মঙ্গলবার রাতের জঙ্গি হানার পর কেটে গিয়েছে প্রায় তিন দিন। কোকরাঝাড়, শোণিতপুর-সহ হিংসাদীর্ণ এলাকাগুলিতে চলছে আধাসামরিক বাহিনীর টহল, জারি ১৪৪ ধারা। বুধবার রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার পৌঁছলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন তিনি। তবুও যেন আতঙ্ক কাটতেই চাইছে না আসামের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির। এ দিন সকালেও শোণিতপুর থেকে ছ’টি দেহ উদ্ধার হয়েছে। এর ফলে মঙ্গলবার থেকে চলা হিংসায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৭৮। শুধুমাত্র অরুণাচলপ্রদেশ লাগোয়া শোণিতপুরে জেলাতেই মৃত্যু হয়েছে ৪৩ জনের। বুধবার রাতের পর বোরোদের উপর আদিবাসীদের পাল্টা হামলা চলেছে এ দিনও। পুলিশ সূত্রে খবর, কোকরাঝাড়ের গোসাইগাঁওয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে বোরোদের বেশ কয়েকটি বাড়ি।

এ দিন সকালে শোণিতপুরে যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। বর্বরোচিত এই হামলার কড়া নিন্দা করে তিনি জানান, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যেই নীতি গ্রহণ করেছে সরকার। এ ক্ষেত্রেও সেই নীতি প্রয়োগ করা হবে। খুব শীঘ্রই এনডিএফবি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বড়সড় অভিযান শুরু হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে ভূটানের সাহায্য নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন রাজনাথ। ভারত-ভূটান সীমান্তের ঘন জঙ্গলে বোরো জঙ্গিদের বেশ কয়েকটি শিবির আছে। প্রতিবেশী দেশের কাছে সে বিষয়ে তথ্য চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে ভুটানের সঙ্গে যোগাযোগ করছে পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়। এর আগেও দুই দেশ যৌথ অভিযান করে আলফার বিরুদ্ধে বড়সড় সাফল্য পেয়েছিল। বোরো জঙ্গিদের মোকাবিলায় রাজ্যকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাসও দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। রাজনাথের সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রের উপজাতি উন্নয়নমন্ত্রী জুয়েল ওরাম। রাজনাথ ফিরলেও থেকে যান ওরাম। এলাকায় থেকে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে সমগ্র পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রকে রিপোর্ট দেবেন তিনি।

তবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা এলেও ত্রাণ নিয়ে সরকারের ভূমিকায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন বাসিন্দারা। এই মুহূর্তে প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন শিবিরে। কিন্তু সেখানে রাজ্যের তরফ থেকে তেমন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তাঁদের। মঙ্গলবারের হিংসার প্রতিবাদে এ দিন অবরোধ হয় মালদহ-কাটিহার শাখার একলাখি স্টেশনে। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হয়ে প্রায় সাড়ে ছ’ঘণ্টা পরে ওঠে অবরোধ। এর ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ওই শাখার ট্রেন চলাচল।