নিউজ ডেস্ক

২০ মে, ২০১৫ ১৭:৫৯

রায়ে সন্তুষ্ট নয় শহীদ পরিবার: আলতাফুরকে উদ্দেশ করে ‘অযোগ্য’ বললেন ট্রাইব্যুনাল

চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজাকার মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে শহীদ পরিবারগুলো। তারা আপিলের কথা জানিয়েছে। এদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেড এম আলতাফুর রহমানকে উদ্দেশ করে তাঁকে অযোগ্য বলে আখ্যা দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

বুধবার (২০ মে) এ মামলার রায় ঘোষণার সময় ট্রাইব্যুনাল এমন মন্তব্য করেন। রায়ের একটা বড় অংশজুড়ে তার 'অদক্ষতার' বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরা হয়। এই প্রথমবার কোনও তদন্ত কর্মকর্তাকে অদক্ষ বলে নথিভুক্ত করা হলো।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় শিবগঞ্জে হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে এ দুই রাজাকারকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।

বুধবার রায় ঘোষণার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুরে এ দুই জনের ফাঁসি দাবি করে মিছিল করেছে এলাকার লোকজন।

শিবগঞ্জের মনাকষা ইউনিয়নের পারচৌকা গ্রামের বদিউর রহমান বুদ্ধ ও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা জানান, ৩৯ জনকে হত্যার অভিযোগে আফসার হোসেন চুটু ও মাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন বদিউর রহমান বুদ্ধু। পরবর্তীতে মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে স্থানান্তরিত হয়।

মামলার রায়ে বাদী বদিউর রহমান বুদ্ধু অসন্তোষ প্রকাশ করে জানান, ১৯৭১ সালের অগাস্ট মাসে আফসার হোসেন চুটু ও মাহিদুর রহমানের নেতৃত্বে রাজাকাররা ১৫ জনকে এবং ৬ ও ৭ অক্টোবর বিনোদপুর উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠে ৪৮ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ মাটিতে পুঁতে রাখে। এদের মধ্যে মামলার বাদী বদিউর রহমান বুদ্ধুর পিতাও ছিলেন। ওই সময় তাদের নেতৃত্বে এলাকায় ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগও করা হয়।

বিনোদপুর ইউনিয়নের লছমনপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্য মশিউর রহমান বাচ্চু বলেন, এতগুলো মানুষ হত্যার অপরাধে এই দুই রাজাকারের মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত ছিল।
মামলার রায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এই দুইজনের মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে আর কোনও তদন্তের দায়িত্ব না দিতেও বলেছেন ট্রাইব্যুনাল। এই মামলায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তাকে জবাবদিহি করতে হবে বলেও উল্লেখ করা হয় রায়ের পর্যবেক্ষণে।

মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যার মতো সংবেদনশীল বিষয়ে তদন্তকে বিতর্কের উর্ধ্বে রাখতে এ-সংক্রান্ত আর কোনও মামলায় এধরনের পুলিশ কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে আসা প্রসিকিউশনের কোনও মামলার তদন্তভার না দেওয়াটা যুক্তিসঙ্গত হবে বলে ট্রাইব্যুনাল তাদের সিদ্ধান্তে জানান।

এদিকে রায়ের পরপর এই মামলার তদন্তে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তার জেড এম আলতাফুর রহমানের কোনও অদক্ষতা আছে কিনা বা দায়িত্ব পালনে অবহেলা ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখার কথা বলেছেন তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান। রায়ের সংক্ষিপ্ত অংশ পাঠের মাঝখানে ট্রাইব্যুনাল এসব মন্তব্য করেন।

ট্রাইব্যুনাল বলেন, এ মামলার দুই আসামির বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছিল। এর মধ্যে তৃতীয় অভিযোগ ছিল দালাল আইনে। আসামিদের বিরুদ্ধে আগেই দালাল আইনে মামলা হয়েছে। বিচারিক কাজ শেষে তারা যাবজ্জীবন সাজাও ভোগ করেন।

একই ধরণের অভিযোগে তাদের এই সাজা পাওয়ার বিষয়টি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের সময় ধরা পড়ে। একই অভিযোগে দ্বিতীয়বার অভিযুক্ত করায় এটিকে রাষ্ট্রপক্ষ মামলা থেকে বাদ দেয়। ট্রাইব্যুনাল মনে করেন তদন্ত কর্মকর্তার ব্যর্থতায় এমনটা ঘটেছে। তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে তিনি অযোগ্য।

উক্ত তদন্ত কর্মকর্তা তার জেরায় বলেন, মো. লায়েছ উদ্দিন তার পিতা এবং নিকট আত্মীয়দের হত্যার বিষয়ে বাদী হয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল মর্মে তদন্তে আমাকে বলেছিল। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে সংশ্লিষ্ট মামলার নম্বর ও ফলাফল সম্পর্কে কিছু বলতে না পারায় আমি লিপিবদ্ধ করতে পারিনি।

তিনি আরও বলেন, শিবগঞ্জ থানা ডাকবাংলোটি শিবগঞ্জ থানা কমপ্লেক্স থেকে আনুমানিক ৫০ গজ দূরে এবং আমি মামলা সম্পর্কে শিবগঞ্জ থানায় খোঁজ নিয়েছিলাম কিন্তু তথ্যসংক্রান্ত কোনও নথি পাইনি।

এদিকে, তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান বলেন, বিভিন্ন সমস্যার মধ্য দিয়ে আমাদের তদন্ত করতে হয়। যেহেতু ঘটনা অনেক বছর আগের তাই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে নথিপত্র সংগ্রহে সমস্যা হয়। তদন্ত করতে গিয়ে আমরা দেখেছি, মামলাসংক্রান্ত কাগজপত্র যেখানে থাকার কথা সেখানে পাওয়া যায়নি। অনেক ক্ষেত্রে সংরক্ষণই করা হয়নি।

তবে তিনি এও বলেন, আমরা মোটেই মামলাটি নষ্ট হয়েছে বলে মনে করছি না। তাহলে তিন অভিযোগের দুটি প্রমাণ হতো না। তৃতীয় অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা আসলে কি ভেবেছিলেন সেটা খতিয়ে দেখা হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত