নিউজ ডেস্ক

১৯ মে, ২০১৫ ১১:৫৪

যুদ্ধাপরাধী মাহিদুর-আফসারের রায় বুধবার

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের মাহিদুর রহমান এবং আফসার হোসেন চুটুর মামলার রায় ঘোষণা করা হবে বুধবার (২০ মে)।

মঙ্গলবার (১৯ মে) রায়ের এ দিন ধার্য করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণা করবেন। গত ২২ এপ্রিল মাহিদুর-আফসারের মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হওয়ায় রায় ঘোষণা অপেক্ষমান (সিএভি) রাখেন ট্রাইব্যুনাল।

গত ২২ এপ্রিল মাহিদুর-আফসারের পক্ষে যুক্তিতর্ক(আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন করেন তাদের আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার। অন্যদিকে গত ১৫ ও ২০ এপ্রিল মাহিদুর-আফসারের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান।

গত ২৭ জানুয়ারি থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত মাহিদুর-আফসারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা জেডএম আলতাফুর রহমানসহ রাষ্ট্রপক্ষের মোট ১০ জন সাক্ষী। অন্যরা হচ্ছেন- মোঃ আহসান হাবীব, মোঃ মহিবুল হক, রইস উদ্দিন, জাকারিয়া, মোঃ মোখলেসুর রহমান, মোঃ ফসি আলম সান্টু, মোঃ খুদি, মহসীন আলী ও দাউদ হোসেন। অন্যদিকে মাহিদুর-আফসারের পক্ষে কোনো সাফাই সাক্ষী ছিলেন না।

গত ১২ জানুয়ারি মাহিদুর-আফসারের বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান।

১১ ডিসেম্বর, ২০১৪ তিনটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মাহিদুর রহমান ও মো. আফসার হোসেন চুটুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে ১ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠনের পক্ষে প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান ও বিপক্ষে শুনানি করেন তাদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম।

গত বছরের ২৪ নভেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে (শ্যোন অ্যারেস্ট) মাহিদুর-আফসারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ১৬ নভেম্বর এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান।

এ দু’জনের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৭ অক্টোবর তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন তদন্ত সংস্থা। পরদিন ২৮ অক্টোবর তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেওয়া হয়। এর ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ তৈরি করে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন প্রসিকিউশন।

এ মামলার তদন্ত শুরু হয় গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি। তদন্ত শেষে ৭ খণ্ডে ৯৫৬ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর স্কুল মাঠে ও এর আশেপাশে সংঘটিত গণহত্যার ঘটনায় ২০১৩ সালে মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুসহ ১২ জনকে আসামি করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আদালতে একটি মামলা হয়। মামলাটি করেন গণহত্যার শিকার শহীদ পরিবারের সদস্য শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের পারচৌকা গ্রামের বদিউর রহমান বুদ্ধু।

গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর ইউনিয়নের দাদনচক গ্রামের মাহিদুর রহমান ও বিনোদপুর ইউনিয়নের সাতরশিয়া গ্রামের আফসার হোসেন চুটুকে যার যার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

মাহিদুর-আফসারের বিরুদ্ধে তিন অভিযোগ মাহিদুর ও আফসারের বিরুদ্ধে তিনটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে মো. মাহিদুর রহমান এবং মো. আফসার হোসেন চুটু বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে অস্বীকার করে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য সশস্ত্র রাজাকার বাহিনীতে যোগদান করেন।

রাজাকার বাহিনীর প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর তারা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার আদিনা ফজলুল হক ডিগ্রি কলেজ দখল করে সেখানে রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করেন। এরপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থেকে ওই এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরসহ নানা মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন।

প্রথম অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ৬ অক্টোবর সকাল ছয়টা থেকে পরদিন ৭ অক্টোবর সন্ধ্যা পর্যন্ত মো. মাহিদুর রহমান ও মো. আফসার হোসেন চুটুর সহযোগিতায় রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবপুর থানার চাঁদশিকারী, চামাটোলা, বিনোদপুর উচ্চ বিদ্যালয়, চাঁদশিকারী গ্রাম থেকে ২০০ গজ পশ্চিমে ফিরোজের আম বাগান এবং কবিরাজটোলায় যৌথ আক্রমণ চালায়। তারা এসব গ্রামের ৩৯ জনকে আটক করে। কাউকে কাউকে অপহরণ করে। এক পর্যায়ে নির্যাতনের পর ৩৯ জনের মধ্য থেকে ২৪ জনকে হত্যা করে।

দ্বিতীয় অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবর দুপর একটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মো. মাহিদুর রহমান ও মো. আফসার হোসেন চুটুর সহযোগিতায় রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবপুর থানার এরাদত বিশ্বাসের টোলা এবং কবিরাজটোলা গ্রামে যৌথ আক্রমণ চালায়। এদিন তারা এ দুই গ্রামের ৭০টি বাড়িতে লুণ্ঠনের পর অগ্নিসংযোগ করে।

তৃতীয় অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ২ নভেম্বর দুপর দুইটা থেকে পরদিন ৩ নভেম্বর রাত পর্যন্ত মো. মাহিদুর রহমান ও মো. আফসার হোসেন চুটুর সহযোগিতায় রাজাকার বাহিনী আক্রমণ চালিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার শেরপুর ভাণ্ডার (লক্ষীপুর), আদিনা ফজলুল হক ডিগ্রি কলেজ, শিবগঞ্জ সিও ডেভ অফিস এবং উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন ইয়াকুব বিশ্বাসের আমবাগান এলাকার চার জনকে অপহরণ করে আটকের পর নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে। এছাড়াও বিভিন্ন বাড়ি-ঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত