সিলেটটুডে ডেস্ক

২৪ মে, ২০১৫ ০১:৫৪

সাগরে ভাসমানদের অধিকাংশই বাংলাদেশি!

আন্দামান সাগরে ভাসমানদের অধিকাংশ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা বলে বাংলাদেশ মনে করলেও উল্টো কথা বলছে ইন্দোনেশিয়া। তাদের বক্তব্য, এর অধিকাংশই বাংলাদেশি।

সিউলে এক বৈঠকে ইন্দোনেশিয়ার কর্মকর্তারা অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপকে এ কথা জানিয়েছেন বলে দি অস্ট্রেলিয়ান শনিবার এক প্রতিবেদনে বলেছে।
এর দুই দিন আগেই বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, আন্দামান সাগরে বিভিন্ন নৌকা ও ট্রলারে থাকা অধিকাংশ ব্যক্তিই রোহিঙ্গা। তাদের মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা কম।

বিশপ সিউলে পাওয়া তথ্য তুলে ধরে শনিবার অস্ট্রেলিয়ার সংবাদপত্রটিকে জানান, ইন্দোনেশিয়ার হিসাব অনুযায়ী, সাগরে ভাসমানদের মধ্যে ৩০-৪০ ভাগ রোহিঙ্গা। বাকিরা বাংলাদেশি। ইন্দোনেশীয় কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, অধিকাংশই বাংলাদেশি। তারা অবৈধ শ্রমিক বা আশ্রয়প্রার্থী; শরণার্থী নয়। তারা মালয়েশিয়ায় চাকরির খোঁজে যেতে বা প্রলোভনে পড়ে এখানে এসেছে।

মালয়েশিয়া সীমান্তবর্তী থাইল্যান্ডের জঙ্গলে সম্প্রতি মানব পাচারকারীদের কয়েকটি আস্তানা ও কবরের সন্ধান মিলার পর অবৈধ অভিবাসী ঠেকাতে কড়া পদক্ষেপ নেয় ইন্দোনেশিয়াসহ এই তিনটি দেশ। ফলে অবৈধ অভিবাসীবাহী ট্রলার বা নৌকাগুলো কূলে ভিড়তে পারছিল না। খাদ্য সংকটে পড়ে নৌকায় নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে অনেকের মারা যাওয়ার খবরও আসে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া কিছুটা নমনীয় হয়ে ভাসমান ট্রলারে আটকে পড়াদের উদ্ধার করতে রাজি হয়।

ইন্দোনেশিয়ার কর্মকর্তা হাসান ক্লেইব সিউলে বিশপকে বলেছেন, একটি নৌকার যাত্রীদের উদ্ধার করে তারা ৬০০ জনের মধ্যে ৪০০ জন বাংলাদেশি পেয়েছেন। আন্দামান সাগরে বর্তমানে ৭ হাজারের মতো মানুষ ভাসমান অবস্থায় রয়েছে।

বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, 'যারা জাহাজে আটকা পড়েছে, তারা বাংলা ভাষায় কথা বলে ঠিকই, অনেকে বাংলাদেশি বলছে, তাও ঠিক। আমাদের দেশের ইয়ং ছেলেপেলেরা কাজের জন্য ভাগ্যান্বেষণে যেতে পারে, কিন্তু এই যে মহিলা ও বাচ্চা-বৃদ্ধরা গিয়েছে, তাদের বেশভূষা দেখবেন, তা দেখলে স্পষ্ট হয়, বেশিরভাগই রোহিঙ্গা।'

মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গাদের ৫ লাখের বেশি বাংলাদেশের আশ্রয়ে রয়েছে। এসব রোহিঙ্গা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে বলে বাংলাদেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করতে নারাজ। তাদের ভাষায়, এরা বাংলাদেশি বা বাঙালি। ফলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরেও তাদের পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য মেলে।

অস্ট্রেলিয়ার মন্ত্রী বিশপ এটাও বলেছেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে গিয়ে সেখানকার অধিবাসীদের সঙ্গে মিশে তারপর চাকরির খোঁজে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাতে চাইছে।
সাগরপথে অবৈধ অভিবাসী বা আশ্রয়প্রার্থীদের জায়গা না দেয়ার নীতিতে বরাবরই কঠোর অস্ট্রেলিয়া। তাদের বক্তব্য, এতে মানব পাচারকে উৎসাহিত করা হয়।

গত শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবোট বলেছেন, 'আমি এ বিষয়ে এমন কিছুই বলব না, যাতে কেউ নৌকায় করে অভিবাসনে উৎসাহিত হয়ে ওঠে।'
আসাদুজ্জামান কামাল অবশ্য বলেছেন, আটকে পড়াদের মধ্যে যারা বাংলাদেশি হিসেবে শনাক্ত হবেন, তাদের ফিরিয়ে আনতে সরকার উদ্যোগ নেবে।

এদিকে, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে শুক্রবার যে দুই শতাধিক অভিবাসন প্রত্যাশীকে উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমার। উদ্ধার হওয়ার পর থেকেই নেইপিদো সরকার দাবি করছে, তারা সবাই বাংলাদেশি।

মিয়ানমার সরকারের কর্মকর্তারা শনিবার তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো সংক্রান্ত খবরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে চ্যানেল নিউজ এশিয়া নামের একটি ওয়েবসাইট এ খবর দিয়েছে।

দেশটির কর্মকর্তারা বলেছেন, উদ্ধার হওয়া ২০৮ জনের সবাই বাংলাদেশ থেকে এসেছে; এবং শিগগিরই তাদের ফেরত পাঠানো হবে। তবে সেসব অভিবাসী আসলে কোন দেশের, তা নিশ্চিত করতে পারেনি এএফপি।

মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট অফিসের পরিচালক জো হতেইর বরাত দিয়ে এএফপি শনিবার বলেছে, 'আমরা তাদের মানবিক সহায়তা দিয়েছি। এরপর আমরা তাদের সংশ্লিষ্ট দেশে পাঠিয়ে দেব।'

এ ব্যাপারে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে তারা কথা বলেছেন বলে দাবি করেছেন হতেই।

মুনের আহ্বান
জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমুদ্রে আটকে পড়া অভিবাসীদের জীবন রক্ষার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। তিনি শনিবার ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে সফরে এসে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
বান কি মুন বলেন, 'যখন লোকজন সমুদ্রে ভাসছে, তখন তাদের খুঁজে বের করে উদ্ধার করা এবং জীবন রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা দেয়াই হবে বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।'
নির্যাতন এবং দারিদ্র্যের কারণে এই অঞ্চলের মানুষ নৌকায় সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।

জাতিসংঘের মহাসচিব আশা করছেন, চলতি মাসের শেষদিকে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় অভিবাসী সংকট বিষয়ক সম্মেলনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো সমুদ্রে পাড়ি দেয়ার মূল কারণগুলো খুঁজে বের করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি বলেন, সমুদ্রে পাড়ি দেয়া নিয়ে তিনি ইতোমধ্যে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও মিয়ানমারের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আলোচনায় তিনি লোকজন কেন পালাচ্ছে, তার কারণ খুঁজতে সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন।

গত কয়েক সপ্তাহে সমুদ্রপথে তিন হাজারের বেশি অভিবাসী ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় আশ্রয় নেয়। এখনো অনেকে সমুদ্রে আটকা পড়া আছে বলে জানিয়েছেন উদ্ধার হওয়া অভিবাসীরা।

কিন্তু এমন পরিস্থিতিতেও অভিবাসীদের উপকূলে আশ্রয় নেয়ার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া। কিন্তু জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংস্থা এবং পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের চাপে পড়ে ৭০০০ অভিবাসীকে উদ্ধারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত