পাখির সেসব বাসাগুলি হয়ে পড়ছে বিরল।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মৌলভীবাজার-শমশেরসরনগর সড়কের গাঁ ঘেষে সরিষকান্দি গ্রামের প্রাক্তন উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার খান ও তাঁর পাশের বাড়ির আতাউর রহমান খানের বাড়ি। বাড়ির পেছনে পুকুর পাড়ে বাঁশঝাড়ের সারি। সারিবদ্ধ  বাঁশঝাড়ে চার-পাঁচ বছর ধরে নিরাপদ আবাসভূমি গড়েছে বকসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের সময় যে কারো নজরে পড়বে ধবধবে সাদা, সোনালী বকসহ বিভিন্ন জাতের বকের কিচির-মিচির শব্দ আর এদিক সেদিক লাফালাফির দৃশ্য।

অতীতে গ্রামগঞ্জের আনাচে-কানাচে সচরাচর পাখির বিচরন দেখা যেতো। সম্প্রতি সময়ে বিভিন্ন কারনে এসব দৃশ্য আর চোখে পড়ছে না। দেশীয় প্রজাতির প্রাচীনতম গাছ বিলুপ্ত, খাবার সংকট, জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ এসব কারনে পাখি নিরাপদ আবাসভূমি হারাচ্ছে। সরিষকান্দি গ্রামের ওই দু’টি বাড়ির পুরনো বাঁশঝাড় ও গাছগাছালিতে গত কয়েক বছর ধরে সাদা বক, সোনালী বক, পানকৌড়িসহ কয়েক প্রজাতির পাখির নিরাপদ আবাসস্থল গড়ে তোলেছে। সকালে আর বিকালে পাখির কিচির মিচির শব্দ গোটা বাড়ির পরিবেশকে ভিন্ন আঙ্গিকে মাতিয়ে তোলে।

গ্রামের জগরাম শব্দকর জানান, কয়েক বছর ধরে এসব পাখি এই দু’টি বাড়ির বাঁশঝাড় ও গাছগাছালিতে অবাদ বিচরন করছে। সকালে ও বিকালে পাখির কিচির-মিচির শব্দ দূর থেকেই শোনা যায়। সকালে খাবারের উদ্দেশ্যে সবগুলো পাখিই মান্দারী বন্দের বিশাল কৃষি জমিতে বেরিয়ে পড়ে। আবার বিকালে ধীরে ধীরে বাসস্থানে ফিরতে থাকে। তিনি আরো বলেন, গত বছর ও এর আগের বছর সমুহে বক পাখির উপস্থিতি আরও বেশি ছিল। বাড়ির পিছনের ফিশারিসহ আশপাশ এলাকার আবাদী জমি থেকে বেশিরভাগ খাবার খেতে দেখা যায়। তবে পাখির নিরাপদ আবাসভূমি হলেও কিছুসংখ্যক শিকারীদের অপতৎপরতা রয়েছে। এসব শিকারীরা ক্ষেতের জমিতে কিংবা বন্দুক নিয়ে সন্ধ্যায় গোপনে পাখি শিকারের চেষ্টা করে। এসব কারণে পাখির উপস্থিতি আগের চেয়ে কম দেখা যাচ্ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত