সিলেটটুডে ডেস্ক

০১ মার্চ, ২০১৬ ০১:০৮

দেবতাদের বিরুদ্ধে যত মামলা

দেবতা, ঈশ্বর কিংবা অন্য যেকোনো অতিপ্রাকৃত সত্ত্বা- এদের সবাইকে একদিকে যেমন ভয় করে মানুষ তেমনি আবার সম্মানও করে। সবাই চায় তাদের আস্থাভাজন হয়ে থাকতে। তবে কখনো কখনো ঘটে এর ব্যতিক্রম ঘটনা। ঈশ্বরের বিরুদ্ধে মামলাও দিয়েছেন অনেকে।

কয়েক বছর আগে মার্কিন এক সিনেটর যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে একটি মামলা ঠুকে দিয়েছিলেন। মৃত্যু, ধ্বংস এবং সন্ত্রাসের মতো ‘ক্ষতিকর’ বিভিন্ন বিষয় থেকে পরিত্রাণ পেতে ঈশ্বরের প্রতি আদালতের নিদের্শনা জারি চেয়ে মামলাটি করেছিলেন তিনি। তবে মামলাটির কাগজপত্র সঠিকভাবে আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি মর্মে তা খারিজ করে দেন বিচারকরা। মামলাটিতে সমস্যা ছিল, কাগজপত্রে ঈশ্বরের সঠিক কোনো ঠিকানা দেয়া হয়নি।

কয়েকদিন আগে ভারতেও ঘটেছে একই রকমের একটি ঘটনা। সীতার প্রতি রামের ’অন্যায় এবং অসম্মানজনক’ আচরণের কারণে রামের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে ভারতীয় আইনজীবী চন্দন কুমার সিং। তবে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভারতে কোনো দেব-দেবীর বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার ব্যাপারটি একটু ভিন্ন।

ভারতে সাধারণত হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে দেব দেবীদের স্থান অতি সম্মানের। ভক্তরা তাদের সাথে বিশেষ সম্পর্ক রেখে চলে। তবে এটাও মনে রাখা দরকার, দেশটিতে দেব দেবীদের আইনগত সত্ত্বা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অর্থাৎ চাইলেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা যায়। আর এ কারণে ভারতে বিভিন্ন সময়ে দেবতাদের বিরুদ্ধে হয়েছে অনেক মামলা। এসব মামলার কোনো কোনোটিতে আবার তাদের আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমনও জারি করেছে বিচারকরা।

চলতি মাসের শুরুর দিকে ভারতের বিহার রাজ্যের একটি আদালত দেবতা হনুমানের বিরুদ্ধে একটি সমন জারি করেছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, সে সরকারি জমি দখল করেছে। আসলে ঘটনাটি ছিল রাস্তার পাশে হনুমান দেবতার একটি মন্দিরকে কেন্দ্র করে। মন্দিরটির কারণে সেখানে প্রচুর যানজট সৃষ্টি হওয়ায় এর বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করে সরকারের যোগাযোগ বিভাগ। আর এতেই হনুমান দেবতাকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। সমন জারির নির্দেশনাপত্রটি হনুমান দেবতার গলার সাথে আটকে দেয়া হয়।

তবে পরে বিষয়টি পরিষ্কার করেছিলেন সরকারি কর্মকর্তারা। তারা জানান আসলে এটি ছিল একটি করণিক ভুল। সমনের কাগজ পৌঁছানোর কথা ছিল মন্দির কর্তৃপক্ষের কাছে, দেবতার কাছে নয়। পরে অবশ্য তারা হনুমানের গলা থেকে কাগজটি সরিয়ে নেয়।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সীতার প্রতি রামের ’অন্যায় এবং অসম্মানজনক’ আচরণের কারণে রামের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছিলেন ভারতীয় আইনজীবী চন্দন কুমার সিং। রামকে তিনি নারীবিদ্বেষী বলে অভিহিত করেন। বিবিসিকে সিং বলেন, তিনি কাজটি করেছিলেন যুক্তিসঙ্গত কারণেই। তার কাছে মনে হয়েছে ‘রাম সীতার প্রতি অন্যায় এবং অসম্মানজনক আচরণ করেছে’।

বিষয়টি মানুষের অবগত করার জন্যই তিনি বিহার প্রদেশের একটি আদালতে রামের বিরুদ্ধে মামলা করার চেষ্টা করেন। তবে আদালত সিংয়ের যুক্তিকে বাস্তবসম্মত না বলে মামলা প্রত্যাখ্যান করেছে গত সপ্তাহে।

দেবতা রাম হচ্ছেন ২৪ হাজার স্তবকের সমন্বয়ে গঠিত সংস্কৃত মহাকাব্য রামায়ণের নায়ক। তাকে ভারত এবং বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ ভক্তি করে। রামকে নিয়ে সিংয়ের মামলা আদালত বাতিল করে দিলেও, তিনি বিশ্বাস করেন ব্যাপারটা খুবই যুক্তিযুক্ত।

প্রমাণস্বরূপ রামায়ণের উদ্ধৃতি টেনে সিং বলেন, ‘রাবনের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধারের পর রাম সীতাকে নিজের সতীত্বের প্রমাণ দিতে বলেন। কারণ তিনি সীতা মোটেও বিশ্বাস করেন নি। তাছাড়া সীতার প্রতি রামের অন্যান্য ব্যবহারেও দেখা যায়, অসম্মান এবং অশ্রদ্ধার প্রকাশ।’

২০০৭ সালেও একবার সম্পত্তি বিষয়ক একটি দ্বন্দ্ব সমাধানে সহায়তার জন্য রাম ও হনুমানকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করা হয়। সময় মতো হাজির না হওয়ায় ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের আদালত তাদের ‘ব্যক্তিগতভাবে’ কোর্টে হাজির হওয়া জন্য পত্রিকায় একটি প্রজ্ঞাপণও জারি করে। তবে তাতে সাড়া দেননি দেবতারা।

ঘটনাটি ছিল, সাড়ে চার একরের একখণ্ড ভূমি নিয়ে। ওই ভূমির ওপরে ছিল রাম এবং হনুমানের দুটি মন্দির। স্থানীয়দের দাবি ছিল, ওই ভূমি তাদের দুই দেবতার। তবে মন্দির রক্ষক দাবি করছিলেন, ভূমির মালিক তিনি।

২০১০ সালে মুম্বাইয়ের একটি আদালত তাদের রায়ে জানান, দেবতারা শেয়ার বাজারের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে না। শেয়ার ব্যবসার জন্য একটি ধর্মীয় গোষ্ঠি দেবতা গণেশসহ মোট পাঁচ দেবতার নামে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে আদালতের নির্দেশনা চেয়ে রিট করলে তা খারিজ করে দেয় আদালত।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত