সিলেটটুডে ডেস্ক

১৬ জুন, ২০১৫ ০৯:১৩

চুড়ান্ত রায়ে যুদ্ধাপরাধী আল-বদর নেতা মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল

মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের আপিল আবেদন খারিজ করে  মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখেছেন সু্প্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে সাবেক কোন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দেওয়া যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে প্রথম ফাঁসির চুড়ান্ত রায়। মুজাহিদ ছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী। 

মঙ্গলবার (১৬ জুন) প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগ এ রায় দেন। মানবতাবিরোধী অপরাধে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। ট্রাইব্যুনালের এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন মুজাহিদ। তবে সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় আপিল করেননি রাষ্ট্রপক্ষ।

সুপ্রিম কোর্ট এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর ১৫ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে পারবে আসামিপক্ষ। তবে রায়ের নির্ভরযোগ্যতায় ‘খাদ আছে’ বা ‘বিচার-বিভ্রাটের’ আশঙ্কা আছে বলে মনে করলেই আদালত তা পুনর্বিবেচনার জন্য গ্রহণ করবে।  রিভিউ যে আপিলের সমকক্ষ হবে না, তা যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ‘রিভিউ’ খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায়েই স্পষ্ট করা হয়েছে।

রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি হয়ে গেলে এবং তাতে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে আসামিকে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ দেওয়া হবে। তিনি স্বজনদের সঙ্গে দেখাও করতে পারবেন। রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়টি ফয়সালা হয়ে গেলে সরকার কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে। 

বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার এটা প্রথম রায়। ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরুর পর এটি চতুর্থ মামলা, যার আপিল নিষ্পত্তি হলো আজ।

৬ ও ৭ নম্বর অভিযোগে এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মুজাহিদকে ফাঁসি দিয়েছিলেন। তবে আপিল বিভাগ শুধু ৬ নম্বর অর্থাৎ বুদ্ধিজীবী হত্যার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। আর ৭ নম্বর অভিযোগে তাকে আমৃত্যুকারাদণ্ড দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এছাড়া ১ ও ৪ নম্বর অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

৩ নম্বর অভিযোগে আগেই ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। সেই সাজা আপিল বিভাগও বহাল রেখেছেন। ৫ নম্বরে সুরকার আলতাফ মাহমুদসহ বিশিষ্ট নাগরিকদের নির্যাতন ও কাউকে কাউকে হত্যার অভিযোগে আমৃত্যুকারাদণ্ড বহাল রয়েছে।

রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিজ দেশের নাগরিক সেই দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে এমন নজির নেই। ১৯৭১ সালের ১৪ থেকে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের শিক্ষক, চিকিৎসক, দেশের সাংবাদিকদের হত্যার পেছনে জড়িত ছিল আল-বদররা। মুজাহিদ ছিল তাদের নেতা।’ আজকের রায়ে সারা দেশের বুদ্ধিজীবীসহ সব নাগরিক খুশি বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।

ট্রাইব্যুনালের রায়:
মুজাহিদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা সাতটি অভিযোগের মধ্যে ১, ৩, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয়। এতে প্রথম অভিযোগে সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে অপরণের পর হত্যা এবং ষষ্ঠ অভিযোগে বুদ্ধিজীবীসহ গণহত্যার ষড়যন্ত্র ও ইন্ধনের অভিযোগে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয় এই জামায়াত নেতার। একই সাজা হয় সপ্তম অভিযোগে, ফরিদপুরের বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বর্বর হামলা চালিয়ে হত্যা-নিযার্তনের ঘটনায়।

এছাড়া পঞ্চম অভিযোগে সুরকার আলতাফ মাহমুদ, গেরিলা যাদ্ধা জহিরউদ্দিন জালাল ওরফে বিচ্ছু জালাল, শহীদজননী জাহানারা ইমামের ছেলে শাফি ইমাম রুমি, বদিউজ্জামান, আবদুল হালিম চৌধুরী জুয়েল ও মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদসহ কয়েকজনকে ঢাকার নাখালপাড়ায় পুরনো এমপি হোস্টেলে আটকে রেখে নির্যাতন এবং জালাল ছাড়া বাকিদের হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার জন্য মুজাহিদকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

তবে ২ ও ৪ নম্বর অভিযোগে তার সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়নি বলে রায়ে জানানো হয়। আর তৃতীয় অভিযোগে ফরিদপুর শহরের খাবাসপুরের রণজিৎ নাথকে অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় মুজাহিদকে।

তবে দ্বিতীয় অভিযোগে ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে হিন্দু গ্রামে গণহত্যা এবং চতুর্থ অভিযোগে আলফাডাঙ্গার আবু ইউসুফ ওরফে পাখিকে আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলেও তাতে মুজাহিদের সংশ্লিষ্টতা প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেনি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। এ দুটি অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হয়।

মামলার বিচারিক কার্যক্রম:

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগের মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে গ্রেফতার করা হয়। ২ আগস্ট ২০১০ তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়।

১৬ জানুয়ারি ২০১২ মুজাহিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল-১ এ ১০৯ পৃষ্ঠার ৩৪টি বিভিন্ন ঘটনাসহ মোট ছয় হাজার ৬৮০ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউশন। ২৬ জানুয়ারি ২০১২ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৫ এপ্রিল ২০১২ মামলাটি দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে নতুন করে অভিযোগের বিষয়ে শুনানি হয়।

২১ জুন ২০১২ মুজাহিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ৭টি অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল-২। ২০১৩ সালের ২২ এপ্রিল রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য নেওয়া শেষ হয়। ৫ মে ২০১৩ মুজাহিদের পক্ষে একমাত্র সাক্ষী হিসেবে সাফাই সাক্ষ্য দেন তার ছোট ছেলে আলী আহমাদ মাবরুর।

ট্রাইব্যুনাল সাফাই সাক্ষীর সংখ্যা ৩ জন নির্ধারণ করে দিলেও আর কোনও সাক্ষী হাজির করতে পারেননি আসামিপক্ষ। ১৭ জুলাই ট্রাইব্যুনাল মুজাহিদের অপরাধ প্রমাণিত স্যাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। রায়ের বিরুদ্ধে মুজাহিদের আইনজীবিরা আপিল করে ১১ আগস্ট ২০১৩।

যুদ্ধাপরাধী মুজাহিদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ:
অভিযোগ- ১: পাকিস্তানের বাঙালি সহযোগীদের বিরুদ্ধে একটি দৈনিকে প্রবন্ধ লেখার অপরাধে ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ৩টার দিকে ৫ নম্বর চামেলিবাগের ভাড়া করা বাসা থেকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করা হয় ইত্তেফাকের সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে। এর পর তার আর কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি।

অভিযোগ- ২: একাত্তরের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন থানায় বৈদ্যডাঙ্গি, মাঝিডাঙ্গি ও বালাডাঙ্গি গ্রামে হিন্দুদের প্রায় সাড়ে তিনশত বাড়ি পুড়িয়ে দেয় পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসররা। হামলাকারীদের গুলিতে ৫০ থেকে ৬০ জন নরনারী নিহত হন। ওই ঘটনায় ফরিদপুর শহরের হামিদ মাওলানা ছাড়াও ৮/১০ জন অবাঙালি অংশ নেন। এ ঘটনায় বিশেষ ধর্মে বিশ্বাসী মানুষের ওপর হামলায় সহযোগিতা করা ও হামলায় ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে মুজাহিদের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ- ৩: একাত্তরের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ফরিদপুর শহরের খাবাসপুর মসজিদের সামনে থেকে রাজাকাররা ফরিদপুর জেলার কোতোয়ালি থানার গোয়ালচামট (রথখোলার) এলাকার মৃত রমেশ চন্দ্রনাথের ছেলে রণজিৎনাথ ওরফে বাবুনাথকে আটক করে। বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুর পুরোনো সার্কিট হাউসে মুজাহিদের উপস্থিতিতে পাকিস্তানি সেনা অফিসার মেজর আকরাম কুরাইশির কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়। সেখানে নির্যাতনের পর মুজাহিদের নির্দেশে তাকে হত্যা করার উদ্দেশে বিহারি ক্যাম্পের উত্তর পাশে আবদুর রশিদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

অভিযোগ- ৪: একাত্তরের ২৬ জুলাই সকালে ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা থেকে স্থানীয় রাজাকাররা মো. আবু ইউসুফ ওরফে পাখিকে মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহে আটক করে। পরে তাকে ফরিদপুর স্টেডিয়ামে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে আটক রাখা হয়। সেখানে মুজাহিদের কাছ থেকে পাখির বিষয়ে জানতে পেরে তার ওপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় পাকসেনারা। প্রায় এক মাস ৩ দিন তাকে সেখানে নির্যাতন করা হয়। এতে পাখির বুক ও পিঠের হাড় ভেঙে যায়।

অভিযোগ- ৫: যুদ্ধ চলাকালে সুরকার আলতাফ মাহমুদ, জহিরউদ্দিন জালাল, বদি, রুমি, জুয়েল ও আজাদকে আটক করে ঢাকার নাখালপাড়ায় পুরোনো এমপি হোস্টেলে রাখা হয়। ৩০ অগাস্ট রাত ৮টার দিকে পূর্ব পাকিস্তান ইসলামি ছাত্রসংঘের সেক্রেটারি মুজাহিদ ও সভাপতি মতিউর রহমান নিজামী সেখানে গিয়ে এক সেনা কর্মকর্তাকে পরামর্শ দেন, রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আগেই তাদের হত্যা করতে হবে। এ সিদ্ধান্তের পর সহযোগীদের নিয়ে মুজাহিদ আর্মি ক্যা¤েপ আটকদের অমানসিক নির্যাতনের পর জালাল ছাড়া বাকিদের হত্যা করেন।

অভিযোগ- ৬: একাত্তরে ঢাকার মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী ক্যা¤প তৈরি করে। পরবর্তীকালে রাজাকার ও আলবদর বাহিনী গঠনের পর সদস্যরা সেখানে প্রশিক্ষণ নিতেন। পূর্ব পাকিস্তান ইসলামি ছাত্রসংঘের সেক্রেটারি হওয়ার সুবাদে ওই আর্মি ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত ছিল মুজাহিদের। সেখানে নিয়মিত ঊর্ধ্বতন সেনা অফিসারের সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী নানা অপরাধের পরামর্শ ও ষড়যন্ত্র করতেন। এ ধরনের পরামর্শ ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ১০ ডিসেম্বর থেকে বুদ্ধিজীবী নিধনসহ গণহত্যার মতো ঘটনা সংঘটিত হয়।

অভিযোগ- ৭: একাত্তরের ১৩ মে মুজাহিদের নির্দেশে রাজাকার বাহিনী ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালিয়ে বীরেন্দ্র সাহা, নৃপেন সাহা, শানু সাহা, জগবন্ধু মিত্র, জলাধর মিত্র, সত্যরঞ্জন দাশ, নরদবন্ধু মিত্র, প্রফুল্ল মিত্র, উপেন সাহাকে আটক করে। পরে উপেন সাহার স্ত্রী রাজাকারদের স্বর্ণ ও টাকার বিনিময়ে স্বামীর মুক্তি চাইলেও মুজাহিদের নির্দেশে রাজাকাররা সবাইকেই হত্যা করে। একই সময়ে রাজাকাররা সুনীলকুমার সাহার কন্যা ঝর্ণা রানীকে ধর্ষণ করে। হিন্দুদের বসতঘরে লুটপাট চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া অনিল সাহা নামে একজনকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়।

ট্রাইব্যুনালে যে সব অভিযোগে সাজা হয়:
প্রথম অভিযোগে সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে অপরণের পর হত্যা এবং ষষ্ঠ অভিযোগে বুদ্ধিজীবীসহ গণহত্যার ষড়যন্ত্র ও ইন্ধনের অভিযোগে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয় এই জামায়াত নেতাকে। একই সাজা হয় সপ্তম অভিযোগে, ফরিদপুরের বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বর্বর হামলা চালিয়ে হত্যা-নির্যাতনের ঘটনায়।

পঞ্চম অভিযোগে সুরকার আলতাফ মাহমুদ, গেরিলা যোদ্ধা জহিরউদ্দিন জালাল ওরফে বিচ্ছু জালাল, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ছেলে শাফি ইমাম রুমি, বদিউজ্জামান, আবদুল হালিম চৌধুরী জুয়েল ও মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদসহ কয়েকজনকে ঢাকার নাখালপাড়ায় পুরনো এমপি হোস্টেলে আটকে রেখে নির্যাতন এবং জালাল ছাড়া বাকিদের হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার জন্য মুজাহিদকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

তৃতীয় অভিযোগে ফরিদপুর শহরের খাবাসপুরের রণজিৎ নাথকে অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় মুজাহিদকে।

দ্বিতীয় অভিযোগে ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে হিন্দু গ্রামে গণহত্যা এবং চতুর্থ অভিযোগে আলফাডাঙ্গার আবু ইউসুফ ওরফে পাখিকে আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলেও তাতে মুজাহিদের সংশ্লিষ্টতা প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেনি বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। এ দুটি অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়।

যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মুজাহিদের জীবনী:
১৯৪৮ সালের ২ জানুয়ারি ফরিদপুরের খাবাসপুরে যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদের জন্ম।

১৯৬৪ সালে মাধ্যমিক পাসের পর তিনি ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হন এবং উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র থাকাকালেই জামায়াতের তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘে যোগ দেন। ১৯৬৮ সালে তাকে সংগঠনের জেলা শাখার সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭১ সালে বাংলার মানুষের স্বাধীনতার সংগ্রাম যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, সেই বছর জানুয়ারিতে ইসলামী ছাত্রসংঘের ঢাকা জেলা শাখার সভাপতি হন মুজাহিদ। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর জুলাই মাসে সংগঠনের পূর্ব পাকিস্তান শাখার সেক্রেটারির এবং এরপর প্রাদেশিক সভাপতির দায়িত্ব পান।

মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতায় ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্যদের নিয়ে আলবদর বাহিনী গঠিত হলে ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নেতৃত্ব দেন ইসলামী ছাত্রসংঘের তখনকার সভাপতি ও জামায়াতের বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামী। অক্টোবরে ওই বাহিনীর প্রধান হন মুজাহিদ। বদর বাহিনী প্রধান নিজামীকেও মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।

মুজাহিদের নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী যুদ্ধের মধ্যে ফরিদপুর, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হত্যা, অপহরণ, লুটপাটের মতো ব্যাপক মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড চালায়। এমনকি ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের প্রস্তুতির সময়ও বাহিনী নিয়ে আত্মসমর্পণ না করার সিদ্ধান্ত নেন মুজাহিদ।

স্বাধীনতার পর মুজাহিদ জামায়াতের রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং ১৯৮২ সালে কেন্দ্রীয় পরিষদের সদস্য হন। ১৯৮৯ থেকে দুই বছর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালনের পর ২০০০ সালে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল হন তিনি। বিএনপি-জামায়াত চার দলীয় জোট সরকারের আমলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পান মুজাহিদ। জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের পরিচালনা পর্ষদেরও প্রধান তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত