সিলেটটুডে ডেস্ক

১৮ ফেব্রুয়ারি , ২০১৫ ১২:০৯

সুবহানের ফাঁসির রায়

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুস সুবহানকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন অান্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুস সুবহানকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন অান্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ বুধবার বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে এ রায় ঘোষণা করেন।

সুবহানের বিরুদ্ধে ৯টি অভিযোগের মধ্যে ১, ৪ ও ৬ নম্বর অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ২ ও ৭ নম্বর অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ৩ নম্বর অভিযোগে দেওয়া হয়েছে ৫ বছরের কারাদণ্ড।

এ ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহীনুর ইসলাম।

আদালত রায় দেওয়ার সময় স্বাভাবিক ছিলেন সুবহান। রায় দেওয়ার সময় সুবহানের বয়স বিবেচনায় নেওয়া হয়নি বলে জানান আদালত।

মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী ও আশেপাশের এলাকায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের ৯টি অভিযোগ ছিল সুবহানের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ৬টি প্রমাণিত হয়েছে। ১, ২, ৩, ৪, ৬, ৭ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ৫, ৮, ৯ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।

১৬৫ পৃষ্ঠার রায়ের সারাংশ পড়েন চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।

সুবহানের বিরুদ্ধে আনা সুনির্দিষ্ট অভিযোগগুলো হচ্ছে:

অভিযোগ-১: মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী ও বিহারীদের নিয়ে মসজিদে আশ্রয় নেওয়া স্বাধীনতাকামী লোকদের অপহরণ করে হত্যা করেন।

অভিযোগ-২: ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল তার নেতৃত্বে ও উপস্থিতিতে ঈশ্বরদী যুক্তিতলা গ্রামে অভিযান চালিয়ে ব্যাপক লুটপাট চালিয়ে ৫ জন নিরীহ-নিরস্ত্র লোককে হত্যা ও ৩ জনকে গুরুতর আহত করা হয়।

অভিযোগ-৩: ওই বছরের ১৬ মে ঈশ্বরদী অরণখোলা গরুরহাট থেকে দুই লোককে অপহরণ করে পাবনার ঈশ্বরদীতে অবস্থিত জেলা পরিষদ ডাক বাংলোয় নির্যাতন করেন তিনি ও তার সহযোগীরা।

অভিযোগ-৪: ১৯৭১ সালের ২ মে তার নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঈশ্বরদীর সাহাপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে অসংখ্য বাড়িঘরের মালামাল লুটপাট করে ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এসময় বেশ কয়েকজন লোককে হত্যা করে তারা।

অভিযোগ-৫: ওই বছরের ১১ মে সুবহানের নেতৃত্বে ও উপস্থিতিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পাবনা সদর থানার কুলনিয়া ও দোগাছি গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে ৭ জন নিরীহ-নিরস্ত্র ও স্বাধীনতাকামী লোককে হত্যা করে এবং কয়েকটি বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে।

অভিযোগ-৬: '৭১ সালের ১২ মে সুবহানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাবহিনীর একটি বিরাট বহর সুজানগর থানার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে অভিযান চালিয়ে জ্ঞাত-অজ্ঞাত ৩/৪ শত জন লোককে হত্যা করে। গণহত্যার এ ঘটনার সময় ওই এলাকার বিভিন্ন লোকজনের বাড়িঘরের মালামাল লুটপাট ও বাড়িঘরে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।

অভিযোগ-৭: মুক্তিযুদ্ধের সময় ২০ মে সুবহানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পাবনা সদর থানার ভাড়ারা গ্রামে অভিযান চালিয়ে ১৮ জন নিরীহ লোককে অপহরণ করে। তাদের মধ্যে একজনকে গ্রামের একটি স্কুলে হত্যা করা হয়। অপর ১৭ জনকে পাবনা সদর নূরপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নিয়ে আটক করে নির্যাতন করা হয়। এদের কয়েকজনকে আটঘরিয়া থানাধীন দেবত্তোর বাজারের পাশে বাঁশবাগানে গুলি করে হত্যা করা করা হয়।

অভিযোগ-৮: '৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সুবহান তার অনুসারী রাজাকারদের নিয়ে আতাইকুলা থানার (সাবেক পাবনা সদর থানা) দুবলিয়া বাজার থেকে দু'জন স্বাধীনতাকামী লোককে অপহরণ করে কুচিয়ামাড়া গ্রামে একটি মন্দিরের ভেতরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে।

অভিযোগ-৯: '৭১ সালের ৩০ অক্টোবর রাজাকারদের নিয়ে সুবহানবাহিনী ঈশ্বরদী থানার বেতবাড়িয়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে কয়েকটি বাড়িতে লুটপাটসহ বাড়িঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় এবং ৪ ব্যক্তিকে অপহরণের পর হত্যা করে।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত