সিলেটটুডে ডেস্ক

০১ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:৩৫

কলকাতায় ফ্লাইওভার ধস : ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বলছে ‘ভগবানের হাত রয়েছে’

বাংলাদেশ-ভারতের লাগোয়া রাজ্য কলকাতার জোড়াসাঁকোতে নির্মাণাধীন বিবেকানন্দ ফ্লাইওভার ধসে বহু মানুষ হতাহত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার (স্থানীয় সময়) এ ঘটনার পর রাত পর্যন্ত কলকাতা পুলিশ ১৬টি লাশ উদ্ধারের খবর জানালেও অন্তত ২২ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে ভারতের গণমাধ্যমে। জনবহুল ওই স্থানে কংক্রিটের ধ্বংসস্তূপের নিচে শতাধিক মানুষ আটকা পড়ে আছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তবে রাত ৯টার দিকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি উদ্ধার অভিযান সমাপ্তের ঘোষণা দিলে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্নের উদ্রেক হয় বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা।

এদিকে, নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার ধসে পড়ার পেছনে ভগবানের হাত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সেতু নির্মাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থার একজন কর্ণধার। আই ভি আর সি এল-‌র অন্যতম কর্ণধার কে পি রাও বলেছেন, এটা ভগবানের হাত ছাড়া আর কিছুই নয়!‌

দুর্ঘটনার পর সাংবাদিকদের কে পি রাও বলেন,  ‘৪৫ শতাংশ কাজ বাকি ছিল। একটা গার্ডার ‘‌মিস’‌ করে, তারপরে দ্বিতীয়টিও পড়ে যায়। এটা ভগবানের হাত ছাড়া আর কিছুই নয়। এমনটা আগে কখনও ঘটেনি। আমরাও বেদনাহত।’

ভারতের বাংলাদেশ লাগোয়া এই রাজ্যে এই দুর্ঘটনায় বাংলাদেশি কারও হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে একটি কন্ট্রোল রুম খুলেছে কলকতার বাংলাদেশ মিশন। সেখানে ফোন (৯১৩৩৪০১২৭৫০০) করে সর্বশেষ তথ্য পাওয়া যাবে।

দুর্ঘটনা তদন্তে রাজ্যের মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠিত হচ্ছে। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিতভাবে একটি মামলা করেছে।

ফ্লাইওভারটি নির্মাণকারী কোম্পানি আইভিআরসিএল সরকারি তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।  

গিরিশ পার্কের কাছে অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ ওই এলাকায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ বিবেকানন্দ ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০০৯ সালে। এরপর কয়েক দফা মেয়াদ বাড়ালেও প্রকল্পের কাজ আর শেষ হয়নি।

আনন্দবাজার লিখেছে, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে গণেশ টকিজের কাছে ফ্লাইওভারের একাংশ ভেঙে নিচে যানবাহনের ওপর পড়ে। নিচে আটকা পড়ে একটি কয়েকটি যাত্রীবোঝাই বাস, কয়েকটি প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন যানবাহন।

কংক্রিটের নিচে চাপা পড়া কোনো একটি গাড়িতে আগুনও ধরে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে সাধারণ মানুষ খালি হাতেই ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়াদের উদ্ধারের চেষ্টা শুরু করে। পরে যোগ দেন ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।  

পূর্ণমল ধানুকা নামের একজনকে উদ্ধৃত করে আনন্দবাজার লিখেছে, “আচমকা যেন বোমা ফাটার আওয়াজ হলো বাইরে। তাড়াতাড়ি বাইরে বেরিয়ে দেখি চারদিক ধোঁয়ায় ভরে গেছে। চোখের সামনে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল ব্রিজের একাংশ। ততোক্ষণে লোকজন দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিয়েছে।”

ঘিঞ্জি এলাকায় গায়ে গায়ে ভবনের ফাঁকে অনেকগুলো সরু গলি ওই এলাকায় মূল সড়কের সঙ্গে মিশেছে।স্বাভাবিকভাবেই রাস্তার দুই পাশে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের দোকান।

ফ্লাইওভারের যে অংশটি ভেঙে পড়েছে, সেই অংশের গার্ডার বুধবার রাতে ঢালাই করা হয়েছিল বলে আনন্দবাজার জানিয়েছে।

আনন্দবাজার লিখেছে, উদ্ধারকাজে সারারাত লাগবে বলে ধারণা করা হলেও রাত সোয়া ৯টার দিকে মুখ্যমন্ত্রী শেষ ঘোষণা করে বলেন, ‘আর তিনটে দেহ ধ্বংসস্তূপের নিচে রয়েছে, এনডিআরএফ সময় নিয়ে সেগুলো উদ্ধার করবে’।

তখন পর্যন্ত ধ্বংসস্তূপের অর্ধেক সরানো বাকি এবং চাপা পড়া মিনিবাসটিও বের করা যায়নি বলে জানিয়েছে কলকাতাভিত্তিক দৈনিকটি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করে এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন; হতাহতদের পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানিয়েছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত