আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৫ জুন, ২০১৯ ১৭:৫৪

পশ্চিমবঙ্গে সরকারি চিকিৎসকদের গণইস্তফা

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে ভারতজুড়ে কয়েক ঘণ্টার প্রতীকী ধর্মঘট পালন করেছেন চিকিৎসকরা। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে কর্মরত তিন শতাধিক সরকারি চিকিৎসক চাকরি থেকে গণইস্তফা দিয়েছেন।

এর মধ্যে নীলরতন সরকার, আরজিকর, ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের মতো প্রাচীন হাসপাতালের প্রবীণ চিকিৎসকরাও রয়েছেন। এদিকে শনিবার ভারতজুড়ে দিনব্যাপী ধর্মঘট পালনের ডাক দিয়েছে চিকিৎসকদের সর্ববৃহৎ সংগঠন আইএমএ।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নমনীয় হলে আজ ধর্মঘট উঠতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা করাতে আসা হাজার হাজার রোগী। এছাড়া চেন্নাই ও বেঙ্গালুরুসহ বিভিন্ন শহরে চিকিৎসা করাতে যাওয়া বাংলাদেশি রোগীদের আরও সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পিজি হাসপাতালে গিয়ে চার ঘণ্টার মধ্যে কাজে না যোগ দিলে এসমা জারির হুমকি দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই হুমকিতে কর্ণপাত না করে পাল্টা গণইস্তফার ঘোষণা দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। সমর্থন করেছিলেন সরকারি হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসকরাও।

শুক্রবার দুপুর থেকে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের গর্ভগৃহ নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজের ১০০ জন চিকিৎসক গণইস্তফা দেন।

সন্ধ্যার খবর আরজি করে ৯৬, ন্যাশনাল মেডিকেলে ১৬ এবং উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও কোচবিহার হাসপাতাল মিলিয়ে ২৮ জন চিকিৎসক ইস্তফা দিয়েছেন।

রাজ্যজুড়ে চিকিৎসকদের ইস্তফার হিড়িক শুরু হয়েছে। জুনিয়রদের আন্দোলনের পাশাপাশি সিনিয়র চিকিৎসকরা পদত্যাগ করায় রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবা স্থবির হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালের ইনডোরেও চিকিৎসক মিলছে না।

কলকাতার ধর্মঘটিতে চিকিৎসকদের পক্ষে পথে নেমেছেন অভিনেত্রী অপর্ণা সেন, অভিনেতা কৌশিক সেন, গায়ক অনুপম রায়সহ অনেকে।

আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়ে মমতার উদ্দেশে অপর্ণা সেন বলেন, আপনি শুধু রোগীর পরিজনদের নয়, চিকিৎসকদেরও মুখ্যমন্ত্রী। আজ যা ঘটেছে তার দায় প্রশাসনেরও আছে। বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, এখানে আসুন।

মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, যদি কারও কোনো কথায় আঘাত পেয়ে থাকেন ক্ষমা করে দিন। কেউ ইচ্ছা করে আপনাকে আঘাত দেয়নি। ওরা জুনিয়র। আপনি তো বয়সে বড়। ওদের অভিভাবকের মতো। একটিবার আসুন। শিকেয় ওঠা স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়েও চিন্তা প্রকাশ করেন তিনি।

তবে এ অবস্থা থেকে যে মুখ্যমন্ত্রীই উপায় বের করতে পারেন- তাও বলেছেন অভিনেত্রী-পরিচালক অপর্ণা সেন। তার কথায়, একটা অচলাবস্থা চলছে। এ অচলাবস্থা থেকে রাস্তা বের করতেই হবে। রাস্তাটা কী আমি বলতে পারব না। আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এখানে এসেছি। তবে সবাইকে বলব, মনে রাখবেন হাসপাতালের আউটডোর বন্ধ রাখার জন্য রোগীরা যে কষ্ট পাচ্ছে, ততটাই কষ্ট পাচ্ছে জুনিয়র চিকিৎসকরাও।

পশ্চিমবঙ্গের জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে দাঁড়াল নয়াদিল্লীর এইমসের চিকিৎসক সংগঠন আরডিএ। শুধু পাশে দাঁড়ানো নয়, প্রতিবাদ মিছিলের পর আজ দিনভর কর্মবিরতি পালন করলেন এইমসের চিকিৎসকরা। জরুরি বিভাগ বাদ দিয়ে এদিন বাকি সব পরিষেবা বন্ধ ছিল। তবে আগে থেকে যারা ডাক্তার দেখানোর জন্য ওপিডিতে দিন নিয়েছিলেন তারা পরিষেবা পেয়েছেন। নতুন কোনো রোগী দেখছেন না চিকিৎসকরা।

শুধু এইমস নয়, দিল্লির সব হাসপাতালেই প্রায় একই চিত্র। মাথায় হেলমেট পরে, কালো ব্যাচ লাগিয়ে তাদের চিকিৎসা করতে দেখা গিয়েছে। দিল্লির পাশাপাশি বেঙ্গালুরু, মুম্বাইয়ের চিকিৎসকরাও বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন। কর্মবিরতিতে যোগ দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, মহারাষ্ট্র, বিহারসহ একাধিক হাসপাতালের চিকিৎসকরা। এসব হাসপাতালে ওপিডি বন্ধ থাকলেও জরুরি বিভাগের পরিষেবা স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সব মিলিয়ে এনআরএস আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশেই। কলকাতার ঘটনা নিয়ে এইমসের এক প্রতিনিধি দল দেখাও করেছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধনের সঙ্গে।

এরপরই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমি হাতজোড় করে মমতার কাছে অনুরোধ করছি, বিষয়টিকে প্রেস্টিজ ইস্যু করবেন না। ডাক্তাররা শুধু নিজেদের সুরক্ষা চেয়েছেন। বদলে তিনি ডাক্তারদের হুমকি দিচ্ছেন। এতেই দেশের ডাক্তাররা রেগে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমি নিজে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখব। তার সঙ্গে কথা বলারও চেষ্টা করব। পাশাপাশি ডাক্তারদের জানাই- সরকার সব সময় তাদের পাশে আছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত