নিউজ ডেস্ক

১৬ মার্চ, ২০১৫ ০৩:৩৬

২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ ঘোষণার দাবি

২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা করার জন্য জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দাবি জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। এ লক্ষ্যে দেশে দেশে কুটনৈতিক তৎপরতা চালাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আলোর মিছিল - Candle Light Procession  নামে খোলা এক ইভেন্টের মাধ্যমে এই দিবসের দাবিতে কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে সেদিন রাত ৮টায় ‘আলোর মিছিল’ শীর্ষক কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। চলছে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা।

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন মহল থেকে এই দাবির প্রতি একাত্ম হয়ে সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার প্রথম মেয়াদকালে যেভাবে জাতিসংঘের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারির স্বীকৃতি আদায় করেছে, একইভাবে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে ২৫ মার্চের স্বীকৃতি আদায় করবে। এজন্য জাতিসংঘে এবং দেশে দেশে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাবে সরকার।

অগ্নিঝরা মার্চ এবছর পার করছে ৪৪ বছর। এটি বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যারও ৪৪ বছর। স্বাধীনতা ঘোষণা এবং মুক্তিযুদ্ধ শুরুর মাস হিসেবে মার্চ মাসটি আমাদের কাছে একাধারে আনন্দ ও গভীর বেদনার। একাত্তরের ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী এদেশের নিরীহ মানুষের উপর বর্বর জানোয়ারে মতো ঝাপিয়ে পড়েছিল।

নজিরবিহীন গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতার আকাঙ্খাকে অঙ্কুরেই বিনাশ করতে চেয়েছিল। সেই কালো রাতে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বাঙালি নিধন শুরু করেছিল। নিরস্ত্র ঘুমন্ত মানুষের উপর অতর্কিতে হামলা করে হত্যার উল্লাসে মেতে উঠেছিল।

অপারেশন সার্চ লাইট নামে ঐ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ঐতিহাসিক আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পুলিশ ও সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী ইপিআর-এর সদর দফতরে প্রথম হামলা চালায়। নির্বিচারে হত্যা করে ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যদের। পুরো ঢাকা জুড়ে চালায় তান্ডব। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুসারে, ২৫ মার্চ এক রাতেই পিশাচের দল হত্যা করেছিল ১০ হাজার থেকে এক লাখ মানুষ। আর মাত্র নয় মাসে ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশে ওরা ৩০ লাখ মানুষ হত্যা করেছে।

এই বর্বর ঘটনা সভ্যতার মানচিত্রে সবচেয়ে নৃশংস গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দাবি করতেই পারে। যাতে এই দিনটিতে বিশ্বজুড়ে গণহত্যার বিরুদ্ধে গণসচেতনতা ও গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়। পুরো বিশ্ববাসী যাতে একযোগে স্মরণ করতে পারে গণহত্যায় নিহতদের। দাবি জানাতে পারে গণহত্যাকারীদের বিচারের এবং উদ্যোগ নিতে পারে গণহত্যা অবসানের।

বাংলাদেশে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ গত ২১ বছর ধরে ২৫ মার্চ গণহত্যার কালরাত্রি পালনের কর্মসূচি হিসেবে শহীদ মিনারে সমবেত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে আলোর মিছিল নিয়ে নিকটস্থ বধ্যভূমিতে গিয়ে মোমবাতি জ্বালায়।

গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্মূল কমিটির শাখাগুলো এই কর্মসূচি পালন করছে। আগামী ২৫ মার্চ রাত ৮টায়ও কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে জ্বালানো হবে মোমবাতি। আর প্রত্যাশা থাকবে, সকলের জ্বালানো মোমের আলোয় ঘাতকের চেতনা থেকে হিংসা, বিদ্বেষ ও হানাহানির কালিমা দূর করবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত