সিলেটটুডে ডেস্ক

০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০১:০৯

‘চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর ছেলে থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক হন মীর কাসেম’

মীর কাসেম আলী জামায়াতের আর্থিক ভিত ছিলেন৷ তার ব্যবসা বা শিল্প প্রকারান্তরে জামায়াতেরই প্রতিষ্ঠান৷ তাই তার ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এখন এ সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ কী? তার পরিবার কি এই সম্পদ জামায়াতকে দিতে চাইবে?

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য এবং নানা সূত্র থেকে জানা যায়, ১৬টি প্রতিষ্ঠানের ৩০ হাজারেরও বেশি শেয়ার আছে মীর কাসেম ও তার পরিবারের নামে৷ ঢাকার মিরপুরের রয়েছে তার বহুতল বাড়ি৷ তার তত্ত্বাবধানে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ২০৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা৷ এ সব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ সম্পদই বিভিন্ন কোম্পানি, ট্রাস্ট ও বেসরকারি সংস্থার নামে রয়েছে৷

বৈধভাবে আয়কর রিটার্নে তার সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা৷ তবে তার সম্পদের পরিমান হাজার কোটি টাকা হবে বলে ধারণা অনেকের।

ব্যাংক, হাসপাতাল, কৃষি ব্যবসা, গণমাধ্যম, বিশ্ববিদ্যালয়, ওষুধ শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে রয়েছে তার ব্যবসা৷

যেসব ব্যবসা, আর্থিক এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানে মীর কাসেম এবং তার পরিবারের শেয়ার আছে তার মধ্যে আছে – ইসলামী ব্যাংকের ২ হাজার ১১৩টি শেয়ার, কেয়ারী লিমিটেডের ১৪ হাজার শেয়ার, কেয়ারী টেলিকমের ১০ হাজার, কেয়ারী ট্যুরস অ্যান্ড সার্ভিসেসের ১ হাজার শেয়ার, কেয়ারী ঝর্নার ২০টি, কেয়ারী তাজের পাঁচটি, কেয়ারী সানের পাঁচটি, কেয়ারী স্প্রিংয়ের ২০টি, সেভেল স্কাইয়ের ১০০, মীর আলী লিমিটেডের ২৫টি এবং দিগন্ত মাল্টিমিডিয়া লিমিটেডের ১০০টি শেয়ার৷ তিনি ছিলেন কেয়ারী লিমিটেডের চেয়ারম্যান, ইবনে সিনা ট্রাস্টের সদস্য, ইবনে সিনা হাসপাতালের পরিচালক, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক, এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রাস্টের সদস্য ও ফুয়াদ আল খতিব চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের সদস্য৷

এছাড়া ঢাকার মিরপুরের দক্ষিণ মনিপুরে বহুতল ভবন৷ মোহাম্মদপুরে একতা সোসাইটির পাঁচ কাঠা জমি ও মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে সাড়ে ১২ শতক জমি রয়েছে৷ ধানমণ্ডির বহুতল ভবন কেয়ারী প্লাজার ১৭৮ দশমিক ৬৯ বর্গমিটারের মালিক তিনি৷

ঘাতক দালাল নিমূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির দাবি করেন, ‘‘মীর কাসেমের দেশে বিদেশে ১৪ হাজার কোটি টাকার সম্পদ আছে৷ শূন্য থেকে তিনি এ সব সম্পদের মালিক হয়েছেন৷ তার বাবা ছিলেন একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী৷''
মীর কাসেম যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল করতে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছিলেন বলে জানান শাহরিয়ার কবির৷

২০১০ সালের ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রের লবিস্ট ফার্ম কেসিডি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটের সঙ্গে চুক্তি করেন মীর কাসেম আলী৷ এর উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধাপরাধের বিচার বানাচালে প্রচারণা এবং বাংলাদেশ সরকারের ওপর বিচার বন্ধে চাপ সৃষ্টি করা৷ এই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা এবং প্রধান নির্বাহী সাবেক মার্কিন কংগ্রেসম্যান মার্টি রুশো৷ চুক্তিপত্রে জামায়াতের পক্ষে মীর কাসেম আলী নিজে এবং লবিস্ট ফার্মের পক্ষে জেনারেল কাউন্সেল জে ক্যামেরুজ স্বাক্ষর করেন৷ চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি ২০১০ সালের ৬ অক্টোবর থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ছ'মাস প্রচারণা চালায়৷ চুক্তি করার এক মাসের মধ্যেই ২০১০ সালের ১৭ জুন গ্রেপ্তার করা হয় মীর কাসেম আলীকে৷ তবে প্রচারণার কাজ অব্যাহত থাকে৷ পরে এই চুক্তি নবায়নও করা হয়৷ সিটি ব্যাংক এনএর মাধ্যমে ইলেকট্রানিক মানি ট্রান্সফার করে চুক্তির প্রথম ছয় মাসের আড়াই কোটি মার্কিন ডলার ফার্মটির হিসাবে পাঠানো হয়৷

শহরিয়ার কবির বলেন, ‘‘সরকারের উচিত একটি কমিশন গঠন করে মীর কাসেম আলীর বৈধ এবং অবৈধ সম্পদের হিসাব বের করা৷ দুদক দিয়ে এটা হবে না৷ কারণ দুদক তার বিদেশের সম্পদ বা সুইস ব্যাংকে থাকা অর্থের হিসান পাবে না৷''

তিনি বলেন, ‘‘মীর কাসেমের সম্পদ জামায়াতের সম্পদ৷ আর এই অর্থ সম্পদ যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালে ব্যবহার করা হয়েছে৷ মীর কাসেমই সরাসরি ব্যবহার করেছেন ২৮০ মিলিয়ন ইউএস ডলার৷ তাই এইসব সম্পদের তালিকা করে, তা সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেয়া দরকার৷''

অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ড. শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘‘মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় মীর কাসেমের পরিবার এবং জামায়াতের মধ্যে সম্পদের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে একটি সংকট সৃষ্টি হতে পারে৷ জামায়াতও পড়তে পারে আর্থিক চাপে৷ তবে এটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে, মীর কাসেমের কাছেই জামায়াতের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান৷ তার কাছে একটি অংশ থাকতে পারে৷''
তিনি বলেন, ‘‘জামায়াত স্বাধীনতার পর নামে বেনামে অনেক ব্যবসা এবং শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়েছে৷ তাদের এটাই বড় শক্তি৷''

প্রসঙ্গত, সরকারের মধ্যে যুদ্ধাপরাধী ব্যক্তি এবং সংগঠনের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার চিন্তা-ভাবনা আছে৷ ট্রাইব্যুনাল বিভিন্ন মামলার রায়ে এরই মধ্যে জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধী সংগঠন বলে রায় দিয়েছে৷

সূত্র : ডয়চে ভেলে

আপনার মন্তব্য

আলোচিত