নিজস্ব প্রতিবেদক

০৭ মার্চ, ২০১৭ ২০:৪৭

দেশত্যাগে বাধ্য করাকে ‘জেনোসাইড’ স্বীকৃতির আবেদন তুরিনের

যুদ্ধকালীন ধর্ষণ, জোরপূর্বক ধর্মান্তরিতকরণ ও দেশত্যাগে বাধ্য করাকে জেনোসাইড (গণহত্যা) উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হয়েছে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্ষণ ও জোরপূর্বক ধর্মান্তরিতকরণ ও দেশত্যাগে বাধ্য করাকে জেনোসাইড উল্লেখ করে এমন বক্তব্য উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ।

মঙ্গলবার (৭ মার্চ) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কিশোরগঞ্জের সৈয়দ মো. হোসাইন ও মো. মোসলেম প্রধানের মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে পৃথিবীর বিভিন্ন আদালতের রেফারেন্স দিয়ে ধর্ষণ ও জোরপূর্বক ধর্মান্তরিতকরণকে জেনোসাইড হিসেবে চিহ্নিত করার আবেদন জানানো হয়েছে, একই সঙ্গে দেশত্যাগে বাধ্য করাকেও জেনোসাইড হিসেবে স্বীকৃতির আবেদন জানানো হয়েছে। এ আবেদনের মাধ্যমে এ মামলার ট্রাইব্যুনালের শুনানি শেষ হয়।

মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি- কোর্ট অ্যাওয়েটিং ভারডিক্ট) রেখেছেন চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান। মামলার আসামি মোসলেম আটক থাকলেও হোসাইন পলাতক রয়েছেন।

শুনানি শেষে তুরিন আফরোজ সাংবাদিকদের বলেন, “ধর্মান্তরকরণ ও ধর্ষণ, দেশত্যাগে বাধ্য করা ও ধর্ষণকে জেনোসাইড হিসাবে বিবেচনায় নিয়ে শাস্তির দাবি করেছি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রায়েও ধর্ষণকে জেনোসাইড হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে।"

এদিকে, ধর্ষণ ও ধর্মান্তরকরণের বাইরে দেশত্যাগে বাধ্য করাকেও জেনোসাইড হিসেবে বিবেচনা করার আবেদন জানিয়েছে প্রশিকিউশন। এ প্রসঙ্গে তুরিন আফরোজ সাংবাদিকদের বলেন, দেশত্যাগে বাধ্য করাকে জেনোসাইড হিসাবে বিবেচনা করে কোনো রায়ের দৃষ্টান্ত নেই। এই রায় পেলে সেটা দৃষ্টান্ত হবে; রায় এলে বিষয়টি উপস্থাপনে কতটা সফল হয়েছি সেটা বুঝতে পারব বলে জানান তুরিন।

এর আগে গত বছরের ৯ মে দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হরি দেবনাথ ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ ৯ মাস ২৫ দিন তাদের অপরাধের তদন্ত করেন। তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে মূল একশ’ ৬১ পৃষ্ঠার সঙ্গে সর্বমোট চারশ’ ৩৯ পৃষ্ঠার নথিপত্র রয়েছে।

তাদের দুইজনের মধ্যে হোসাইনের বিরুদ্ধে ৬টি ও প্রধানের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ রয়েছে। নিকলির দামপাড়া গ্রাম ও নিকলী থানা ভবন, সদরের মহাশশ্মান এলাকায় ৭১ সালের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হোসাইনের বিরুদ্ধে ছয় নারীকে ধর্ষণ, সুধীর সূত্রধরসহ ৩৫ জনকে হত্যা ও বাদল বর্মণসহ চারজনকে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া পূর্বপাড়ায় ফুল মিয়াসহ ২৬ জনকে হত্যা, মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুল মালেকের নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করে হত্যার অভিযোগ রয়েছে।

দুই আসামির মধ্যে মোসলেম প্রধানকে গ্রেপ্তার করা হলেও হোসাইন পলাতক। তিনি মালয়েশিয়ায় রয়েছেন বলে প্রসিকিউশনের তথ্য।

২০১৪ সালের ৭ জুলাই তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেন আদালত।

হোসাইনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হলেও মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি কিশোরগঞ্জে ছিলেন। মোসলেম কিশোরগঞ্জের নিকলি থানার বাসিন্দা। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ নিকলিতে।

হোসাইন ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক সৈয়দ মো. হাসান ওরফে হাছেন আলীর ছোটভাই। ২০১৫ সালের গত ৯ জুন ফাঁসিতে ঝুলিয়ে বা গুলি করে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত