সিলেটটুডে ডেস্ক

২৮ মার্চ, ২০১৯ ০১:৩৩

পদত্যাগ করবেন থেরেসা মে

ব্রেক্সিট চুক্তিতে সমর্থনের বিনিময়ে পদত্যাগে রাজি হয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। তিনি বলেছেন, ব্রেক্সিট চুক্তি পাশ হলে পরবর্তী ধাপ- ইইউ’র সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ধারণের সমঝোতায় তিনি থাকবেন না।

বুধবার নিজ দলের সংসদ সদস্যদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে থেরেসা মে এ ঘোষণা দেন। তবে পদত্যাগের কোনো দিনক্ষণ উল্লেখ করেননি তিনি।

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট ব্রেক্সিটের নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেওয়ায় ভীষণ উদ্বেগে পড়েন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের কট্টর ব্রেক্সিটপন্থীরা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বিচ্ছেদের সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা তাদের। সে কারণে ‘মন্দের ভালো’ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র সম্পাদিত ব্রেক্সিট চুক্তিতে সমর্থনের ইঙ্গিত দিচ্ছেন তারা।

তবে এই সমর্থনের বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে থেরেসা মে’র পদত্যাগ দাবি করেন তারা। ইইউ’র সঙ্গে সমঝোতার পরবর্তী ধাপ ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ধারণের দায়িত্বে ব্রেক্সিটপন্থী কোনো প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে চান।

গত সোমবার এক প্রস্তাব পাশের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সংসদীয় কার্যবিধির নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেয়। এরপর থেকে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী আইনপ্রণেতাদের সংগঠন ‘ইউরোপিয়ান রিসার্চ গ্রুপে’র (ইআরজি) নেতারা নড়েচড়ে বসেন।

ইআরজি’র প্রধান জ্যাকব রিচ মগ বলেন, তিনি এত দিন প্রধানমন্ত্রীর সম্পাদিত বাজে চুক্তির চাইতে চুক্তি ছাড়াই বিচ্ছেদের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু এখন পার্লামেন্ট যেসব বিকল্পের কথা বলছে সেগুলো ওই চুক্তির চাইতেও বাজে। এ ছাড়া পার্লামেন্ট চুক্তিহীন বিচ্ছেদের সুযোগ বন্ধ করে দিচ্ছে। তাই মন্দের ভালো হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর চুক্তিতে সমর্থন দিতে রাজি তিনি। তবে সরকারের শরিক দল ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি (ডিইউপি) চুক্তিতে সমর্থন দিলে তবেই তিনি এটি সমর্থন করবেন।

সংসদীয় গণতন্ত্রে ক্ষমতাসীন দলের আইনপ্রণেতারা সমর্থন দিলেই যে কোনো চুক্তি পাশ হয়। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী আইনপ্রণেতাদের বিরোধিতার কারণে ব্রেক্সিট চুক্তি পাশে দুই দফা ব্যর্থ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মে। সরকারের শরিক দল ডিইউপিও চুক্তির বিরোধিতায় সরব।

২০১৬ সালের ২৩ জুন যুক্তরাজ্যে এক গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে দেশটির চার দশকের সম্পর্কোচ্ছেদের রায় হয়।

পৌনে দুই কোটি ভোটারের ৫২ শতাংশ ভোট দিয়েছিল ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে; তাদের কথা ছিল, ইইউর অন্য দেশগুলোকে টানতে গিয়ে তাদের পাউন্ড খরচ হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ৪৮ শতাংশের ভোট ছিল ইউরোপের আরও ২৭টি দেশের জোটে থেকে যাওয়ার। ওই ভোটে হারের পর তারা পুনরায় গণভোটের দাবিও তুলেছিল, তবে তা ঘটেনি।

ওই গণভোট ছিল সম্পর্ক ছিন্নের আনুষ্ঠানিকতার শুরু। ভোটে হারের পর রক্ষণশীল দলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন পদত্যাগ করলে থেরেসা মে সেই দায়িত্ব নিয়ে বিচ্ছিন্নতার পথরেখা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেন। এজন্য সময় বেঁধে দেওয়া ছিল চলতি বছরের ২৯ মার্চ। কিন্তু তার মধ্যে নিজের দেশের পার্লামেন্টে কোনো রূপরেখা পাস করাতে না পারার পর ইতোমধ্যে ইইউর কাছ থেকে ওই সময়সীমা ১২ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়ে নিয়েছেন মে।

নিজ দলের সদস্যদের সবার সমর্থন না পাওয়ায় বিচ্ছেদের দুটি রূপরেখা পরপর পার্লামেন্টে নাকচ হয়ে যাওয়ার পর গত জানুয়ারিতে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের মুখেও পড়েছিলেন মে। তাতে কোনো মতে উৎরে গেলেও এখন একটি চুক্তি পাসের জন্য ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট ছাড়তে হচ্ছে তাকে।

এদিকে বুধবার সংসদের কার্যবিধির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন সর্বদলীয় আইনপ্রণেতারা। এদিন ব্রেক্সিট বিষয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন যাচাইয়ে ১৬টি বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। এসবের মধ্য থেকে স্পিকারের বাছাই করা ৬টি প্রস্তাবের ওপর গতকাল সন্ধ্যায় ভোটাভুটির কথা। এসব ভোটে চূড়ান্ত কোনো ফল না মিললে আগামী সোমবারও একই ধরনের ভোটাভুটির আয়োজন করবে পার্লামেন্ট।

বিকল্প নিয়ে পার্লামেন্টে ভোটাভুটির আগেই নিজ দলের সাংসদদের নিয়ে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী।

হাউস অব কমন্সের লিডার অ্যান্ড্রিয়া লিডসম বলেন, পর্যাপ্ত সমর্থন নিশ্চিত করা গেলে বৃহস্পতিবার (আজ) অথবা শুক্রবার ব্রেক্সিটচুক্তি নিয়ে তৃতীয় দফা ভোটাভুটির আয়োজন হতে পারে। কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী এই নেতা বলেন, ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে বিবাদ দূরে রেখে আপাতত বিচ্ছেদ নিশ্চিত করা জরুরি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত