ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

০৫ জুন, ২০১৫ ০২:৩৫

অ্যামাজনে বন উজাড়: বাড়ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা

জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটারস জার্নালে প্রকাশিত এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব জিওসায়েন্সের অধ্যাপক জ্যাঁ ফ্র্যাঁ এক্সব্রায়াত’র গবেষণা জানানো হয়েছে- মানবসৃষ্ট কারণে প্রতি বছর বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে ১০ লাখ ভাগের ১ দশমিক ৭ থেকে ১ দশমিক ৯ ভাগ। এ বাড়তি কার্বন ডাই-অক্সাইডের ১ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ছে অ্যামাজন বন ধ্বংসের কারণে।

গবেষণায় ১৯৬০-এর পর থেকে এ বন নিধন-সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত নিয়ে কাজ করা হয়েছে। খবর সূত্র: মঙ্গাবে ডটকম।

মানবসৃষ্ট কারণে অ্যামাজন রেইন ফরেস্টের গাছপালা কমে নষ্ট হচ্ছে এ অঞ্চলের জীবাশ্মবৈচিত্র্য। তৃণভূমি, সয়াক্ষেত, বসতভিটা এবং বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করতে গিয়ে চলছে বৃক্ষনিধন। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় নির্ণীত হয়েছে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে এ বন ধ্বংসের ভূমিকা। 

গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইড বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় কারণ হলো জীবাশ্মজ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি। এ গবেষণার মাধ্যমে মানবসভ্যতার ইতিহাসে এ জঙ্গলের ভূমিকার একটা ছবি তুলে ধরতে পেরেছেন তারা। একই সঙ্গে সামনের দিনগুলোয় বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে এ বন ধ্বংসের ভূমিকাও পরিষ্কার করতে পেরেছেন তারা।

গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, অ্যামাজনে বৃক্ষনিধন না ঘটলে বর্তমানের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি পরিমাণ কার্বন জমা করে রাখতে পারত এ বন। অ্যামাজনের ভূমির উপরিভাগের জীববৈচিত্র্যের মধ্যে কার্বন ঘাটতির পরিমাণ ৭০০-৮০০ কোটি টন। তবে এ হিসাবের মধ্যে মাটিতে জমে থাকা কার্বনের কোনো হিসাব নেই। সে অনুযায়ী, প্রকৃত ঘাটতির পরিমাণ আরো বেশি।

বেড়ে ওঠার জন্য উদ্ভিদ বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন শুষে নেয়। এ কারণে জীবাশ্মজ্বালানি থেকে সৃষ্ট কার্বনের পরিমাণ অনেকটাই কমে আসে। গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, গত ৫০ বছরে জীবাশ্মজ্বালানি থেকে সৃষ্ট কার্বনের মধ্যে প্রায় ২৫ শতাংশই পৃথিবীর বনজ ও অন্যান্য বৃক্ষরাজি শুষে নিয়েছে। যদিও মানবসৃষ্ট পন্থায় কার্বন নিঃসরণ প্রতিদিন বেড়েই চলেছে; অ্যামাজন অঞ্চলে নতুন গাছ জন্ম নেয়ায় পুষিয়ে গেছে এর কিয়দংশ। তবে এ হারে নিধন অব্যাহত থাকলে একসময় অস্তিত্ব সংকটে পড়বে অ্যামাজন।

কার্বন শোষণ ও নিঃসরণের জৈব প্রক্রিয়ার নাম কার্বন সাইকেল। অ্যামাজনের বৃক্ষনিধনের কারণে ঘটা কার্বন নিঃসরণের অতীত তথ্য ঘেঁটে এ কার্বন সাইকেলকে সবচেয়ে ভালো বোঝা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব জিওসায়েন্সের অধ্যাপক জ্যাঁ ফ্র্যাঁ এক্সব্রায়াত। তিনি এ গবেষণাপত্রের মূল লেখক।

এক্সব্রায়াত মঙ্গাবেকে জানান, ‘বনের জৈববৈচিত্র্যের সঙ্গে এর অক্ষত অংশের পরিবেশের সম্পর্ক চিহ্নিত করে একটি অ্যালগরিদম তৈরি করা হয়। এর আগে বনের ন্যাড়া হয়ে যাওয়া অংশে জৈববৈচিত্র্যের পুনরুৎপত্তির সম্ভাবনা বোঝার জন্য আরেকটি অ্যালগরিদম তৈরি করেছি আমরা। এর মধ্য দিয়েই আমরা বের করেছি বন ধ্বংসের কারণে সৃষ্ট জৈববৈচিত্র্যের ঘাটতির পরিমাণ এবং এর পুনর্বর্ধন প্রক্রিয়া।’

পর পর দুবার পুরো গবেষণা প্রক্রিয়া পরিচালনার পর ফল সম্পর্কে নিশ্চিত হন গবেষকরা। গবেষণায় দেখা যায়, অ্যামাজন অঞ্চলে জৈববৈচিত্র্যের ঘাটতির পরিমাণ ১১ দশমিক ৫ থেকে ১২ শতাংশ।

গবেষণায় কোনো প্রকার নীতিমালা-সংক্রান্ত সুপারিশ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন এক্সব্রায়াত।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত