নিউজ ডেস্ক

৩০ ডিসেম্বর, ২০১৪ ২০:৪৬

কেমন হবে দেশের প্রথম ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় ?

অর্ধ শতাধিক একর জমির ওপর গড়ে উঠতে যাচ্ছে দেশের প্রথম ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়। গাজীপুরের কালিয়াকৈরের হাইটেক পার্কে এ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হবে।

অর্ধ শতাধিক একর জমির ওপর গড়ে উঠতে যাচ্ছে দেশের প্রথম ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়। গাজীপুরের কালিয়াকৈরের হাইটেক পার্কে এ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হবে।

মূলত হাইটেক পার্কের মানবসম্পদ নেওয়া হবে দেশের প্রথম ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের 'অাউটপুট হবে হাইটেক পার্কের ইনপুট'। হাইটেক পার্ককে সাপোর্ট দিতেই এই বিশ্ববিদ্যালয়।

অর্থাৎ ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করলেই চাকরি হেঁটে হেঁটে চলে অাসবে চাকরি প্রার্থীর কাছে। কর্মক্ষেত্রও প্রস্তুত। শিক্ষার্থীর চিরচেনা ক্যাম্পাস 'হাইটেক পার্ক'। এমন একটি স্বপ্ন নিয়েই গড়ে উঠছে দেশের প্রথম ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়।

৩৪২ ( বেড়ে ৩৭২ কোটিও হতে পারে) কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি নির্মাণ করা হবে বলে জানা ‌‌‌গেছে। ২ তলা ভবন, ছাত্রাবাস, আবাসিক ভবনসহ বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরি করা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য। এ ছাড়াও হাইটেক পার্কের বিদ্যমান সুযোগ সুবিধাও (যেমন উচ্চগতির ইন্টারনেট, নিরবছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, রাজধানীর সঙ্গে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন করা) শিক্ষার্থীরা উপভোগ করতে পারবেন।

শিক্ষামন্ত্রণালয় ও অাইসিটি বিভাগের যৌথ অংশগ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচালিত হবে। অাইসিটি বিভাগ সিন্ডিকেশন এবং পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শিক্ষামন্ত্রণালয় ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় আইনের খসড়া সংসদে উত্থাপন করবে। খসড়াটি অাইনে পরিণত হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুরু হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা, ব্যবস্থাপনাসহ সব কাজ হবে প্রযুক্তি নির্ভর এই বিশ্ববিদ্যালয় হবে মাল্টিডিসিপ্লিনারী ও গবেষণাভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ে হাইটেক ইঞ্জিনিয়ারিংকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

অাই‌‌‌সটি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট), চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এবং রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) এর পরে দেশের ষষ্ঠ তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা পাবে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অাইটি এবং অাইটিইএস (অাইটি অ্যান্ড অাইটি এনাবল্ড সার্ভিসেস) উপর পড়াশোনা করা যাবে। বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি, ডিজিটাল টেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি, ডিজিটাল ম্যানেজমেন্ট, ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট, অ্যাডভান্সড টেকনোলজি বিষয়েও শিক্ষা দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি থাকবে উচ্চতর বিষয় নিয়ে গবেষণার সুযোগ।

শিক্ষার্থীরা কোনও কারণে ক্লাসে উপস্থিত হতে না পারলে (যৌক্তিক কারণে) স্কাইপের মাধ্যমে সরাসরি ঘরে বসে বা দেশ-বিদেশের যে কোনও জায়গা থেকে ক্লাসে অংশ নিতে পারবেন। এছাড়াও বিশ্বের নামাজাদা সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও অনলাইনের মাধ্যমে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ে করানো হবে বলে জ‌‌‌ানা গেছে। ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ক্রেডিট ট্রান্সফারেরও ব্যবস্থা থাকবে।

পরিপূর্ণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা পাওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবেন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে। বিদেশি শিক্ষার্থীদেরও একই পদ্ধতিতে ভর্তি হতে হবে। তবে বিদেশি শিক্ষার্থীদের অাকৃষ্ট করতে ভবিষ্যতে কোটা পদ্ধতির বিষয়ে চিন্তাভাবনা করতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানকে যে কৌশল এবং পদ্ধতিতে অপসারণ করা যায় ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে একই পদ্ধতিতে অপসারণ করা যাবে না। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সর্বনিম্ন পদ হবে পিএইচডি অথবা সমমান ডিগ্রিধারী সহকারী অধ্যাপক।

পাঁচ সদস্যের একটি সার্চ কমিটি তিনজন শিক্ষাবিদকে নিয়ে 'উপাচার্য' প্যানেল করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব পাঠাবেন। ওই প্যানেল থেকে একজনকে চার বছরের জন্য উপাচার্য নিয়োগ করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অাচার্য রাষ্ট্রপতি।

ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (অাইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ অাহমেদ পলক বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। সেই দাবি এখন পূরণ হওয়ার পথে।

তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় চলতি বছরের মে মাসে হাইটেক পার্ক পরিদর্শনে গিয়ে 'নিড বেসিসে' ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার পরামর্শ দেন।

এদিকে বিশিষ্ট তথ্যপ্রযুক্তিবিদ এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সাবেক সভাপতি মোস্তাফা জব্বার জানান, অবশেষে আরও একটি স্বপ্ন পূরণের দিকে যাচ্ছে। মন্ত্রিসভা ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি আইনের খসড়া অনুমোদন করেছে।

তিনি বলেন, আমার এই প্রস্তাব ও ধারণাটি ২০০৮ সালের। কোরিয়া ও বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনার পর ২০০৯ সালের ২৭ আগস্ট বিসিএস ও বিজ্ঞান এবং তথ‌্য, যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় গাজীপুরে এমন একটি বিশ্ববিদ‌্যালয় স্থাপনের জন‌্য সমঝোতা স্মারক সই করে।

আমি বিসিএস'র সভাপতি হিসেবে ও নিয়াজ সাহেব মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সই করেছিলেন। কিন্তু আমরা সেই কাজটি আইনের অভাবে সম্পন্ন করতে পারিনি। এখন সরকার সেটি বাস্তবায়ন করছে। আশা করি যেমনটা স্বপ্ন দেখেছিলাম তেমনটিই হবে। অভিনন্দন ডিজিটাল বাংলাদেশ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত