নিজস্ব প্রতিবেদক

০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ১৭:১৮

পীরের মাজারে প্রেমের জিকির

‘পীরের মাজারে বসে কোনো রাতে বাউলের দল
যেমন হঠ্যাৎ ধরে হু হু শব্দে প্রেমের জিকির
আমার কবিতা সেই মাতালদের রাতের গজল’
- আল মাহমুদ

এই সময়ে সিলেটের শাহজালাল (র.) মাজারে আসলে আল মাহমুদের কবিতার এই দৃশ্যকল্পটিই জীবন্ত হয়ে উঠবে। মাজার প্রাঙ্গনে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে হয়ে বসে আছেন অসংখ্য নারী পুরুষ। হাজার হাজার বাউল ফকির। এদের বেশিরভাগই দেশের দূর দূরান্ত থেকে মিলিত হয়েছেন এখানে। মাথা জাকিয়ে একমনে জিকির করে চলছেন তারা। তাদের বেশিরভাগই একে অপরকে চেনেন না। জিকির আর গজলের সুরেই এক হয়ে গেছেন তারা।

পা ফেলবার জায়গাটুকু নেই মাজার প্রঙ্গনে। তারউপর তিন ফটক দিয়েই বানের জলের মতো মানুষ ঢুকছেন মাজারে। হাতে বিশাল লাল গিলাপ। সকলের কণ্ঠে জিকির। এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। এরমধ্যেই কেউ কেউ মাজারের পুকুরের গজার মাছকে খাবার ছুড়ে দিচ্ছেন। কেউ কেউ খেলা করছেন মাজারের কবুতরের সাথে। কেউবা ধ্যানমগ্ন হয়ে আছেন প্রার্থনায়। পৌছে যাচ্ছেন এক অপার্থিব জগতে।

বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হয়েছে সিলেট হযরত শাহজালাল (র.) মাজারের বার্ষিক ওরস মোবারক। প্রতি বছর ১৯ ও ২০ জিলকদ দুই দিনব্যাপী এ ওরস অনুষ্ঠিত হয়। এবার ৬৯৬তম বারের মতো আয়োজিত হচ্ছে ওরস।

শুক্রবার সকাল থেকেই দরগাহ প্রাঙ্গনের রাস্তাগুলো মুখরিত হতে থাকে মিছিলে মিছিলে। দেশ বিদেশের দলবেঁধে আসা ভক্তদের হাতে ছিলো নানা রঙয়ের গিলাফ; আর মুখে মুখে উচ্চারণ ‘লালে লাল– বাবা শাহজালাল’!

শনিবার ভোর রাতে আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে ওরসের আনুষ্ঠানিকতা।

ভক্তরা জানান, হযরত শাহজালাল (র.) আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশ ও বিশ্ব শান্তির কমনা করছেন তারা।

জানা যায়, ১৩০৩ সালে ৩৬০ জন আউলিয়া নিয়ে ইয়েমেন থেকে সিলেট আসেন শাহজালাল। যে তারিখে তিনি সিলেট বিজয় ছয় বছর পর ঠিক সেই একই তারিখে মৃত্যু হয় এই ধর্ম প্রচারকের। সেই থেকে তার ওফাত (মৃত্যু) দিবস ও সিলেট বিজয়দিবসটিতে ভক্তরা আয়োজন করেন ওরস মোবারকের।
ধর্মের প্রাতিষ্ঠানিকতার বাইরে এই ওরসে দুই দিন ব্যাপী জিকির-গজলে মেতে উঠেন বাউল ফকিরে। জীবিত অবস্থায় বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমও নিয়মিত শাহজালাল মাজারের ওরসে এসে জিকিরে শরীক হতেন।

সুফি ও বৈষ্ণব ধারার দুই প্রবাদ পুরুষ শাহজালাল ও শ্রীচৈতন্য। এদের মধ্যে প্রথমজন সুফিবাদের বাণী নিয়ে ইয়েমেন থেকে সিলেট আসেন। আর ২য় জন বৈষ্ণববাধের বাণী নিয়ে সিলেট ছেড়ে চলে যান নদীয়ায়। ধর্মের প্রেমময় দুই ধারা সেসময় সহজেই আকৃষ্ট করে সাধারণ মানুষদের। আজও শাহজালাল মাজারে ভক্তদের উপচেপড়া ভীড় তা জানান দিয়ে যায়।

ওরস উপলক্ষ্যে কেবল মাজার নয় পুরো নগরীই সেজেছে সাজ সাজ রবে। ভক্ত-আশেকানদের স্বাগত জানিয়ে নগরীর বিভিন্ন মোড়ে তোরণ ও ফেস্টুন তৈরি করা হয়েছে।

আয়োজক কমিটির সেক্রেটারী সামুন মাহমুদ খাঁন জানান, নির্বিঘ্নে ওরসের আনুষ্ঠানিকতা পালনে পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবকসহ সবরকম ব্যবস্থায়ই গ্রহণ করা হয়েছে। আজ গভীর রাত পর্যন্ত জিকির ও এবাদত-বন্দেগিতে সময় কাটাবেন ভক্তরা। রাত সোয়া ৩টায় আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে দু’দিনব্যাপী ওরস শেষ হবে।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে গিলাফ প্রদান করেন জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে গিলাফ প্রদান করেন মহানগর বিএনপি নেতৃবৃন্দ।

এছাড়া আগত ভক্তদের জন্য প্রতিবেলা শিরনির ব্যবস্থা করেছেন আয়োজক কর্তৃপক্ষ। গভীর রাতে আখেরী মোনাজাতেরর পর শিরনি বিতরণের মাধ্যমে শনিবার ভোরে শেষ হবে ওরসের আনুষ্ঠানিকতা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত