ইন্টারন্যশনাল ডেস্ক

২৩ মে, ২০১৮ ১২:০১

রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা হিন্দুদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে: অ্যামনেস্টি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সেনাবাহিনীর হামলা-হত্যা-ধর্ষণের ঘটনার পাশাপাশি সেখানে বসবাসরত হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর রোহিঙ্গা সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি গণহত্যা চালিয়েছে বলে একটি মানবাধিকার সংস্থার তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।

মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তে রাখাইন রাজ্য থেকে সহিংসতার মুখে পালিয়ে আসা হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারী ও পুরুষদের সঙ্গে কথা বলে ব্যাপকভাবে আরাকান স্যালভেশন আর্মি, যারা আরসা নামে পরিচিত, তাদের গণহত্যার চিত্র তুলে এনেছে।

অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে একে নৃশংস ও কাণ্ডজ্ঞানহীন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়েছে, আরসা রাখাইনে একটি বা দু'টি গণহত্যা চালিয়ে শিশুসহ অন্তত ৯৯ জন হিন্দুকে হত্যা করেছে। যদিও আরসার পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

গত বছরের আগস্ট থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে সেনাবাহিনীর হামলার মুখে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশের উপকূলবর্তী অঞ্চলে আশ্রয় নেয়। এদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু। এ সময় মুসলিমদের পাশাপাশি কিছু হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষও সহিংসতার মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে। পরে আবার তাদের মধ্যে কিছু লোক ফিরেও যায়।

অ্যামনেস্টি বলেছে, গত ২৬ অগাস্ট সকালে আরসা সদস্যরা রাখাইনের মংডুর উত্তরাঞ্চলের আহ নুক খা মং সেইক গ্রামে হিন্দুদের উপর আক্রমণ চালায়। তাঁরা কালো পোশাক পরে এসেছিল। তাদের সঙ্গে স্থানীয় মুসলিম রোহিঙ্গারা ছিল বলেও হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা অভিযোগ করেছে।

এদের সবার হাতে ছিল ছুরি আর লোহার রড। তারা গ্রামটিকে ঘিরে ফেলে। ৫৩ জন হিন্দুকে ধরে গ্রামের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাদের হত্যা করা হয়। আটজনকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। পরে তারা পালিয়ে অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে চলে আসে।

সেই গ্রামের একজন নারী (২২) অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘তাদের কাছে ছুরি ও বড় লোহার রড ছিল। আমাদের হাত-চোখ সবসময় বেঁধে রাখা হতো। তারা বলছিল, ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হওয়ায় আমরাও রাখাইনে বাস করতে পারব না। আমাদের কয়েকদিন ধরে মারধর করা হয়। কারো কারো কাছ থেকে টাকা ও সোনার গহনা নিয়ে নেয়।’

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে আরোএকটি গণহত্যার কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেই ঘটনাটি ঘটেছে গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে আহ নুক খা মং সেইক গ্রামের পাশের আরেকটি গ্রাম ইয়ে বাউক কিয়ার গ্রামে। সেখানকার চারটি গণকবর থেকে ৪৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর আরো মানুষ আরসার গণহত্যার শিকার হতে পারে বলেও ধারণা করছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংগঠনটি বলছে, অনেকে এখনো নিখোঁজ রয়েছে।

আরসার এই অপরাধকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলেই মনে করছে অ্যামনেস্টি ইন্টারনাশনাল। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মতো এদেরও এই বর্বরতার জবাবদিহি করা জরুরি বলে মনে করে এই মানবাধিকার সংস্থাটি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত