আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৪ মে, ২০১৯ ১২:০১

শ্রীলঙ্কায় মসজিদে হামলার পর সহিংসতায় নিহত ১, কারফিউ

শ্রীলঙ্কার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশে দ্বিতীয় দিনের মতো মসজিদ ও মুসলিমদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে। এ দাঙ্গায় নিহত হয়েছেন একজন।

সোমবার (১৩ মে) এসব ঘটনার সময় পুলিশ উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে লক্ষ্য করে কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, পরে কর্তৃপক্ষ দেশজুড়ে রাতব্যাপী কারফিউ জারি করে।

খ্রিস্টানদের ইস্টার সানডের দিন জঙ্গিদের আত্মঘাতী বোমা হামলার পর থেকে দ্বীপদেশটিতে এটাই সবচেয়ে বড় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। কয়েকটি হোটেল ও গির্জা লক্ষ্য করে চালানো ২১ এপ্রিলের ওই হামলায় ২৫৩ জন নিহত হয়। এরপর থেকেই দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল।

উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশের মারাউয়িলি হাসপাতাল থেকে এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ছুরিকাহত ৪২ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর তার মৃত্যু হয়।

স্থানীয় এক বাসিন্দা যিনি ছুরিকাহত ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিতে সাহায্য করেছেন, নিহতের নাম মোহাম্মদ আমীর মোহাম্মদ সালি বলে জানিয়েছেন।

উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশের মুসলিম অধ্যুষিত অংশগুলোর বাসিন্দারা জানান, উচ্ছৃঙ্খল জনতা দ্বিতীয় দিনের মতো মসজিদগুলোতে হামলা চালিয়েছে, তাদের দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো তছনছ করেছে।

প্রতিহিংসার আশঙ্কায় পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে কোট্টামপিটিয়া এলাকার এক বাসিন্দা টেলিফোনে রয়টার্সকে বলেন, কয়েকশ দাঙ্গাকারী ছিল, পুলিশ ও সেনাবাহিনী শুধু দেখছিল। তারা আমাদের মসজিদগুলো পুড়িয়ে দিয়েছে এবং ‍মুসলিমদের মালিকানাধীন বহু দোকান গুড়িয়ে দিয়েছে। আমরা বাড়ি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ আমাদের ভিতরে অবস্থান করতে বলে।

পুলিশ দেশজুড়ে রাত ৯টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করেছে বলে মুখপাত্র রুয়ান গুনাসেকেরা জানিয়েছেন।

এক বিবৃতিতে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বলেছেন, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের কারণে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর তদন্তে বিঘ্ন ঘটছে। সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে পড়লে এবং শান্তি বিঘ্নিত হলে দেশ অস্থিতিশীল হয়ে পড়তে পারে। সহিংসতা সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলোর উদ্দেশ্য জনজীবনের সংহতি নষ্ট করা ও দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলা।

শান্তি বিঘ্নকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে ক্ষমতা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিক্রমাসিংহে।

দেশটির অন্য আরেকটি এলাকায় ফেসবুকে সৃষ্ট বিরোধকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো ম্যাসেজিং অ্যাপগুলোর ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে।

সিংহলী বৌদ্ধ প্রধান শ্রীলঙ্কার ২ কোটি ২০ লাখ লোকের মধ্যে মুসলিমদের সংখ্যা প্রায় ১০ শতাংশ।

রয়টার্সের এক প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশের মাদুল্লায় কয়েক ডজন সিংহলী তরুণকে লাঠিসোটা ও রড হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছেন। এখানে উদ্বিগ্ন অনেক মুসলিম বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। কিন্তু দুপুর ২টা থেকে আঞ্চলিক কারফিউ জারি করা স্বত্বেও তরুণরা, যাদের অনেকের হাতেই রড, মোটরসাইকেলে চারপাশে টহল দিয়ে বেড়াচ্ছিলেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত