সিলেটটুডে ডেস্ক

০৯ জুন, ২০১৫ ১৩:১৯

যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি কার্যকরে ফায়ারিং স্কোয়াডে গুলির সুযোগ!

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পলাতক যুদ্ধাপরাধী হাসান আলীর মামলার রায় ও পর্যবেক্ষণে বলেছেন সরকার চাইলে গ্রেফতারের পর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে অথবা ফায়ারিং স্কোয়াডে নিয়ে গুলি করে শাস্তি কার্যকর করতে পারে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাদের ১৯তম মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ও পর্যবেক্ষণে এই প্রথম কোন যুদ্ধাপরাধীর রায় কার্যকরে ফায়ারিং স্কোয়াডে নিয়ে যাওয়ার পর গুলি করে রায় কার্যকর করার কথা বলেছেন।

ট্রাইব্যুনাল বলেছেন, সরকার ইচ্ছা করলে হাসান আলীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে অথবা তাকে গ্রেফতার করার পর গুলি করে (ফায়ারিং স্কোয়াড) হত্যার মধ্য দিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করতে পারে।

ট্রাইব্যুনাল মামলা চলাকালীন সময়ে অপরাধীকে গ্রেফতার করতে না পারায় উষ্মা প্রকাশ করে বলেন- আসামীদের গ্রেফতারে সরকারকে আরও আন্তরিক হতে হবে।  কিশোরগঞ্জের 'রাজাকার দারোগা'র হাসান আলী পলাতক রয়েছেন।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কিশোরগঞ্জের ‘রাজাকার দারোগা’ পলাতক হাসান আলী ওরফে হাছেন আলীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একাত্তরে কিশোরগঞ্জে ২৪ জনকে হত্যাসহ অপহরণ, আটক, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগে ৬টি অভিযোগের মধ্যে ৫টি প্রমাণিত হওয়ায় তাকে এ সাজা দেন ট্রাইব্যুনাল।

চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১ আজ মঙ্গলবার হাসান আলীর অনুপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি বিচারপতি আনোয়ারুল হক ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন।

মঙ্গলবার বেলা ১১টায় এজলাসে আসন নেন ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা। ১২৫ পৃষ্ঠার রায়ের সংক্ষিপ্তসার পাঠ করে শোনান বিচারপতিরা।

হাসান আলীর বিরুদ্ধে আনা ছয়টি অভিযোগের মধ্যে এক নম্বর অভিযোগ ছাড়া বাকি ৫টি প্রমাণিত হয়েছে। প্রমাণিত অভিযোগগুলো হচ্ছে-

অভিযোগ ২- মুক্তিযুদ্ধকালে ২৩ অগাস্ট হাসান আলীর নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা তাড়াইল থানাধীন কোনাভাওয়াল গ্রামের শহীদ তোফাজ্জল হোসেন ভূঁইয়া ওরফে লালু ভূঁইয়াকে হত্যা করে দুটি ঘরে লুটপাট চালানো হয় এবং আরও দুজনকে অপহরণ ও আটক করা হয়।

অভিযোগ ৩- মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৯ সেপ্টেম্বর তাড়াইল থানার শিমুলহাটি গ্রামের পালপাড়ায় ১২ জনকে হত্যা এবং ১০টি ঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ।

অভিযোগ ৪- আসামি হাসান আলী ১৯৭১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তাড়াইল থানাধীন ভোরগাঁও গ্রামের সতীশ ঘোষসহ ৮ জনকে হত্যা, ১০ জনকে অপহরণ এবং ২৫ হাজার টাকার মালামাল লুটপাটে নেতৃত্ব দেন।

অভিযোগ ৫- এরপর ৮ অক্টোবর তাড়াইল থানাধীন আড়াইউড়া গ্রামের কামিনী কুমার ঘোষের বসতবাড়ি থেকে কামিনী কুমার ঘোষ ও জীবন চক্রবর্তীকে অপহরণের পরে হত্যা এবং ছয়টি ঘরে লুটপাট চালায় হাসান আলীর লোকজন।

অভিযোগ ৬- মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাত্র পাঁচদিন আগে ১১ ডিসেম্বর হাসান আলীর নেতৃত্বে তাড়াইল থানাধীন সাচাইল গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় রাশিদ আলী ব্যাপারীকে হত্যা এবং একশ ঘরে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

প্রমাণিত না হওয়া ১ নং অভিযোগটি হলো, একাত্তরের ২৭ এপ্রিল আসামির নির্দেশে তাড়াইল থানাধীন সাচাইল গ্রামের পূর্বপাড়ার হাছান আহমদ ওরফে হাচু ব্যাপারীর বসতবাড়ির সাতটি ঘরে লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ করে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা।

এর আগে দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে গত ২০ এপ্রিল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকে এটি হবে ১৯তম রায়। গত বছর ১১ নভেম্বর হাসান আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার কাজ শুরু হয়েছিল এবং আসামির অনুপস্থিতিতেই এ মামলার কার্যক্রম চলেছে। রাষ্ট্র কর্তৃক আসামির জন্য আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর আবুল কালাম আজাদ।

গত বছর ২১ অগাস্ট হাসান আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল হওয়ার তিনদিন পর ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নেয়। এরপর আসামির বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারির পরও পুলিশ হাসান আলীকে গ্রেফতার করতে না পারায় আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। তাতেও তিনি হাজির না হওয়ায় বিচারক আসামির অনুপস্থিতিতেই বিচারিক কার্যক্রম চালানোর আদেশ দেন।

হাসান আলীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় কিশোরগঞ্জের তাড়াইল থানার রাজাকার কমান্ডার ছিলেন তিনি। ওই এলাকায় তিনি পরিচিত ছিলেন ‘রাজাকারের দারোগা’ ও ‘রাজাকার ওসি’ হিসেবে। সাক্ষীরা সবাই এই অভিযোগের সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন। তদন্তে বেরিয়ে আসে সৈয়দ হাসান আলীর বাবা সৈয়দ মুসলেহ উদ্দিন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এবং কিশোরগঞ্জ মহকুমা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন।

 তদন্ত সংস্থা বলছে, হাসান আলী তার সহযোগীদের নিয়ে তাড়াইল থানার বিভিন্ন এলাকা এবং কিশোরগঞ্জে নির্যাতন, হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, জোর করে অর্থ আদায় ও ধর্মানন্তরিত করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটান। তার নির্দেশেই তাড়াইলে হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত হয়। এছাড়া হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িঘর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগেও তিনি সরাসরি জড়িত ছিলেন।

১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী হাসার আলীর সহযোগিতায় কিশোরগঞ্জের তাড়াইল থানা সদর দখল করে ক্যাম্প বসায়। পরে তিনি কিশোরগঞ্জ মহকুমার তাড়াইল থানায় রাজাকার কমান্ডার হিসেবে নিয়োজিত হন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত