সিলেটটুডে ডেস্ক

১২ নভেম্বর, ২০১৭ ০২:০০

বাচ্চারা বড় হয়ে জিহাদে যোগ দিবে এই একটি কারণেই আমি সন্তান নিয়েছি: জয়া

ছোটবেলায় তাঁর নাম ছিলো জয়া। ব্রিটিশ-বাংলাদেশি মা-বাবার পাঁচ সন্তানের একজন এই মেয়েটির বেড়ে উঠা লন্ডনের শহরতলী হ্যারো-এ। পশ্চিমের সংস্কৃতির হাত ধরেই তিনি শৈশব থেকে আসেন কৈশোরে। এ-লেভেলে পড়ার সময় হাতে নেন ক্যানাবিস। কিন্তু, নিমিষেই পাল্টে যায় সব। নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ারে হামলার পর শুরু হয় এক ভিন্ন পরিস্থিতি।

জয়ার আরেক নাম তানিয়া জর্জিলাস। এখন তাঁর বড় পরিচয় তিনি শীর্ষ মার্কিন জঙ্গি জন জর্জিলাসের সাবেক স্ত্রী। জনের সঙ্গে জয়ার বিয়ে হয় ২০০৩ সালে। টেক্সাসে বসবাসকারী জনৈক সাবেক মার্কিন সেনা চিকিৎসকের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান ও একমাত্র ছেলে জন। নাইন ইলেভেনের কিছুদিন পরেই ধর্মান্তরিত হন তিনি। জঙ্গি ওয়েবসাইটগুলোকে তথ্য-প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে জন জেল খেটেছিলেন আমেরিকায়।

২০১১ সালে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে এই জঙ্গি তাঁর স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে টেক্সাস ছেড়ে চলে আসেন কায়রোয়। সেখানে থেকে এই দম্পতি প্রস্তুতি নেন সিরিয়ায় যাওয়ার। দুবছর পর তাঁরা আসেন সিরিয়ায় এবং ঘর বাঁধেন আজাজ শহরের এক পরিত্যক্ত বাড়িতে।

বর্তমানে সিরিয়ায় অবস্থানকারী জন আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের কাছে পরিচিত ইয়াহিয়া আল-বাহরুমি নামে। জন সিরিয়ায় থেকে গেলেও সেখানকার গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়াতে পারেননি জয়া বা তানিয়া। খাবার ও পানীয় জলের অভাবে কয়েকদিনের মধ্যেই সন্তানদের সঙ্গে তিনিও অসুস্থ হয়ে পড়েন।

এমন অবস্থায় জয়া তাঁর স্বামীকে রাজি করান তাদেরকে তুরস্কে পাঠিয়ে দেওয়া ব্যাপারে। এরপর, কয়েকশ ডলার সঙ্গে দিয়ে জন তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের তুলে দেন মানবপাচারকারীদের হাতে।

সিরিয়া থেকে মুক্তি পেয়ে জয়া আসেন তুরস্কে, সেখান থেকে সোজা টেক্সাস।

বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন দ্য আটলান্টিক-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চার সন্তানের জননী জয়া বলেন, ইচ্ছে ছিলো তাঁদের সাতটি সন্তান থাকবে। বড় হয়ে তারা হবে আত্মঘাতী যোদ্ধা অথবা বিজয়ী সৈনিক। আইএসের হয়ে একদিন তারা বিশ্ব জয় করবে।

“স্বপ্ন ছিলো আমাদের নিজেদের জমি থাকবে। সেখানে আমাদের ঘর-সংসার হবে। বাচ্চারা আত্মঘাতী বা যোদ্ধা হয়ে জিহাদে যোগ দিবে,” জয়ার ভাষায়, “আমি এই একটি মাত্র কারণেই সন্তান নিয়েছি। যেন তারা মুসলমান হয়ে বা মুজাহিদ হয়ে সৃষ্টিকর্তার সেবা করতে পারে।”

জঙ্গিদের ডেরায় যাওয়ার পেছনের কারণ হিসেবে জয়া জানান, তিনি হ্যারোতে বেড়ে ওঠার সময় বর্ণবাদের চরম শিকার হয়েছিলেন যা তাঁকে সন্ত্রাসের পথে নিয়ে যায়। তাঁর মতে, “আমি এর প্রতিশোধ নেওয়ার পথ খুঁজেছিলাম। যাতে আমি আমার মর্যাদা আবার ফিরে পেতে পারি।”

হ্যারো-তে এ-লেভেলে পড়ার সময় সেখানকার উগ্রপন্থি আলজেরীয় শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে প্রভাবান্বিত হন জয়া। প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের মেলামেশাকে অপছন্দ করতে থাকেন তিনি। এরপর, তিনি শুরু করেন বোরখা পড়া। জয়া বলেন, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ার হামলার ঘটনাটি তাঁর জীবনের ‘টার্নিং পয়েন্ট’।

সেদিনের স্মৃতি স্মরণ করে জয়া আরো বলেন, “টাওয়ারটি ধসে যেতে দেখলাম। পরদিন স্কুলে গিয়ে এক বন্ধুকে বললাম, ‘দেখেছো কী ভয়ংকর ব্যাপার?’ বন্ধুটি উত্তরে বললেন, ‘তাই না কি?’ আসলে, তখন থেকেই আমি জেহাদের পথে হাঁটতে শুরু করি।”

তবে টেক্সাসে ফিরে এসে জয়া তালাক দেন জনকে। সন্তানদের নিয়ে এখন তিনি সেখানেই থাকেন জনের মা-বাবার সঙ্গে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত