ওয়েব ডেস্ক

২৫ মার্চ, ২০১৬ ১২:২৫

ধর্ষণ যুদ্ধাপরাধ

ধর্ষণকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)।

আইসিসি কঙ্গোর স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রধানকে ধর্ষণ লুটতরাজসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে দেয়া একটি রায়ে ধর্ষণকেও যুদ্ধাপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

কঙ্গোর কমান্ডার জিন পিয়েরে বেম্বার বিরুদ্ধে দেয়া এই রায়টি ২০০২ সালে কার্যক্রম শুরু করা আইসিসি’র জন্য একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। তবে নেদারল্যান্ডস এর হেগে অবস্থিত আদালতটিকে ‘আফ্রিকা বিরোধী’ বলে সমালোচনারও শিকার হতে হচ্ছে।

কঙ্গোর মুক্তি আন্দোলনের প্রধান সেনাপতি এবং গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোর সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট বেম্বাকে দোষী সাব্যস্ত করে দেয়া রায়ে অন্যান্য অপরাধ কার্যক্রমের মধ্যে ধর্ষণকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে উল্লেখ করে প্রথমবারের মতো ‘দলনেতার দায়িত্ব’, মানে ধর্ষণ, হত্যা এবং লুন্ঠনসহ অন্যান্য অপরাধে সরাসরি জড়িত না থাকলেও এর অনুমোদন দেয়ার জন্য একজন দলপতিকে অপরাধী সাব্যস্ত করা যাবে বলে উল্লেখ করা হয়।      

২০০২ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যকার উত্তাল সময়ে হাজারো বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করা হয়েছিলো। বেম্বার নেতৃত্বাধীন প্রায় দেড় হাজার সদস্যের শক্তিশালী জঙ্গিবাহিনী সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের (সিএআর) সীমান্তে প্রবেশ করে এই নৃশংস গণহত্যা ঘটায়। এই সংক্রান্ত অপরাধের দণ্ডাদেশ এখনও প্রদান করা হয়নি।

২০০৮ সালে বেলজিয়াম থেকে গ্রেপ্তার করে বেম্বাকে হেগে পাঠানো হয়। পূর্ণাঙ্গ বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১০ সালে।

আফ্রিকান একটি সংগঠনসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের স্বপক্ষে কাজ করা সিংহভাগই এই রায়কে অভিনন্দন জানালেও আফ্রিকান ইউনিয়ন এবং অধিকাংশ আফ্রিকান দেশের সরকার কোন প্রতিক্রিয়া জানানো থেকে বিরত রয়েছে।

এই মহাদেশটি জুড়েই ‘আইসিসি আফ্রিকা বিরুদ্ধ’ বলে অভিযোগের রব উঠেছে জোড়ে শোরে। অভিযোগকারীদের প্রধান যুক্তি, আদালতটিতে এখন পর্যন্ত দোষী সাব্যস্ত হওয়া সকলেই আফ্রিকান।

তবে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিককে (সিএআর) সেই সময় শাসন করা একটি আফ্রিকান সরকারই ২০০৪ সালে বেম্বা এবং তার অধীনদের সংগঠিত অপরাধের বিষয়ে আদালতে উল্লেখ করেছিলো।

বস্তুত আদালতে উপস্থাপন করা প্রথম নয়টি “পরিস্থিতি”র (আদালত যাকে বলছে মামলার গুচ্ছ) সবগুলোই আফ্রিকা সংশ্লিষ্ট। আফ্রিকান সরকারগুলো সম্পর্কিতদের দ্বারা ৬টি, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ দ্বারা দুইটি, কেনিয়ার নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার জন্য জাতিসংঘের সাবেক প্রধান ঘানার নাগরিক কফি আনানের মধ্যস্থতায় অপর মামলাটি উপস্থাপিত হয়।

“স্বভাবজাতভাবেই আইসিসি আফ্রিকান বিরোধী বা পশ্চিমাদের সহায়ক” বলে যে অভিযোগ তা প্রত্যাখ্যান করেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ট্রাইব্যুনাল। এর প্রধান প্রসিকিউটর ফাতৌ বেনসৌদ গাম্বিয়ার এভং এর জ্যেষ্ঠ বিচারিক আইনজীবী জিন জ্যকুইস বাদিবাঙ্গা গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোর নাগরিক। বেম্বাকে দোষী সাব্যস্ত করা বিচারকদের সকলেই নারী,  তারা ব্রাজিল, কেনিয়া বা জাপানের নাগরিক।    

সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকান বংশোদ্ভূত এবং আক্রান্তদের পক্ষে আইনত প্রতিনিধিত্বকারী ম্যারি-এডিথ দৌজিমা লসন বেম্বা এবং তার দলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর স্বপক্ষে জোরালো ব্যাখ্যা দেন।  ৫২০০ জনেরও বেশি আক্রান্ত আদালতের অনুমোদন সাপেক্ষে বিচারের চলাকালীন বেম্বা এবং তার দলের দ্বারা যৌন আক্রমণ বা হত্যা ও অঙ্গহানি, লুটতরাজের সাক্ষ্য দেয়।

অধিকাংশ ধর্ষণ এবং লুটপাট গণহারে জনসম্মুখেই সংগঠিত হয়েছে। কখনোও তা আক্রান্ত ব্যক্তির আত্মীয় স্বজনের সামনেই। সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের (সিএআর) শান্তিপ্রিয় জনগণকে আতঙ্কিত করার জন্যই এই ধরণের নৃশংসতা চালানো হয়েছিলো উল্লেখ করে দৌজিমা লসন বলেন, ‘সেখানকার ঘটনাগুলো দেখায় যে, ধর্ষণগুলোর মতো লুণ্ঠনও ছিলো পদ্ধতিগত এবং তা বহু ধর্ষকের দ্বারা যেকোনো জায়গায়, যে কোন সময় সংগঠিত হয়েছিলো অপমানকর পন্থায়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত