ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

২৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ২১:০৩

মুক্তিযোদ্ধার সনদ আছে, তবু তালিকায় নাম নেই নন্দ দুলাল সাহার

ঝিনাইদহ সদর থানার সামনে মৃত জগন্নাথ সাহার ছেলে নন্দ দুলাল সাহা (৮১)। ১৯৫২ সালে তিনি ৮ম শ্রেণীতে পড়াকালীন সময়ে দেশ যখন 'রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই' দাবিতে উত্তাল, তখন নন্দ দুলাল সাহা সহ ঝিনাইদহের ১৫/১৬ জন কিশোর-তরুণ রাজপথে বের হয়েছিলেন মিছিল নিয়ে। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী তাঁদের রুখে দিতে পারেনি। সেই নন্দ দুলাল সাহা আবার স্থির থাকতে পারেননি ১৯৭১ সালে বাঙ্গালি জাতির মুক্তির সংগ্রামে। তিনি জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।

১৯৭১ সালে বিষয়খালী, গাড়াগঞ্জের যুদ্ধে তাঁর ছিল সরাসরি অংশ গ্রহণ। দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে ঝিনাইদহ কেসি কলেজে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। তিনি সেখান থেকে ৭ দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তারপর তিনি ভারতে যাওয়ার পথে সীমান্তে পাক হানাদার বাহিনীর কবলে পড়ে হাতে গুলিবিদ্ধ হন। যার কারণে ভারতের কল্যাণী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকায় প্রশিক্ষণ নিতে পারেন নি। ১৯৭১ সালে তাঁকে কয়েকবার রাজাকারেরা হত্যার জন্য চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ঝিনাইদহের আরাপপুরে ৩ জন পাক সেনা ধরেন এবং পরে তাঁদের মধ্য থেকে একজনকে পাক সেনাকে হত্যা করেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।

মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ঝিনাইদহের গন মিলিশিয়া ক্যাম্পে অস্ত্র জমা দেন। অস্ত্র জমা দেওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার তাঁকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সনদ প্রদান করেন। কিন্ত মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সনদ থাকার পরও বর্তমান সরকারের তৈরি করা মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় তাঁর নাম নেই। সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নতুন করে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে গেলে তাঁকে বলা হয়- অনলাইন তালিকায় তাঁর নাম আসেনি, তাই তাঁকে আবেদনপত্র দেওয়া সম্ভব না।

এ প্রসঙ্গে নন্দ দুলাল সাহা জানান, আমি নিয়মনীতি মেনে অনলাইনে আবেদন করেছি। কেন তালিকায় নাম নেই, তা আমার জানা নেই।

বর্তমানে এই ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা ঝিনাইদহের বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত আছেন। তিনি ঝিনাইদহ থিয়েটারের উপদেষ্টা ও প্রবীণ হিতৈষী সংঘের সদস্য। তিনি একাধারে একজন ক্রীড়াবিদ, সাহিত্য পরিষদের সদস্য, নবীন সমিতির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক, রেডিও ঝিনুকের নিয়মিত গীতা পাঠক, নবগঙ্গা উন্নয়ন কমিটির সহ সভাপতি, জেলা অটো-মাহেন্দ্র মালিক সমিতির উপদেষ্টা ও সোনালি ক্লাবের উপদেষ্টা।

তাঁকে বিভিন্ন সময়ে ঝিনাইদহের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পদক/ক্রেস্ট উপহার দিয়েছে। ঝিনাইদহ থিয়েটার তাকে যাত্রা জগতের মঞ্চ প্রদীপ বলে আখ্যায়িত করেছে। তিনি কবি ও লেখক হিসাবে ঝিনাইদহের সর্বত্র সুপরিচিত।

মুক্তিযোদ্ধায় তালিকায় নন্দ দুলালের নাম না থাকা প্রসঙ্গে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, তাঁর নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় আসবে কি আসবে না সেটা ঠিক করবে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়। আমরা নাম পাঠিয়ে দিয়েছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত