সিলেটটুডে ডেস্ক

১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ১৯:২৫

থ্রিজি সেবার মূল্য বাড়াচ্ছে অপারেটররা

গ্রাহক স্বার্থ রক্ষায় টুজি ও থ্রিজি প্রযুক্তির সেবার আলাদা মূল্য নির্ধারণে সেলফোন অপারেটরদের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ নির্দেশের পর থ্রিজি সেবার মূল্য বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে অপারেটররা। এতে বাড়ছে গ্রাহক অসন্তোষ।

সম্প্রতি সেলফোন অপারেটরদের দেয়া বিটিআরসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, টুজি সেবার প্যাকেজের মূল্য অবশ্যই থ্রিজি সেবার চেয়ে কম হতে হবে। আর গ্রাহক থ্রিজি প্যাকেজ কিনে টুজি নেটওয়ার্কে প্রবেশ করলে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ডাটা ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হবে। এছাড়া প্যাকেজে উল্লেখ করা গতি নিরবচ্ছিন্ন রাখতে হবে অপারেটরদের। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে বিটিআরসি ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দিলেও তাতে অপারগতা জানিয়ে এরই মধ্যে চিঠি দিয়েছে অপারেটররা।

এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবির বলেন, প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে টুজি-থ্রিজির জন্য আলাদা বিলিংয়ের বিষয়টি অত্যন্ত জটিল। এক্ষেত্রে বিশ্বের অন্য দেশগুলোয় যে ধরনের ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে, তা অনুসরণ করা যেতে পারে।

তিনি আরো বলেন, অপারেটররা বিভিন্ন দিক বিবেচনায় নিয়েই থ্রিজি লাইসেন্স নিয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থেকে এ খাতে বিনিয়োগ করছে তারা। বাণিজ্যিকভাবে চালু করা এ সেবা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজও চলছে।

টুজি ও থ্রিজি প্রযুক্তির সেবার মূল পার্থক্য ডাটাভিত্তিক সেবার গতিতে। টুজিতে সর্বোচ্চ ১ মেগাবিটস পার সেকেন্ড (এমবিপিএস) গতিতে ডাটা স্থানান্তরের সুযোগ থাকলেও বাস্তবে পাওয়া যায় ৫১২ কিলোবিটস পার সেকেন্ড (কেবিপিএস)। অন্যদিকে থ্রিজি প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এ গতি তাত্ত্বিকভাবে ৫৬ এমবিপিএস ও প্রায়োগিক ক্ষেত্রে ২৮ এমবিপিএস। দেশে সেলফোন অপারেটরদের থ্রিজি প্রযুক্তির আওতায় ১৪ দশমিক ৪ এমবিপিএস গতির সেবাদানের সক্ষমতা রয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত নিলামের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে থ্রিজির তরঙ্গ বরাদ্দ ও লাইসেন্স পায় চার অপারেটর গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি ও এয়ারটেল। একই বছরের ৭ অক্টোবর গ্রামীণফোন, ২১ অক্টোবর বাংলালিংক, ৩০ অক্টোবর রবি ও ৭ নভেম্বর এয়ারটেল বাণিজ্যিকভাবে এ সেবা চালু করে। আর রাষ্ট্রায়ত্ত সেলফোন অপারেটর টেলিটক ২০১২ সালের অক্টোবরে পরীক্ষামূলকভাবে এ সেবা চালুর অনুমোদন পায়।

বাণিজ্যিকভাবে থ্রিজি সেবা চালুর সময়ই ডাটাভিত্তিক সেবার গতি নিশ্চিত করতে সব অপারেটরকেই নিজস্ব ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে গতি পরিমাপের বিষয়ে ব্যবস্থা রাখার নির্দেশনা দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে পরবর্তীতে এ অবস্থান থেকে সরে আসে সংস্থাটি। শ্রীলংকাসহ প্রতিবেশী অনেক দেশেই এ ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে।

খাতসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গ্রাহকরা মূলত গতি ও দামের বিষয়টিতে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। তবে সেলফোন অপারেটরদের নির্দেশনা দেয়া হলেও গতি পরিমাপের কোনো ব্যবস্থা রাখেনি তারা। এমনকি ডাটাভিত্তিক প্যাকেজগুলোর ক্ষেত্রে গতির বিষয়টিও উল্লেখ করছে না অপারেটররা।

বাণিজ্যিকভাবে থ্রিজি সেবা চালুর পর ডাটাভিত্তিক সেবার দাম অনেকটাই কমিয়ে আনে অপারেটররা। প্রচারণায় টুজির দামে থ্রিজি দেয়া হচ্ছে বলেও উল্লেখ করে তারা। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনার পর সেলফোন অপারেটররা থ্রিজির বিশেষ যেসব অফার রয়েছে, তার অনেকগুলোরই দাম বাড়িয়েছে। টুজি-থ্রিজির দাম আলাদা করার ক্ষেত্রে থ্রিজির দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে অপারেটরদের সূত্রে জানা গেছে।

বিটিআরসির সচিব মো. সরওয়ার আলম জানান, প্রচারণায় উল্লেখ করা নির্দিষ্ট গতিতেই গ্রাহককে ইন্টারনেট সেবা দিতে হবে। এটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব অপারেটরদেরই। আর নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে মানসম্মত সেবা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে বিটিআরসি। এরই মধ্যে এ বিষয়ে অপারেটরদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

থ্রিজি সেবা চালুর সময় দুই ধরনের গতিতে বিভিন্ন প্যাকেজ চালু করে গ্রামীণফোন। স্ট্যান্ডার্ড প্যাকের আওতায় ২ জিবি ডাটা ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে ৫১২ কিলোবিটস পার সেকেন্ড (কেবিপিএস) ও ১ মেগাবিটস পার সেকেন্ড (এমবিপিএস) গতির জন্য যথাক্রমে ৪০০ ও ৭০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে ২জিবির ডাটা প্যাক ৩৫০ টাকায় দিচ্ছে অপারেটরটি।

শ্রীলংকাভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান লার্নএশিয়ার সিনিয়র পলিসি ফেলো আবু সাইদ খান বলেন, মূলত নেটওয়ার্ক কভারেজের বিষয়টি এখানে গুরুত্বপূর্ণ। অপারেটররা নিজেদের প্রয়োজনেই থ্রিজি সেবার কভারেজ সারা দেশের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে চাইবে। এতে ব্যবসায়িকভাবে তারাই লাভবান হবে। এখানে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা হতে পারে মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিতে নিয়মিত পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা গড়ে তোলা। থ্রিজি-টুজির বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা যে নির্দেশনা দিয়েছে, তাতে সংস্থাটি প্রযুক্তি বিচ্ছিন্ন বলে মনে হতে পারে।

দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সিংহভাগই মূলত সেলফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। বিটিআরসির তথ্যানুযায়ী, গত জুলাই শেষে ইন্টারনেট সেবার গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৭১ লাখ। এর মধ্যে ছয় সেলফোন অপারেটরের ইন্টারনেট সংযোগ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৯২ লাখ ৪১ হাজার। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) এবং পাবলিক সুইচড টেলিফোন নেটওয়ার্ক (পিএসটিএন) অপারেটরদের ইন্টারনেট সেবার আওতায় ১২ লাখ ৯৩ হাজার সংযোগ রয়েছে। এছাড়া ওয়াইম্যাক্স অপারেটরদের নেটওয়ার্কে রয়েছে ১ লাখ ৭৪ হাজার ইন্টারনেট সংযোগ। ২০১৩ সালের নভেম্বরে দেশে থ্রিজি গ্রাহক ছিল প্রায় ৭ লাখ ৬৯ হাজার। পরের বছরের জুলাইয়ে এটি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৪৮ লাখ ৪৫ হাজারে। বর্তমানে সেলফোন অপারেটরদের থ্রিজি সেবার গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ।

টেলিযোগাযোগ খাতের আন্তর্জাতিক সংগঠন জিএসএমএর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০২০ সাল নাগাদ থ্রিজির গ্রাহক সংখ্যা টুজিকে অতিক্রম করবে। তবে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় এ দেশে ডাটাভিত্তিক সেবার প্রবৃদ্ধি তুলনামূলক ধীরগতির বলে মনে করছে সংগঠনটি।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের ছয় সেলফোন অপারেটরের টুজি নেটওয়ার্কে এরই মধ্যে ১২ কোটিরও বেশি গ্রাহক যুক্ত হয়েছেন। ভয়েস কল হারের ব্যাপক হ্রাস ও হ্যান্ডসেটের দাম কমে আসার কারণেও অপারেটররা টুজি সেবা ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে সফলতা পেয়েছে। লাইসেন্স নিতে ব্যয়ের পাশাপাশি থ্রিজি নেটওয়ার্ক উন্নয়নেও এরই মধ্যে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। আর থ্রিজিতে বিনিয়োগ করা অর্থ উঠে আসতে আগামী এক দশকেরও বেশি সময় লাগবে বলে মনে করছে অপারেটররা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত