সিলেটটুডে ডেস্ক

১৬ মে, ২০১৮ ০২:০৪

ফাদি, সিয়া : সময়ের দুই অনুপ্রেরণার নাম

১৪ এপ্রিল ২০১৮। রোজ সোমবার। এই দিনে দুটি বিশেষ ঘটনার সাক্ষী হয়েছে সারাবিশ্বের মানুষ। জীবনে চরম ধ্বংসের মুহূর্তে দাঁড়িয়েও যে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নেওয়া যায় তা যেনো আরো একবার প্রমাণ হলো। এর একটি ঘটনা ঘটেছে নেপালে অন্য ফিলিস্তিনে। ঘটনা দুটি স্তিমিত হয়ে যাওয়া রক্তকে যেনো মুহূর্তেই টগবগ করে তোলে; সুকান্ত ভট্টাচার্যের মতো আঠারো বছর বয়স নেমে আসে প্রত্যেকের জীবনে। এ ঘটনার দুই নায়কের মধ্যেও রয়েছে এক আশ্চর্য রকমের মিল। সেটা হলো, তাদের দু’জনেরই কোনো পা নেই। তাদের একজনের সম্বল কৃত্তিম পা, অন্যের হুইল চেয়ার। শেষ পর্যন্ত একজন হেসেছেন বিজয়ের হাসি; অন্যজনের থেমে গেছে টিক টিক করে চলা জীবনঘড়ি!

একই দিনে কৃত্তিম পা লাগিয়ে চীনা নাগরিক সিয়া বোও ৬৯ বছরে যখন এভারেস্টের চূড়ায় উঠে নিজ দেশের পতাকা মেলে ধরলেন, তখন ২৯ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি যুবক ফাদি আবু সালাহ হুইল চেয়ারে করে ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদ করে প্রাণ দিলেন। তার স্বজনরা দেশের পতাকামুড়ে চিরজীবনের জন্য তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন। জীবন কতো বৈচিত্রময়, কতো ঠুনকো। একজনের দেশ আছে অন্য জনের আছে দেশ পাওয়ার স্বপ্ন। এরও নাম জীবন।

সেই ১৯৭৫ সালের কথা। সেবার সিয়া বোও এভারেস্ট চূড়ায় উঠতে গিয়ে অসুস্থ হন। তারপর ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন। একপর্যায়ে তার অসুস্থতার জেরে দুই পায়ে ক্যান্সারে বাসা বাঁধে। নানা চেষ্টা করেও তা রাখতে পারেননি তিনি। ফলে ১৯৯৬ সালে হাঁটুর নিচ থেকে দুই পা কেটেই ফেলতে হয়। কিন্তু এভারেস্ট জয়ের স্বপ্ন তিনি ত্যাগ করতে পারেননি। তার যেনো আরো স্পৃহা বেড়ে যায়। অবশেষে ৪৩ বছর পর গতকাল ১৪ মে সফল হলেন সিয়া বোও। ঠাঁই পেলেন ইতিহাসের পাতায়।

অন্যদিকে ফাদি আবু সালাহের বয়স ২৯। পা নেই, হুইল চেয়ারে করেই এখানে সেখানে যাতায়াত করেন। ২০১৪ সালে ইসরায়েল সেবার ফিলিস্তিনিদের উপর হামলা চালালে প্রতিবাদ করেন ফাদি। পরিণামে তার পা দুটো গুলি করে ছিন্ন ভিন্ন করে ফেলে ইসরায়েলি বাহিনী। সেই পা দুটো ধরে রাখতে পারেননি ফাদি। কিন্তু বুকের মধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জ্বলে থাকা সেই আগুন ঠিকই ধরে রেখেছিলেন। যেটার ছবি গত দুইদিনে ভাইরাল হয়ে গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

সেই ছবিতে দেখা গেছে, পা না থাকা টগবগে যুবক ফাদি তার পেশিবহুল হাত দিয়ে পাথর ছুড়ে ইসরায়েলি বাহিনীকে জানান দিচ্ছেন, ‘আমি তোমাদের দখলদারিত্ব মানি না।’

অবশেষে পা কেড়ে নিয়ে দুর্বল না করতে পেরে ইসরায়েলি স্নাইপাররা তাকে স্তব্ধ করে দেন। তার মুখে আর কোনো রাগের চিহ্ন নেই, নেই কোনো অত্যাচারিত ফিলিস্তিনিকে দেখার শক্তিও। তবে তার বুকে যেনো ঠিকই তখনো আগুন জ্বলছে। সেই আগুন থেকে যেনো আজীবন অনুপ্রেরণা পাবে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীরা। নিশ্চয় তাদের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন ফাদি। অমর থাকবেন জীবনে বিধ্বস্ত হয়ে নুঁইয়ে পড়া ক্লান্ত মানুষের জীবনেও। যারা প্রতিদিন স্বাধীনভাবে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চায়, বাঁচাতে চায়।

নিজের জমি হারিয়েছেন ফাদি। তার অনেক স্বজনকেও ইসরায়েলের গুলিতে হারিয়েছেন তিনি, দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে নিজেরও পা দুটোও হারিয়েছেন চার বছর আগে। এবার জীবন হারিয়ে প্রমাণ করে গেলেন স্বাধীনতার জন্য হারার দিকে ভ্রুক্ষেপ নয়। একইসঙ্গে ইসরায়েলকেও বার্তা দিয়ে গেলেন, ‘সমস্ত ফুল তোমরা কেটে নিতে পারো, কিন্তু বসন্তের আগমন তোমরা কিছুতেই থামাতে পারবে না।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত