আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৩ মার্চ, ২০১৯ ১৪:০৩

প্রথমবারের মতো নির্বাচনী জনসভায় প্রিয়াঙ্কা

আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেসে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো বক্তব্য দিলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। গুজরাটের এক জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হলো তার নতুন এক পথচলা।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) জনসভায় গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির তৈরি করা দেশভক্তির হাওয়াকে বদলে ফেলার চেষ্টা করলেন তিনি।

আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, গুজরাটের জনসভায় তখন প্রিয়াঙ্কাকে দেখতে উঁকি দিচ্ছে হাজারো কৌতূহলী চোখ। স্লোগান উঠছে, ‘ইন্দিরা গান্ধী জিন্দাবাদ।’ তার মধ্যেই হঠাৎ ঘোষণা, প্রিয়াঙ্কা বক্তৃতা দেবেন। সোনিয়া গান্ধী, মনমোহন সিং বললেন না। রাহুল গান্ধীরও তখন বলা বাকি।

পূর্ব উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বে দলের সাধারণ সম্পাদক হয়ে প্রথম বার কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে যোগ দিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা। আর দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথম বার জনসভায় বক্তৃতা। আর প্রথম সভাতেই নিশানা নরেন্দ্র মোদির দিকে। তারই রাজ্যে।

মহাত্মা গান্ধীর ডান্ডি অভিযানের ৮৯তম বার্ষিকীতে, গুজরাটে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে রাহুল গান্ধী দলকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, দেশভক্তি সামনে এনে নরেন্দ্র মোদি ভোটের অভিমুখ ঘোরানোর চেষ্টা করছেন। আমাদের সে ফাঁদে পা দেওয়া উচিত নয়। যুবকদের বেকারত্ব, কৃষকদের দুর্দশা আর প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত দুর্নীতি— এই তিনটি বিষয় নিয়েই আসল প্রশ্ন তুলতে হবে।;

সোনিয়া গান্ধীও বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেকে ‘ভিক্টিম’ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। অথচ অত্যাচারিত তো দেশের জনতা।' মনমোহন সিংহেরও মত, মিথ্যা প্রচার করছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বললেন, এত লোক এসেছেন, আমার মনের কথা বলি। আপনাদের সচেতন হতে হবে। সচেতনতার থেকে বড় দেশভক্তি নেই। আপনাদের সচেতনতাই অস্ত্র, আপনাদের ভোটই অস্ত্র। অথচ এই অস্ত্রে কারও লোকসান হয় না, কারও দুঃখ হয় না। খুব গভীরে গিয়ে ভাবতে হবে, ভবিষ্যতে কী বাছবেন আপনারা? এ বারের লড়াই স্বাধীনতা সংগ্রামের চেয়ে কম নয়।

বিরোধীদের মতে, পুলওয়ামা ও সার্জিকাল স্ট্রাইকের পর নরেন্দ্র মোদি এবং তার সেনাপতিরা দেশভক্তির আড়ালে ঢাকতে চাইছেন ভোটের অভিমুখ। আর প্রিয়াঙ্কা সঠিক বিষয়ে ভোট দেওয়াকেই ‘আসল দেশভক্তি’ অ্যাখ্যা দিলেন।

তিনি বললেন, আসল প্রশ্ন করুন। ভোটে অপ্রাসঙ্গিক বিষয়কে তুলে ধরা হবে। কিন্তু যিনি আপনাদের সামনে বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, তাকে জিজ্ঞাসা করুন, ২ কোটি রোজগার কোথায় গেল? প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক খাতে ১৫ লক্ষ টাকা কোথায় গেল? মহিলাদের নিরাপত্তা কোথায় গেল? দেশ বাঁচানোর ভার আপনাদেরই নিতে হবে।

খাস মোদি-রাজ্যে গিয়ে রাহুল-প্রিয়াঙ্কা জুটি কী করেন, সে দিকে দিল্লি থেকেও বিজেপি নেতারা নজর রেখেছিলেন। পরশুই তার আবার উত্তরপ্রদেশ যাওয়ার কথা।

প্রিয়াঙ্কা  এ দিন শুরু করলেন 'আমার বোনেরা ও ভাইরা' সম্বোধন করে। তার পর বললেন, প্রথম বার গুজরাট এলাম। ভাবিনি কিছু বলতে হবে। সকালে সাবরমতী আশ্রমে গাছের তলায় বসে ভজন শুনতে শুনতে চোখে জল এসে গিয়েছিল। এ দেশ প্রেম ও সম্প্রীতির ভিত্তিতে চলে। কিন্তু এখন যা হচ্ছে, তা দেখে দুঃখ হয়।' তার পরেই  বললেন ‘আসল প্রশ্ন’ তোলার কথা।

যে প্রশ্ন তুললেন রাহুল, 'নরেন্দ্র মোদী বলেন, তিনি দেশভক্ত। প্রশংসা করেন বায়ুসেনার। যে যুদ্ধবিমান পাকিস্তানে বোমা ফেলল, সেটি যে সংস্থা তৈরি করেছে, তার হাত থেকে চুক্তি ছিনিয়ে অনিল অম্বানীর পকেটে ৩০ হাজার কোটি টাকা তুলে দিলেন। অনিল অম্বানী জীবনে একটি কাগজের বিমানও তৈরি করতে পারবেন না।'

প্রিয়াঙ্কা রাতে প্রথমবারের মতো প্রথম টুইটে লেখেন, ‘সাবরমতীর সহজ সম্ভ্রমে জেগে আছে সত্য।’ আর পরের টুইটে দেন গান্ধীর উদ্ধৃতি, ‘হিংসার মাধ্যমে ভাল কিছু সাধিত হচ্ছে বলে প্রথমে মনে হলেও সেই ভাল ক্ষণস্থায়ী। ওই হিংসা যে ক্ষতি করে, তা দীর্ঘস্থায়ী।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত