সিলেটটুডে ডেস্ক

১৮ ফেব্রুয়ারি , ২০১৫ ১৩:০৭

কামারুজ্জামানের মৃত্যুদন্ডের পূর্নাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে

যুদ্ধাপরাধ মামলায় জামায়াতে ইসলামীর নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করেছে আপিল বিভাগ, যার ফলে সাজা কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু করতে আর বাধা থাকল না।

যুদ্ধাপরাধ মামলায় জামায়াতে ইসলামীর নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করেছে আপিল বিভাগ, যার ফলে সাজা কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু করতে আর বাধা থাকল না।

আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এসকে সিনহা নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চ গত ৩ নভেম্বর এই রায় ঘোষণা করে। বিচারকদের স্বাক্ষরের পর সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখা বুধবার এই রায় প্রকাশ করে।

বেঞ্চের বাকি সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও  বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।

নিয়ম অনুযায়ী এই রায়ের অনুলিপি হাতে পেলে এবং মৃত্যু পরোয়ানা জারির আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেই সরকার সাজা কার্যকরের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে। তবে আসামিপক্ষ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য আবেদন করার সুযোগ পাবে।

আপিল বিভাগের সর্বোচ্চ সাজার আদেশ হাতে পাওয়ার পর বিচারিক আদালত (ট্রাইব্যুনাল) কারাগারে মৃত্যু পরোয়ানা পাঠাবে। এরপর আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারবেন। তিনি স্বজনদের সঙ্গে দেখাও করতে পারবেন।

ওই মৃত্যু পরোয়ানার ভিত্তিতেই সরকারের তত্ত্বাবধানে কারা কর্তৃপক্ষ সাজা কার্যকরের প্রস্তুতি নেবে। তবে রিভিউ আবেদন হলে তার নিষ্পত্তি হওয়ার আগে দণ্ড কার্যকর করা যাবে না।

আপিল বিভাগ রায় ঘোষণার সাড়ে তিন মাস পর এই পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হলো। আগামী রোববারের মধ্যে এর সার্টিফায়েড কপি তৈরি হয়ে যাবে বলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন।

একাত্তরে আল বদরের ময়মনসিংহ জেলা শাখা প্রধান কামারুজ্জামানকে গত বছর ৯ মে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তৃতীয় ও চতুর্থ অভিযোগে হত্যার ঘটনায় কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ওই দণ্ড কার্যকর করার আদেশ দিয়েছিল বিচারিক আদালত।

এর মধ্যে তৃতীয় অভিযোগে শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুরে ১২০ জন পুরুষকে ধরে নিয়ে হত্যার দায়ে আপিল বিভাগের চার বিচারপতি সর্বসম্মতভাবে আসামি কামারুজ্জামানকে দোষী সাব্যস্ত করে। আর তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে।

তবে চতুর্থ অভিযোগে গোলাম মোস্তফাকে হত্যার ঘটনায় ট্রাইব্যুনালের দেওয়া সর্বোচ্চ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আপিল বিভাগ।

এছাড়া যাবজ্জীবন ও ১০ বছর কারাদণ্ডের দুটি অভিযোগ বহাল এবং যাবজ্জীবনের একটি অভিযোগ থেকে সর্বোচ্চ আদালত কামারুজ্জামানকে খালাস দেওয়া হয়।

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিতদের মধ্যে কামারুজ্জামান হলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি, আপিল বিভাগে যার মামলার নিষ্পত্তি শেষে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হল।

এর আগে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে প্রাণদণ্ড দেয় আপিল বিভাগ যা কার্যকর করা হয় ১২ ডিসেম্বর।

আর জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির দণ্ড কমিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়, যার পূর্ণাঙ্গ রায় এখনো প্রকাশিত হয়নি।  সংক্ষিপ্ত রায় প্রকাশের পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

আপিল বিভাগ কামারুজ্জামানের রায় ঘোষণার পরদিন ৪ নভেম্বরই তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে আসা হয়। তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রস্তুতি নিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশও দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

কিন্তু এ ধরনের মামলায় রিভিউ করা যাবে কি না- সে বিষয়ে অস্পষ্টতা এবং পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের অপেক্ষার কারণে বিষয়টি থিতিয়ে আসে।   

যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কাদের মোল্লার ‘রিভিউ’ আবেদন খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায় গতবছর ২৫ নভেম্বর প্রকাশ করা হলে অস্পষ্টতা কাটে। ওই রায়ে বলা হয়, আসামি ও রাষ্ট্র- দুপক্ষই ১৫ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার জন্য এই আবেদন করতে পারবে। তবে রায়ের নির্ভরযোগ্যতায় ‘খাদ আছে’ বা ‘বিচার-বিভ্রাটের’ আশঙ্কা আছে বলে মনে করলেই আদালত তা পুনর্বিবেচনার জন্য গ্রহণ করবে।   

১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে দণ্ডিতদের ক্ষেত্রেও আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন গ্রহণযোগ্য (মেনটেইনেবল) হবে। তবে তা আপিলের সমকক্ষ হবে না।

আপিল বিভাগে কামারুজ্জামানের রায়ের পর ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেছিলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার পর তারা তা জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠাবেন। কারা কর্তৃপক্ষ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে রায় কার্যকর করবে।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত