সিলেটটুডে অনলাইন ডেস্ক

২৯ মে, ২০১৭ ১৭:৩২

অনলাইনে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে হয়রানি বাড়ছে

মেয়েটি তাঁর বাড়ির দরজায় কোনো আগন্তুকের কথা শুনলেই আঁতকে উঠতেন। রাতের বেলা বিভিন্ন আগন্তুক তাঁর বাড়ির দরজায় কড়া নাড়তেন।

তাঁর ধারণা, সাবেক প্রেমিক অনলাইনে তাঁর নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে এসব আগন্তুককে রাতের বেলা আসার জন্য বাড়ির ঠিকানা দিয়েছে। এতে পুরো এক সপ্তাহ ধরে তাঁকে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। এরপর বাধ্য হয়ে পুলিশের শরণাপন্ন হয়েছেন তিনি। ঘটনাটি কানাডার এডমন্টনের। মেয়েটির অভিযোগ, চার দিনে ৩০ জনের বেশি আগন্তুক তাঁর খোঁজে বাড়ি পর্যন্ত চলে এসেছে। ঘটনাটি পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

ওই নারীর অভিযোগ, খুব বিপদ ঘটে যেতে পারত। কারণ, তাঁর সঙ্গে আট বছরের বাচ্চাও থাকে। কিন্তু তাঁর নামে যে অ্যাকাউন্টগুলো খোলা হয়েছিল, সব কটিই ভুয়া। সাবেক প্রেমিক ‘প্রতিশোধ’ নিতে বা হয়রানি করতে ওই অ্যাকাউন্টগুলো খুলেছে। আগন্তুকদের অত্যাচারে শেষ পর্যন্ত বাড়ি ছাড়তে হয়েছে তাঁকে। সাবেক বন্ধুকে দায়ী করে অভিযোগ দাখিল করায় তিনি ই-মেইলে হুমকি পেয়েছিলেন বলেও জানান।

মেয়েদের নামে ফেসবুকসহ ডেটিং সাইটগুলোতে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে হয়রানির ঘটনা বাড়ছে। এ ধরনের ঘটনাগুলোকে বিশেষজ্ঞরা বলেন ‘সাইবার রিভেঞ্জ’। অনলাইনে এ ধরনের হয়রানি ঘটলে অনেকেই উদ্বেগে পড়ে যান এবং করণীয় ঠিক করতে পারেন না। নানা চেষ্টা করে অনলাইন সাইটগুলোয় প্রোফাইল বন্ধ করা যায় না। প্রতিষ্ঠানগুলোতে ই-মেইল করলেও সরাসরি সাড়া পাওয়া যায় না। তাই এ ধরনের ঘটনার শিকার হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

গবেষকেরা বলেন, নারী ও কিশোরীরা এ ধরনের সাইবার সহিংসতার প্রাথমিক লক্ষ্য হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টারের ২০১৪ সালের সমীক্ষায় বলা হয়, অনলাইন সহিংসতা লিঙ্গ ও বয়সভেদে বেশি দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রে ২ হাজার ৮৪৯ জনকে নিয়ে চালানো সমীক্ষায় দেখা যায়, ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী ২৬ শতাংশ নারী অনলাইনে হয়রানির শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া ২৫ শতাংশ নারী অনলাইনে যৌন নিপীড়নের কথা বলেছেন। পুরুষের ক্ষেত্রে ৭ শতাংশ তরুণ অনলাইন নিপীড়ন ও ১৩ শতাংশ অনলাইন যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার কথা বলেন।

কানাডার সাইবার অপরাধ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সার্জেন্ট ফিল হকিন্সের মতে, অনলাইনে হয়রানি বেড়ে যাচ্ছে। এটা এখন প্রায়ই উৎপীড়ন হিসেবে, আবারও কখনো সম্পর্ক খারাপ হয়ে গেলে দেখা যাচ্ছে। ইন্টারনেট মানুষের হাতে এখন নিপীড়নের এ প্রোগ্রাম তুলে দিয়েছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ইন্টারনেটে এ ধরনের অপকর্ম করে নিজের পরিচয় লুকিয়ে রাখার সুযোগ নেই। এ ধরনের অপকর্ম করে অনেকেই ভাবেন, তাঁদের পরিচয় কেউ জানবে না, তাঁরা পার পেয়ে যাবেন। কিন্তু তাঁদের সে সুযোগ নেই। কারণ, ইন্টারনেটে লুকানোর কোনো জায়গা নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহজেই অপরাধীকে খুঁজে বের করতে সক্ষম। কারণ, সাইবার রিভেঞ্জের ক্ষেত্রে ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট তো থেকেই যায়। তবে সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্ক হতে হবে। তথ্যসূত্র: সিবিসি নিউজ

আপনার মন্তব্য

আলোচিত