আন্তর্জাতিক ডেস্ক

০৭ জুন, ২০১৫ ১৪:৩৫

চীনে জাহাজডুবি: চার শতাধিক লাশ উদ্ধার

চীনের ইয়াংজি নদীতে টর্নেডোর আঘাতে জাহাজ ডুবির ঘটনায় মৃত আরোহীর সংখ্যা চারশ ছাড়িয়েছে।


রোববার সকাল পর্যন্ত ডুবে যাওয়া জাহাজটির ৪৫৬ জন আরোহীর মধ্যে ৪০৬ জনের লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৩৬ জন আরোহী নিখোঁজ রয়েছেন।

এ পর্যন্ত জাহাজের ক্যাপ্টেনসহ মাত্র ১৪ জনকে  জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। নিখোঁজ আরোহীদেরও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ।  

টর্নেডোর আঘাতে কয়েক মুহূর্তেই উল্টে যাওয়া জাহাজটি শুক্রবার খাড়া করার পর জাহাজটির ভিতর থেকে অধিকাংশ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ জাহাজটির ভিতরে জমে থাকা জঞ্জাল সাফ করে উদ্ধারকারীরা নিখোঁজ আরোহীদের লাশের খোঁজ করছেন।

গত সোমবার রাতে চীনের হুবেই প্রদেশের জিয়ানলি এলাকায় ইয়াংজি নদী ধরে যাওয়ার সময় পর্যটকবাহী চারতলা জাহাজ ইস্টার্ন স্টার টর্নেডোর কবলে পড়ে ডুবে যায়।

আরোহীদের মধ্যে ৪০৫ জন যাত্রী, ট্রাভেল এজেন্সীর পাঁচ কর্মী ও ৪৬ জন ক্রু ছিলেন।

কর্তৃপক্ষের প্রকাশিত এক তালিকায় দেখা গেছে, জাহাজটির যাত্রীদের মধ্যে তিন থেকে শুরু করে ৮০ বছরেরও বেশি বয়সী যাত্রী ছিলেন, যাদের অধিকাংশই পঞ্চাশোর্ধ পর্যটক।

এরই মধ্যে এ দুর্ঘটনা দেশটির গত ৭০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বিপর্যয়কর জাহাজ ডু্বির ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

ইস্টার্ন স্টার ডুবির এক সপ্তাহ পূর্ণ হয়েছে রোববার। চীনারীতি অনুযায়ী এ দিন মৃতের প্রতি শোক প্রকাশের দিন।

রীতি অনুযায়ী অন্য একটি বার্জের ডেকের উপর দাঁড়িয়ে ইস্টান স্টারের দিকে মুখ করে মৃতদের প্রতি শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়েছে চীনা কর্মকর্তা ও উদ্ধারকারীরা। মাথার টুপি খুলে মাথা নীচু করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন তারা। এ সময় আশপাশের নৌযানগুলোর হর্ন একযোগে বাজানো হয়।

শোক ও শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নিহতদের পরিবারের সদস্যরাও এ দিন নদীর পাড়ে সমবেত হবেন বলে জানা গেছে।

শুক্রবার রাতে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজটির পরিচালনা কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক জিয়াং ঝাওয়ের একটি সাক্ষাৎকার সম্প্রচার করা হয়। সাক্ষাৎকারে দুর্ঘটনার জন্য মাথানত করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি।

দুর্ঘটনার তদন্তে ‘পূর্ণ’ সহযোগীতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। তদন্তে কোনোরকমের ‘রাখঢাক’ করা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার।

জাহাজটির বেঁচে যাওয়া ক্যাপ্টেন ও প্রধান প্রকৌশলীকে পুলিশ হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, জাহাজটি অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই ছিল না ও জাহাজটিতে প্রত্যেক যাত্রীর জন্য পর্যাপ্ত জীবনরক্ষাকারী পোশাক (লাইফ জ্যাকেট) ছিল।

দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ব বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, জাহাজটি ১১ দিনের এক প্রমোদ ভ্রমণে পূর্বাঞ্চলীয় জিয়াংসু প্রদেশের নানজিং থেকে দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় শহর চোংকিংয়ে যাচ্ছিল।

চীনা আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, নদীটির যে জায়গায় জাহাজটি ছিল ঠিক ওই জায়গা দিয়েই টর্নেডোটি চলে যায়। চীনে টর্নেডো হলেও দেশটি টর্নেডোপ্রবণ নয়। দেশটিতে টর্নেডোর আঘাতে জাহাজ ডুবি একটি বিরল ঘটনা।

চীনে এতো বড় ধরনের নৌ-দুর্ঘটনা তেমন একটা ঘটে না। দেশটির বড় বড় নদীগুলো প্রধানত পর্যটকবাহী ক্রুইজ শিপ চলাচল করে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত