নিউজ ডেস্ক

২২ এপ্রিল, ২০১৫ ১৪:০৬

মানবতাবিরোধী অপরাধ: মাহিদুর ও আফসারের রায় যে কোনো দিন

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুর মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। যে কোনো দিন এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল বুধবার (২২ এপ্রিল) উভয় পক্ষের যক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।

আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন এডভোকেট মিজানুল ইসলাম ও এডভোকেট আবদুস সোবহান তরফদার। রাষ্ট্র পক্ষে প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান।

গত ২৭ জানুয়ারি থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত মাহিদুর ও আফসারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) জেডএম আলতাফুর রহমানসহ প্রসিকিউশনের মোট ১০ জন সাক্ষী। তবে মাহিদুর ও আফসারের পক্ষে কোনো সাফাই সাক্ষী ছিল না।

এর আগে মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে গত বছর ১ ডিসেম্বর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। তাদের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠানিক অভিযোগ গত ২৪ নভেম্বর আমলে নিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুর বিরুদ্ধে গত ১৬ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন।

ওইদিন তাদেরকে মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় আটক দেখানোর জন্য প্রসিকিউশন আবেদন করেছিল। ২৪ নভেম্বর এ আবেদন মঞ্জুর করে ট্রাইব্যুনাল। তিনটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মাহিদুর রহমান ও মো. আফসার হোসেন চুটুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

মাহিদুর-আফসারের বিরুদ্ধে তিন অভিযোগ
মাহিদুর ও আফসারের বিরুদ্ধে তিনটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে মো. মাহিদুর রহমান এবং মো. আফসার হোসেন চুটু বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে অস্বীকার করে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য সশস্ত্র রাজাকার বাহিনীতে যোগদান করেন।

রাজাকার বাহিনীর প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর তারা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার আদিনা ফজলুল হক ডিগ্রি কলেজ দখল করে সেখানে রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করেন। এরপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থেকে ওই এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরসহ নানা মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন।

প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৬ অক্টোবর সকাল ছয়টা থেকে পরদিন ৭ অক্টোবর সন্ধ্যা পর্যন্ত মো. মাহিদুর রহমান ও মো. আফসার হোসেন চুটুর সহযোগিতায় রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবপুর থানার চাঁদশিকারী, চামাটোলা, বিনোদপুর উচ্চ বিদ্যালয়, চাঁদশিকারী গ্রাম থেকে ২০০ গজ পশ্চিমে ফিরোজের আম বাগান এবং কবিরাজটোলায় যৌথ আক্রমণ চালায়। তারা এসব গ্রামের ৩৯ জনকে আটক করে। কাউকে কাউকে অপহরণ করে। এক পর্যায়ে নির্যাতনের পর ৩৯ জনের মধ্য থেকে ২৪ জনকে হত্যা করে।

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবর দুপর একটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মো. মাহিদুর রহমান ও মো. আফসার হোসেন চুটুর সহযোগিতায় রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবপুর থানার এরাদত বিশ্বাসের টোলা এবং কবিরাজটোলা গ্রামে যৌথ আক্রমণ চালায়। এদিন তারা এ দুই গ্রামের ৭০টি বাড়িতে লুণ্ঠনের পর অগ্নিসংযোগ করে।

তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২ নভেম্বর দুপর দুইটা থেকে পরদিন ৩ নভেম্বর রাত পর্যন্ত মো. মাহিদুর রহমান ও মো. আফসার হোসেন চুটুর সহযোগিতায় রাজাকার বাহিনী আক্রমণ চালিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার শেরপুর ভাণ্ডার (লক্ষীপুর), আদিনা ফজলুল হক ডিগ্রি কলেজ, শিবগঞ্জ সিও ডেভ অফিস এবং উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন ইয়াকুব বিশ্বাসের আমবাগান এলাকার চার জনকে অপহরণ করে আটকের পর নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে। এছাড়াও বিভিন্ন বাড়ি-ঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত