আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৩ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১২:৪২

আস্থা ভোটে টিকে গেলেন থেরেসা মে

আস্থা ভোটে টিকে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকছেন গেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে।

বুধবার রাতে ভোটাভুটিতে ৬৩ শতাংশ কনজারভেটিভ এমপির সমর্থন পাওয়ায় আগামী এক বছর দলের নেতৃত্বে মেকে আর কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে না।

কনজারভেটিভ পার্টির মোট ৩১৭ জন আইনপ্রণেতার (এমপি) মধ্যে ২০০ জন থেরেসা মের নেতৃত্বের পক্ষে ভোট দেন। বাকি ১১৭ জন ভোট দেন বিপক্ষে।

দলে এই আস্থা ভোটে হেরে গেলে থেরেসা মেকে কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব থেকে সরে যেতে হত, সেই সঙ্গে হারাতে হত যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর পদ।

আস্থা ভোটে উতরে গেলেও মের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যে তার নিজ দলের এমপিদের একটি বড় অংশের সমর্থন নেই, তা স্পষ্ট। এতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মের অবস্থান আরও দুর্বল হয়ে পড়ল।

ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে বিরোধের জেরে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির আইনপ্রণেতাদের একটি অংশ মের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করে আস্থা ভোটের দাবি জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দলটির এমপিরা মের নেতৃত্বের পক্ষে-বিপক্ষে ভোট দেন। ঘণ্টাখানেক পর ঘোষিত হয় ফলাফল। ভোটাভুটি ছিল গোপন ব্যালটে। তাই ফল কী হয়, তা নিয়ে ছিল উত্তেজনা।

সংসদের একটি কমিটির কক্ষে ভোটাভুটি শুরু হওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী মে এমপিদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। তিনি ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার স্বার্থে তার নেতৃত্বের ওপর আস্থা রাখার জন্য এমপিদের প্রতি শেষবারের মতো অনুরোধ জানান। মে এমন প্রতিশ্রুতিও দেন যে তিনি মধ্যবর্তী নির্বাচনের ডাক দেবেন না। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হবেন না।

আস্থা ভোটে উতরে যাওয়ার ফলে আগামী এক বছর এমন ভোটের দাবি জানাতে পারবেন না দলটির এমপিরা।

এক সপ্তাহ ধরে থেরেসা মের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। গতকালের এই ভোটের মধ্য দিয়ে সেই গুঞ্জনের অবসান ঘটল।

নেতৃত্বের পরীক্ষায় উতরে যাওয়ার পর থেরেসা মে ডাউনিং স্ট্রিটে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, আজ রাতের ভোটাভুটিতে সহকর্মীরা ব্যালটের মাধ্যমে আমাকে সমর্থন জানিয়েছেন, সেজন্য আমি কৃতজ্ঞ। তবে সহকর্মীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আমার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। তারা যা বলেছেন, তা আমি শুনেছি।

ব্রিটেনের মানুষ যে ব্রেক্সিটের পক্ষে রায় দিয়েছে, তার বাস্তবায়ন এবং জাতিকে আবারও ঐক্যবদ্ধ করতে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করার অঙ্গীকারের কথাও তিনি বলেন।

তবে রাজনৈতিক ভাষ্যকারেরা বলছেন, ক্ষমতাসীনদের গৃহবিবাদ জানান দেওয়ার এই ভোট মূলত অর্থহীন। মের জন্য আসল বিপদ সামনে। সম্পাদিত ব্রেক্সিট চুক্তি সংসদে পাস করানোটাই তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

থেরেসা মে সম্পাদিত ব্রেক্সিট চুক্তির বিরোধিতা করছেন তার নিজ দলের অনেক এমপি। এই চুক্তি নিয়ে বিরোধী দলগুলোও সন্তুষ্ট নয়।

নর্দান আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির (ডিইউপি) ওপর ভর করে সরকারে আছেন মে। সেই ডিইউপিও এই চুক্তির ঘোর বিরোধী। যে কারণে গত সোমবার চুক্তি অনুমোদন প্রশ্নে পার্লামেন্টে নির্ধারিত ভোট পিছিয়ে দিতে বাধ্য হন মে। চুক্তিটি এমপিদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে মে গত মঙ্গলবার পুনরায় ছুটে যান ইইউয়ের দরবারে। তবে ইইউয়ের নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, যা সমঝোতা হয়েছে, তার বাইরে নতুন কিছু মিলবে না।

এমন পরিস্থিতে সরকারের প্রতি অনাস্থা আনা বিরোধী দলগুলোর জন্য অনেকটাই সহজ ছিল। বিভিন্ন তরফে এমন প্রস্তাবও ছিল বেশ জোরালো। তবে প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের চেষ্টার শেষ দেখে অনাস্থা ভোটের সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছেন। কিন্তু তার নিজ দলের এমপিরাই প্রধানমন্ত্রী মের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করে বসেন।

কিন্তু মঙ্গলবার রাতে কমিটির চেয়ারম্যান গ্রাহাম ব্রাডি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জানান, ৪৮ জন এমপির আবেদন তিনি পেয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী তিনি অনাস্থা ভোটের আয়োজন করছেন। তখন প্রধানমন্ত্রী দ্রুত এ বিষয়ে সুরাহা দেখতে চান বলে জানান।

২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত এক গণভোটে যুক্তরাজের মানুষ ব্রেক্সিটের পক্ষে রায় দেন। পরাজয় মেনে নিয়ে পদত্যাগ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। নতুন প্রধানমন্ত্রী হন মে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত