সাহাদুল সুহেদ, স্পেন

১২ নভেম্বর, ২০১৯ ১০:৫২

স্পেনে আবারও সোশ্যালিস্ট পার্টির জয়; সরকার গঠনে অনিশ্চয়তা!

স্পেনে জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন সোশ্যালিস্ট পার্টি সর্বোচ্চ আসন পেয়ে জয়ী হয়েছে। গত ১০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে ৩৫০টি আসনের মধ্যে ১২০টি আসন পেলেও দলটির সরকার গঠনে রয়েছে আবারও অনিশ্চয়তা। সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় আরও ৫৬টি আসনের জন্য সমমনা দলগুলোর সমর্থন আদায়ে দলটি কতটুকু সফল হয়, তার উপরই নির্ভর করছে সোশ্যালিস্ট পার্টির সরকার গঠন ও স্পেনের একটি স্থিতিশীল সরকার।

ইতোমধ্যে নতুন সরকার গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার আমন্ত্রণ জানিয়েছে সোশ্যালিস্ট পার্টি। অন্যদিকে ৮৮টি আসন নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা প্রধান বিরোধী দল পপুলার পার্টির সরকার গঠনের সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ।

১০ নভেম্বরের নির্বাচনের ফলাফলে পেদ্র সানচেজের দল সোশ্যালিস্ট পার্টি পেয়েছে ২৮ শতাংশ ভোট (১২০টি আসন), পাবলো কাসাদোর পপুলার পার্টি পেয়েছে ২০ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট (৮৮টি আসন), সান্তিয়াগো আবস্কালের নেতৃত্বে ভক্স পেয়েছে ১৫ দশমিক ১ শতাংশ ভোট (৫২টি আসন), পাবলো ইগলেসিয়ার উনিদাস পদেমস ১২ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট (৩৫টি আসন) ও আলবার্ট রিভেরার নেতৃত্বে সিউদাদানস পেয়েছে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট (১০টি আসন)।

সরকার গঠনে সম্ভাব্য জোট
সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় ১৭৬ আসনের জন্য লড়াই করে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। জোটবদ্ধ হয়ে সরকার গঠনে স্পেনের গণমাধ্যমগুলো বামপন্থী দল সোশ্যালিস্ট পার্টিকে এগিয়ে রেখেছে।

স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা ‘এল পাইস’ এর অনলাইন সংস্করণে সম্ভাব্য জোট সরকারে দলগুলোর নাম প্রকাশ করেছে। পত্রিকায় জোট সরকারের রূপরেখায় লেখা হয়- সোশ্যালিস্ট পার্টির ১২০টি আসনের সাথে উনিদাস পদেমস এর ৩৫টি, এমপি এর ৩টি, সিউদাদানোস এর ১০টি ও স্বাধীনতার দাবিদার নয় এমন কয়েকটি অঞ্চলের দলগুলোর ১১টি আসন একত্রিত হলে ১৭৯টি আসন হবে, যা সম্ভাব্য জোট সরকার গঠনের জন্য যথেষ্ট। এক্ষেত্রে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতাপন্থী দলগুলোকে প্রয়োজন পড়বে না। কিন্তু সিউদাদানোস এ জোটে শরিক হতে না চাইলে জোট সরকারের সদস্য হতে পারে সোশ্যালিস্ট পার্টি, এমপির পাশাপাশি স্বাধীনতার দাবিদার অঞ্চলের দলগুলো ও স্বাধীনতার দাবিদার নয় এমন কয়েকটি অঞ্চলের দলগুলো। এক্ষেত্রে সব মিলিয়ে হবে ১৯৭টি আসন।

স্পেনের নির্বাচন নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতিক্রিয়া
স্পেনের এ সাধারণ নির্বাচন নিয়ে দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরাও হিসেব নিকেশ করছেন। কোন দল ক্ষমতায় আসলে অভিবাসীরা উপকৃত হবেন, এ নিয়েও রয়েছে ভিন্ন মত। অভিবাসন নীতিতে কঠোর মনোভাব নেয়া দল ভক্স এর অপ্রত্যাশিত সাফল্যে চিন্তিত অনেকেই। বিশেষ করে ভক্স যদি অন্য দলের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে সরকার গঠন করে, তবে অভিবাসন নীতি কঠোর হতে পারে বলেও অনেকেই মন্তব্য করেছেন।

১৯৯২ সাল থেকে স্পেনের মাদ্রিদে বসবাস করছেন সৈয়দ আশফাকুল হক। তিনি এবারের নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে বলেন, সোশ্যালিস্ট পার্টির সামনেই কেবল সরকার গঠনের সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি বছরের ২৮ এপ্রিলের নির্বাচনের পর সরকার গঠনে যে জটিলতা ছিলো, এবার আর সেটা হবে না বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

মাদ্রিদে বাংলাদেশি মানবাধিকার সংস্থা ‘ভালিয়েন্তে বাংলা’ এর সভাপতি ফজলে এলাহি বলেন, যে দলই সরকারে আসুক না কেন, আমরা চাই অভিবাসী বান্ধব সরকার।

ব্যবসায়ী নাজমুল ইসলাম নাজু বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্পেনে একটি স্থিতিশীল সরকার নেই। তাই এবার সোশ্যালিস্ট পার্টিকে সমমনা দলগুলোর সাথে যৌক্তিক সমঝোতার মাধ্যমে জোটবদ্ধ সরকার গঠন করার বিকল্প নেই। তিনি মনে করেন, সোশ্যালিস্ট পার্টি সরকার গঠন করলে অভিবাসীদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল সম্পন্ন হওয়া স্পেনের সাধারণ নির্বাচনে প্রত্যাশিত বেশি আসন পেলেও সোশ্যালিস্ট পার্টি সরকার গঠন করতে পারেনি। ৩৫০টি আসনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ১৭৬টি আসন পেতে ব্যর্থ হলেও ১২৩টি আসন নিয়ে সমমনা অন্যান্য দলের সাথে ‘জোট সরকার’ গঠনের সুযোগও হাতছাড়া করে সোশ্যালিস্ট পার্টি। তাই নির্বাচিত সরকার গঠন না হওয়ায় ১০ নভেম্বর আরও একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে স্পেনের গণতন্ত্রের ইতিহাসে একই বছর পরপর দুইবার জাতীয় নির্বাচন হওয়ার নতুন রেকর্ড তৈরি হলো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত