নিউজ ডেস্ক

১২ জানুয়ারি, ২০১৮ ১১:৪৭

মেয়ে কোলে নিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদ পাকিস্তানি উপস্থাপিকার

সাত বছরের শিশু জয়নাব। পাকিস্তানের ধর্ষণের পর তাকে হত্যা করা হয়

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের কাসুরে সাত বছরের শিশু জয়নাবকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ প্রকাশ করলেন এক উপস্থাপিকা। গত বুধবার পাকিস্তানের সমা টিভি চ্যানেলের উপস্থাপিকা কিরন নাজ সংবাদ পাঠ করার সময় নিজের শিশুকন্যাকে কোলে নিয়ে পর্দায় হাজির হন।

বিবিসি অনলাইন জানায়, খবরের মূল বুলেটিন শুরু করার আগে মেয়েকে কোলে নিয়ে ক্যামেরার সামনে তিনি বলেন, ‘আজ আমি কিরণ নাজ নই। আমি একজন মা। তাই এখানে আমার মেয়েকে নিয়ে বসে আছি।’ দেড় মিনিটের ওই বক্তব্যে কিরণ আরও বলেন, এই ঘটনায় আমি বিধ্বস্ত। কেউ যখন বলেন, ছোট্ট কফিনগুলোই সবচেয়ে ভারী হয়, ঠিকই বলেন। গোটা পাকিস্তান ভারাক্রান্ত সেই ছোট্ট মেয়েটির কফিনের ভারে।’

নিখোঁজ হওয়ার এক দিন পর গত মঙ্গলবার একটি আবর্জনার স্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয় ছোট্ট জয়নাবের লাশ। শিশুটিকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর গত বুধবার থেকে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে মানুষ। ‘জাস্টিস ফর জয়নাব’ দাবিতে মুখর দেশ।

এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন জনপ্রিয় অভিনেতা ও ক্রিকেট তারকারা। অভিনব উপায়ে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করলেন কিরন নাজও। তিনি বলেন, ‘জয়নাবের মা-বাবা যখন মেয়ের দীর্ঘজীবন চেয়ে সৌদি আরবে প্রার্থনা করছেন, তখন পাকিস্তানে একটা দৈত্য ধর্ষণ করে তার দেহ ছুড়ে ফেলে আবর্জনার স্তূপে। এর চেয়ে ভাগ্যের পরিহাস আর কী হতে পারে! এটা শুধু একটা বাচ্চার ধর্ষণ ও খুন নয়, আমাদের সমাজ, মানবতাই খুন হয়েছে।’

কোরআন শিখতে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয় জয়নাব। তার লাশ পাওয়া যায় বাড়ি থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে। জয়নাবের পরিবারের দাবি, মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার পরই পুলিশকে জানান তাঁরা। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সিসিটিভি ফুটেজ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ দোষী ব্যক্তিকে ধরতে পারছে না।

জয়নাবের বাবা মোহাম্মদ আমিন বলেন, ‘জয়নাবকে যখন অপহরণ করা হয়, তখনই যদি পুলিশ কিছু করত, তা হলে হয়তো ওকে মরতে হতো না।’ পুলিশে ওপর আস্থা নেই জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘যাঁরা প্রতিবাদ করছেন, তাঁদের ওপরই গুলি চালাচ্ছে পুলিশ। অথচ অপহরণকারীকে খুঁজে বের করতে পারেনি। মনে হচ্ছে যেন আমার পৃথিবী শেষ হয়ে গেছে।’

ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা যায়, জয়নাবকে বেশ কয়েকবার ধর্ষণ করা হয়। পরে গলা টিপে হত্যা করা হয়। লাশের চেহারায় নির্যাতনের স্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে।

জয়নাবের মায়ের দাবি, ‘বিচার চাই। আর কিছু বলার নেই।’

দেশজুড়ে বিক্ষোভে ইতিমধ্যে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। লাহোর হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মনসুর আলি শাহ শাহবাজ বিষয়টি নজরে রাখছেন। অপরাধীকে খুঁজতে পুলিশকে সহযোগিতা করতে সামরিক গোয়েন্দাদের নির্দেশ দিয়েছেন সেনাপ্রধান। অপরাধীর খোঁজ দিলে ১ কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।

বই পড়তে ও লিখতে ভালোবাসত ছোট্ট জয়নাব। খাতায় তার কচি হাতের লেখা প্রকাশ করেছে একটি পাকিস্তানি চ্যানেল। জয়নাব নিজের পরিচয় দিয়ে সেখানে লিখেছে, ‘আমি আম ভালোবাসি।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত