জাকির আজিজ

০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ২৩:৫১

কাদের থেকে কাসেম : ৬ যুদ্ধাপরাধীর দণ্ড কার্যকর

একাত্তরে গণহত্যার জন্যে ‘বাঙালি খান’ হিসেবে কুখ্যাতি পাওয়া শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী, আলবদর নেতা ও জামায়াতের অর্থের যোগানদাতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসির মধ্য দিয়ে ৬ষ্ঠ ফাঁসি কার্যকর করা হলো। বাংলাদেশের কলঙ্কমুক্তির এ ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দণ্ড কার্যকরের মাধ্যমে।

শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টা ৩৫মিনিটে কাশিমপুর কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে বলে আইজি প্রিজনস বি. জে. সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে আপিল বিভাগে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সাতটি রায়ের মধ্যে পাঁচটিতে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী,  দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, দলটির সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়।

২০১৩ সালে ১২ ডিসেম্বর রাত ১০টা ১ মিনিটে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির মধ্যদিয়ে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে প্রথম কোন যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

এরপর ২০১৫ সালের ১২ এপ্রিল রাত ১০টা ১ মিনিটে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

একই অপরাধে জামায়াত নেতা আলী আহসান মুজাহিদ ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে।

২০১৬ সালের ১১ মে রাত ১২টা ১০ মিনিটে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে একাত্তরের ভয়ংকর খুনে বাহিনী আলবদরের নেতা ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

আপিল বিভাগের আরেক রায়ে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সে রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হওয়ার পর দুই পক্ষের করা রিভিউ আবেদন এখন নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।

মীর কাসেমের আগে সর্বশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর। নিজামীর সহ ৫ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি হয় পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে। তবে মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকর হয় গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে।

এছাড়া শুনানি চলার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপিল নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।

এদিকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া দণ্ডের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছে আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোবারক হোসেন, জামায়াত নেতা রংপুরের এটিএম আজহারুল ইসলাম, পাবনার আবদুস সোবহান, জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা হবিগঞ্জের সৈয়দ মুহম্মদ কায়সার, সাবেক মুসলিম লীগ নেতা চাঁপাইনবাবগঞ্জের আফসার হোসেন চুটু ও মাহিদুর রহমান, পটুয়াখালীর ফোরকান মল্লিক, বাগেরহাটের সিরাজুল হক ওরফে কসাই সিরাজ, খান আকরাম হোসেন, নেত্রকোনার আতাউর রহমান ননী ও ওবায়দুল হক তাহের।

এ ছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারে ১০ জনের ফাঁসিসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজার আদেশ হলেও তারা বিচারের আগ থেকেই পলাতক। তারা হলো, জামায়াত নেতা আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার, আল বদর নেতা চৌধুরী মঈনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান, নগরকান্দার বিএনপি নেতা জাহিদ হোসেন ওরফে খোকন রাজাকার, পিরোজপুরের সাবেক এমপি জাতীয় পার্টির ইঞ্জিনিয়ার আবদুল জব্বার, কিশোরগঞ্জের রাজাকার সৈয়দ মো. হাসান আলী, কিশোরগঞ্জ করিমগঞ্জের ক্যাপ্টেন (অব.) নাসিরউদ্দিন, গাজী আবদুল মান্নান, হাফিজউদ্দিন ও আজহারুল ইসলাম।

এছাড়া ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন অবস্থায় মারা যায় জামায়াতের নেতা খুলনায় রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা একেএম ইউসুফ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত