সিলেটটুডে ডেস্ক

২৮ আগস্ট, ২০১৬ ১৬:১৫

ভালো ভালো প্রসিকিউটর নিয়োগ করেন না কেন, শুনানিতে প্রধান বিচারপতি

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর মামলা পরিচালনার সঙ্গে ট্রাইব্যুনালের যে প্রসিকিউটররা যুক্ত ছিলেন তাদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ ‘ভালো ভালো প্রসিকিউটর নিয়োগ করেন না কেন’ বলে প্রশ্ন রেখেছেন।

মীর কাসেমের রিভিউ শুনানিকালে রোববার (২৮ আগস্ট) আদালত এ অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

আপিল বেঞ্চে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্ব দিচ্ছেন, বেঞ্চের অন্য চার বিচারপতি হলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানিয়েছেন, ট্রাইব্যুনালে মীর কাসেমের মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে যারা যুক্ত ছিলেন এবং যিনি তাদের দায়িত্ব দিয়েছেন (প্রধান প্রসিকিউটর), তাদের ওই দায়িত্বে থাকা ‘উচিত নয়’ নয় বলে আপিল বিভাগ মত দিয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে রোববার মীর কাসেমের রিভিউ শুনানিতে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা বলেন, রায় প্রকাশ হলে দায়ী প্রসিকিউটরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা খোদ আইনমন্ত্রী প্রেস কনফারেন্স করে জানিয়েছিলেন। কিন্তু কী ব্যবস্থা সরকার নিয়েছে- তা আদালত জানে না।

প্রধান বিচারপতি শুনানিকালে বলেন, ভালো ভালো প্রসিকিউটর নিয়োগ করেন না কেন? ভালো ভালো প্রসিকিউটর নিয়োগ করেন। টাকা পয়সা দিতে কী সমস্যা?”

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম উত্তরে বলেন, “ভালো প্রসিকউটর আছে। এদেরকে এই মামলায় কেন যুক্ত করা হল, সেটা বিষয়।”

পরে এ বিষয়ে মাহবুবে আলম বলেন, “মীর কাসেম আলীর মামলায় যে যে প্রসিকিউটর মামলা পরিচালনায় অংশ নিয়েছেন এবং প্রধান প্রসিকিউটর, যিনি তাদের দায়িত্ব প্রদান করেছেন- এই কয়জনের ব্যাপারে আদালত একটা অভিমত প্রকাশ করেছেন, এদের এখানে থাকা উচিত নয়।”

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন জামায়াতের অর্থ যোগানদাতা হিসেবে পরিচিত ব্যবসায়ী মীর কাসেমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট ১৪টি অভিযোগ এনেছিল। ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে ১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগে জসীমসহ মোট আটজনকে হত্যার দায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।

গত ৮ মার্চ আপিলের রায়ে ১২ নম্বর অভিযোগ থেকে কাসেমকে খালাস দেওয়া হলেও ১১ নম্বর অভিযোগে জসীম হত্যার ঘটনায় সর্বোচ্চ সাজার রায়ই বহাল থাকে। এছাড়া আরও ছয় অভিযোগে মোট ৫৮ বছরের কারাদণ্ডের রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ।

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে সরকার নিযুক্ত প্রসিকিউটররাই মামলা পরিচালনা করেন। ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর আপিলটি হয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। সেখানে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল প্রসিকিউশনের পক্ষে যোগ দেন।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে এ মামলায় প্রসিকিউশনের আইনজীবীর তালিকায় প্রধান প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত, জেয়াদ আল মালুম, সুলতান মাহমুদ সিমন, তুরিন আফরোজ, রেজিয়া সুলতানা বেগম ও তাপস কান্তি বলের নাম রয়েছে। তবে সাক্ষ্য ও জেরায় ছিলেন জেয়াদ আল মালুম ও সুলতান মাহমুদ সিমন। মূলত সাক্ষ্য ও জেরায় তাদের ভূমিকা নিয়েই আদালতকে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে একাত্তরের গুপ্তঘাতক কুখ্যাত আলবদর বাহিনীর নেতা মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় গত ৬ জুন প্রকাশিত হয়। এরপর তা পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত ১৯ জুন আবেদন করেন মীর কাসেম।

২০১২ সালের ১৭ জুন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মীর কাসেমকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে দুটি অভিযোগে তাঁকে ফাঁসির দণ্ড ও আটটি অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর আপিল করেন মীর কাসেম। গত ৮ মার্চ আপিলের রায়ে ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামের কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসীমকে হত্যার দায়ে মীর কাসেমের ফাঁসির আদেশসহ আরও ছয়টি অভিযোগে তাঁর বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড বহাল রাখেন আদালত।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত