সিলেটটুডে ডেস্ক

২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ১৮:০৩

পরকীয়া অবৈধ নয়

ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের রায়

পরকীয়া সংক্রান্ত পুরনো এক আইনকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে ঐতিহাসিক রায় দিয়েছেন ভারতের সর্বোচ্চ আদালত।

রায় ঘোষণা করতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি তার পর্যবেক্ষণে জানান, এই আইন স্বেচ্ছাচারিতার নামান্তর, যা নারীদের স্বাতন্ত্র্য খর্ব করে। ইংরেজ শাসনকালে তৈরি আইন চ্যালেঞ্জ করে দায়ের হওয়া একটি মামলার প্রেক্ষিতেই এই রায়ে শীর্ষ আদালত জানান, নারীরা পুরুষের সম্পত্তি নয়। ১৮৬০ সালের ওই আইনে বলা হয়েছে, কোনও পুরুষ কোনও নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করলে এবং ওই নারীর স্বামীর অনুমতি না থাকলে ওই পুরুষের পাঁচ বছর পর্যন্ত জেল এবং জরিমানা অথবা উভয়ই হতে পারে।

১৫০ বছরেরও বেশি সময় আগে প্রণীত ওই আইনকেই চ্যালেঞ্জ করে একাধিক মামলা দায়ের হয়। মামলাকারীদের দাবি ছিল, ঔপনিবেশিক শাসনকালে নারীদের পুরুষদের সম্পত্তি হিসাবে গণ্য করা হতো। তার ভিত্তিতেই তৈরি হয়েছিল এই আইন। তাদের দাবি, একই অপরাধে পুরুষকে দোষী করলে নারীদের নয় কেন। সেই মামালতেই রায় দিলেন সুপ্রিম কোর্ট।

বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে ৪৯৭ ধারার ওই মামলার রায়ে স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে পরকীয়া কোনও অপরাধ নয়। তবে বিবাহবিচ্ছেদের কারণ হতে পারে।

১৮৬০ সালের ব্রিটিশ আইনে বিবাহিত নারী-পুরুষের মধ্যে বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে পুরুষকে অপরাধী বিবেচনা করা হতো। নারীকে বিবেচনা করা হতো ‘ভিকটিম’। মামলাকারীদের দাবি ছিল, ঔপনিবেশিক আইনে নারীকে সম্পত্তি বিবেচনা করা হতো বলেই এমন আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র রায়ে বলেন, ১৫৮ বছরের পুরনো এই আইনের কোনও দরকার নেই। তিনি বলেন, '‌স্ত্রী কখনও স্বামীর সম্পত্তি হতে পারে না। কোনও ব্যক্তি যদি কোনও বিবাহিত নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হন তবে সেটা কোনও অপরাধ নয়।'‌

বিচারপতিরা জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই আইনের অবলুপ্তি ঘটেছে। তাই এ দেশের বর্তমান সমাজেও এই আইন থাকার কোনও দরকার নেই। দীপক মিশ্র বলেন, '‌কোনও আইন যা ব্যক্তিগত মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করে তা রাখার কোনও অর্থ নেই। আমাদের সমাজে নারী-পুরুষের সমান অধিকার রয়েছে। নারীদের কোনোভাবেই অসম্মান করা যাবে না, তাদের বিরুদ্ধে অসম্মানজনক মন্তব্য করাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।'‌

বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট সরকারের অবস্থান ছিল আইনটির পক্ষে। তাদের অবস্থান ছিল পরকীয়াকে অপরাধ হিসাবেই গণ্য করার পক্ষে, এতে বিবাহের পবিত্রতা রক্ষা হবে বলে মনে করেন তারা। তাদের দাবি, পরকীয়ার জন্য সেই নারীর পরিবার-সন্তানের ওপর প্রভাব পড়ে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত