ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

২৮ আগস্ট, ২০১৫ ০২:২৭

ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে বিজেপির উদ্বেগ

ভারতে জনগণনা রিপোর্ট প্রকাশের পর উত্তর প্রদেশের বিজেপি নেতা এবং এমপি যোগী আদিত্যনাথ বলেছেন, মুসলিমদের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ওদের জনসংখ্যার ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে কেন্দ্রীয় সরকারকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি বলেছেন, আদমশুমারির পরিসংখ্যানের মধ্যে গুরুতর সতর্কতা সংকেত আছে। এখন সময় এসে গেছে দেশের একতা এবং অখণ্ডতা রক্ষার জন্য কার্যকর জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ আইন নিশ্চিত করতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি সারা দেশে চালু করা।

যোগী আদিত্যনাথের মন্তব্য প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা খুরশিদ আহমদ সৈয়দ বলেছেন, এটা শুধু যোগী আদিত্যনাথের কথা নয়, নরেন্দ্র মোদিরও কথা। বিভাজনের রাজনীতির বিষ ছড়াতে চাচ্ছে বিজেপি। বিহারে আসন্ন নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রেখেই এসব করা হচ্ছে। এভাবে আদমশুমারি রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পর থেকে এ নিয়ে রাজনৈতিক ময়দান উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

কংগ্রেস নেতা শাকিল আহমেদ জানান, দেশে পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে সচেতনতা বাড়ায় হিন্দু, মুসলিম, শিখ এবং খ্রিস্টানসহ অন্যদের ক্ষেত্রে জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার আগের দশকের তুলনায় কমেছে। কিন্তু সরকারি প্রেস বিবৃতিতে হিন্দু জনসংখ্যা কমেছে এবং মুসলিম জনসংখ্যা বেড়েছে বলে বার্তা দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। সরকারই যদি এভাবে এক সম্প্রদায়ের সঙ্গে অন্য সম্প্রদায়কে লড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে, তাহলে দেশকে কে বাঁচাবে?

২০০১ সালে মুসলিম জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার ছিল ২৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। ২০১১ সালে এ বৃদ্ধির হার কমে ২৪ দশমিক ৬০-এ দাঁড়িয়েছে।

অন্যদিকে, ২০০১ সালে হিন্দু জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। ২০১১ সালে এ বৃদ্ধির হার ১৬ দশমিক ৭৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ কমেছে।

অন্যদিকে, হিন্দু জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে মাত্র ৩ শতাংশ। এভাবে হিন্দুদের তুলনায় মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অনেকটাই কমে এলেও মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে নেতিবাচক প্রচার সৃষ্টি হচ্ছে।

মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ধর্মের ভিত্তিতে আদমশুমারির যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০০১ থেকে ২০১১ সাল- এই দশ বছরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে।

বর্তমানে মোট জনসংখ্যার ৭৯.৮ শতাংশ হিন্দু। অর্থাৎ প্রথমবারের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ধর্মাবলম্বীর শতকরা হার ৮০-এর নিচে নেমেছে। সংখ্যার হিসেবে ৯৬.৬৩ কোটি।  এই একই সময়কালে শিখ (০.২%), বৌদ্ধ (০.১%)-দের সংখ্যাও সামান্য কমেছে। খ্রিস্টান ও জৈন ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যার বিশেষ হেরফের হয়নি।

জনগণনায় দেখা যাচ্ছে, মুসলিম জনসংখ্যা ০.৮ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৪.২ শতাংশে। যা সংখ্যার হিসেবে ১৭ কোটি ২২ লাখে।

খ্রিস্টানরা দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম জনগোষ্ঠী। তাদের সংখ্যা ২ কোটি ৭৮ লাখ (২ দশমিক ৩ শতাংশ)।

প্রকাশিত জনগণনায় মুসলিমদের সংখ্যাবৃদ্ধির চিত্র দেখা গেলেও পরিসংখ্যান বলছে, মুসলিম হার বেশ নিম্নমুখী।

পরিসংখ্যানবিদদের মতে, স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে মুসলিমদের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার যা ছিল, এ বারের জনগণনায় সেই হার সবচেয়ে নিম্নমুখী। এ বারে মুসলিম বৃদ্ধি-হার নেমে দাঁড়িয়েছে ২৪.৬ শতাংশে। আগের দু’টি দশকে যা ছিল ৩২.৮৮ ও ২৯.৫২ শতাংশ।

একই সঙ্গে হিন্দু বৃদ্ধি-হার এ বারে কমে দাঁড়িয়েছে ১৬.৭৬ শতাংশে। আগের দু’টি দশকে যা ছিল ২২.৭১ এবং ১৯.৯২ শতাংশ।

জনগণনায় আসাম, উত্তরাখণ্ড, কেরালা, পশ্চিমবঙ্গ ও গোয়া- এই পাঁচটি রাজ্যে মুসলমান বৃদ্ধির হার বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত