নিউজ ডেস্ক

০৮ এপ্রিল, ২০১৫ ১৫:৪৮

যুদ্ধাপরাধী শর্ষীনার পীরকে নিয়ে প্রতিবেদন: প্রাণনাশের হুমকিতে শওকত মিলটন

স্বরূপকাঠির মানুষের কাছে একাত্তরের মূর্তিমান আতঙ্ক শর্ষীনার পীর আবু জাফর সালেহকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রাণনাশের হুমকিতে তেজগাঁও থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন এটিএন বাংলার অতিরিক্ত প্রধান প্রতিবেদক শওকত মিলটন।

কথিত এ মাওলানা আবু জাফর সালেহ’র মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকা নিয়ে সম্প্রতি এটিএন বাংলার অতিরিক্ত প্রধান প্রতিবেদক শওকত মিল্টনের দুই পর্বের একটি ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। প্রতিবেদনটি প্রচারের পরপরই বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোনে এবং ফেসবুকে প্রাণনাশের হুমকি পান।

ধর্মের আলখেল্লা গায়ে জড়িয়ে এতদিন লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিলেন শর্ষীনার পীর আবু জাফর সালেহ। একাত্তরে পেয়ারা বাগান এলাকার মূর্তিমান আতংক ছিল শর্ষীণার পীর খ্যাত এই কথিত পীর।

পাকিস্তানীদের আশীর্বাদপুষ্ট এই পীরের অনূসারীরা পেয়ারা বাগানে আশ্রয় নেওয়া সাধারণ মানুষের ওপর চালাত নির্মম নির্যাতন। মাওলানা আবু জাফর সালেহ সে সময় ফতোয়া দিয়েছিলেন হিন্দু নারীরা গণীমাতের মাল, তাদের ধর্ষণ করা জায়েজ।

মুক্তিযুদ্ধের পর গ্রেফতার হলেও আজ পর্যন্ত এই পীর পরিবার একাত্তরের কর্মকান্ডের জন্য ভুল স্বীকার করেননি। এরপর জেল থেকে বেরিয়ে এসে জিয়াউর রহমান সরকারের সময়ে তাকে দেওয়া হয় স্বাধীনতা পদক।

এ নিয়ে প্রতিবেদক শওকত লিটনের দুই পর্বের একটি ধারাবাহিক প্রচারিত হয় এটিএন বাংলায়।

জাতীয় গ্রণ্থাগারে সংরক্ষিত বিভিন্ন বই ও দলিলপত্রেও যুদ্ধকালীন সময়ে তার বর্বরতার প্রমাণ মেলে। ১৯৭২ সালের ৫ ই জানুয়ারী দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘গণহত্যার ভিন্ন নায়ক শর্ষীনার পীর গ্রেফতার’ র্শীর্ষক প্রতিবেদনের উল্লেখ করে একাত্তরের ঘাতক দালালেরা কে কোথায় বইতে বলা হয়, সে সময় শর্ষীনার ৫ শতাধিক তায়েবে এলেম প্রায় ৩০ টি গ্রামে হামলা চালায় এবং বাড়ি ঘর ও বাজার লুট করে কয়েককোটি টাকার সোনা লুট করে যেগুলো পীর সাহেবের কাছে তুলে দেয়া হয়।

এ বইতে বলা আছে কিভাবে পীরের নির্দেশে ইন্দেরহাট বাজার জালিয়ে দেয়া হয়, লুটপাট চালানো হয়। তার সহায়তায় আশেপাশের গ্রামগুলোতে তান্ডব চালায় পাক সেনারা। এছাড়া তার আরো নির্যাতনের প্রমান পাওয়া যায় মুক্তিযুদ্ধের দলিলখন্ডগুলোতে।

আবু জাফর সালেহ ও তার বাহিনীর নির্মম অত্যাচারের কারণে সে এলাকাটি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ‘ক্যানটনমেন্ট’ নামে পরিচিতি পেয়েছিল। এখানেই মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষদের ধরে এনে নির্যাতন চালানো হতো। সেসময় অনেক চেষ্টা করেও পীরের দুর্গের পতন ঘটাতে পারেন নি মুক্তিযোদ্ধারা। তবে যুদ্ধের শেষে আত্নসমর্পণ করে কিছুদিন গৃহবন্দী ও জেলে কাটান তিনি।

পঁচাত্তরের বিয়োগান্তক ঘটনাগুলোর পর ছাড়া পেয়ে যান তিনি। ১৯৮০ সালে জিয়াউর রহমান সরকার শিক্ষা বিস্তারে অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ তারে স্বাধীনতা পদক দেয়। শর্ষীনা পীরের সিপাহশালার ঘাতক কুলের অন্যতম ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাতা রাজাকার মাওলানা মান্নানের তৎপরতায় এ পদক দেয়া হয় বলে প্রচারণা রয়েছে।

স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি বিরোধিতার ভূমিকা থাকা সত্বেও কিভাবে তিনি এখনো সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন? জিয়ার মৃত্যুর পর স্বৈরশাসক এরশাদ নিয়মিত যাতায়ত শুরু করেন এই পীরের মাজারে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলেরও নেতাদের সাথেও রয়েছে তার সখ্য।

এদিকে এটিএনবাংলায় দুই পর্বের প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রতিবেদক শওকত মিলটন আছেন প্রাণনাশের হুমকিতে। থানায় এ নিয়ে সাধারণ ডায়েরি লিপিবদ্ধ করলেও তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন অনেকেই। 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত