জাকির আজিজ চৌধুরী

০৮ জানুয়ারি, ২০১৫ ১৯:২৬

কামারুজ্জামানের চুড়ান্ত রায় প্রকাশে দীর্ঘসূত্রিতা: বাড়ছে ক্ষোভ

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে প্রমাণিত রাজাকার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের আপীলের রায় প্রকাশ না হওয়ায় বাড়ছে ক্ষোভ আর হতাশা। 


গত বছরের ৩ নভেম্বর আপীলের রায়ে যুদ্ধাপরাধি কামারুজ্জামানের ফাঁসি বহাল রাখে আপীল বিভাগ। এর আগে ২০১৩ সালের ৯ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে প্রাথমিক রায়ে ফাঁসি ঘোষিত হয়। আপীলের রায় ঘোষণার পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং এর্টণি জেনারেল মাহবুবে আলম অবিলম্বে রায় কার্যকর হবে বলে জানান।  



আপীল বিভাগের চুড়ান্ত রায়ের পর কামারুজ্জামানকে কাশীমপুর কারাগার থেকে ঢাকা নিয়ে আসা হয়। কারা অভ্যন্তরে চলে ফাঁসির মহড়া। এরকম পরিস্থিতিতে কামারুজ্জামানের পরিবার ও তাদের আইনজীবিরা সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি সমিতি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে রিভিউয়ের সুযোগ আছে বলে জানায়।



২৫ নভেম্বর, ২০১৪ মঙ্গলবার প্র্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ কাদের মোল্লার রিভিউ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছেন। অপর বিচারপতিরা হচ্ছেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।



রিভিউ খারিজের এই পূর্ণাঙ্গ রায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে মামলায় আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, আপিল বিভাগের পূর্নাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন করা যাবে।



এই রায়ে বলা হয়েছে, ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে দণ্ডিতদের ক্ষেত্রেও আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন গ্রহণযোগ্য (মেনটেইনেবল) হবে। তবে তা আপিলের সমকক্ষ হবে না। সাধারণ মামলার ক্ষেত্রে রিভিউয়ের জন্য ৩০ দিন সময় দেওয়া হলেও এ আইনের মামলায় তা প্রযোজ্য হবে না। ১৯৭৩ সালের এই আইনের অধীনে আপিলের রিভিউয়ের সময় হবে ১৫দিন।

 



ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় আপিল বিভাগ বহাল রাখলে এবং আসামিপক্ষ পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে তার নিষ্পত্তি হওয়ার আগে দণ্ড কার্যকর করা যাবে না।

 


আপিল বিভাগের সর্বোচ্চ সাজার আদেশে বিচারিক আদালত (ট্রাইব্যুনাল) মৃত্যু পরোয়ানা পাঠালে আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারবেন। তিনি স্বজনদের সঙ্গে দেখাও করতে পারবেন।

 



তবে প্রাণভিক্ষার আবেদনের ক্ষেত্রে কারাবিধিতে উল্লেখিত ৭ বা ২১ দিনের সময়সীমা প্রযোজ্য হবে না।

 



এদিকে আপীল বিভাগে চুড়ান্ত রায়ের দুই মাস পার হয়ে গেলেও এখনও প্রকাশ হয়নি যুদ্ধাপরাধি কামারুজ্জামানের আপীলের চুড়ান্ত রায়। কবে নাগাদ এই রায় প্রকাশ হতে পারে এ নিয়ে কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ফলে ঝুলে গেছে রিভিউ পরবর্তি কার্যকরের বিষয়টিও।



আপীলের রায়ের পর রিভিউয়ের সুযোগ, সময়, শুনানিজনিত দীর্ঘসূত্রিতার কবলে পড়েছে মানবতাবিরোধি অপরাধের বিচার। আপীলের রায় ষাট দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির কথা থাকলেও এর জন্যে লেগে যাচ্ছে বছরাধিক সময়। রায় ঘোষণার পরেও রায় প্রকাশ নিয়েও চলছে দীর্ঘসূত্রিতা ফলে বিচারিক প্রক্রিয়া দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।    



এদিকে রাজাকার কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকরের দাবিতে মাঠে নেমেছে গণজাগরণ মঞ্চের ইমরান এইচ সরকার অংশ। তারা প্রতি শুক্রবার শাহবাগে চার ঘন্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে ২ জানুয়ারি থেকে। ফাঁসি কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত এই কর্মসূচি চলবে বলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত