সিলেটটুডে ডেস্ক

১৭ জুন, ২০১৫ ০৬:২৪

বুদ্ধিজীবিঘাতক মুজাহিদের ফাঁসির রায়ে শহীদ বুদ্ধিজীবি সন্তানদের প্রতিক্রিয়া

আল বদর কমান্ডার যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মুজাহিদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকার মাধ্যমে প্রথম কোন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির চুড়ান্ত রায় আসলো যাকে বুদ্ধিজীবি হত্যার অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল এবং সুপ্রীম কোর্ট উভয়ই ফাঁসির দণ্ড দিলেন।

পুরো দেশের মতো মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবিদের পরিবারও এ রায়ে সন্তুষ্ট। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শহীদ বুদ্ধিজীবিদের পরিবারের সদস্যরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এ রায়ে। শহীদ বুদ্ধিজীবি ডা. আলীম চৌধুরীর কন্যা ডা. নুজহাত চৌধুরী ও শহীদ আলতাফ মাহমুদের কন্যা শাওন মাহমুদ তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

ডা. নুজহাত চৌধুরী একটি দৈনিক পত্রিকায় দীর্ঘ প্রতিক্রিয়ায় লিখেন-

“এই প্রথম একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে কাউকে ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়াতে হচ্ছে। বাবা হত্যার বিচার এক ধাপ এগিয়ে গেল। এই রায়ে একজন শহীদ বুদ্ধিজীবীর সন্তান হিসেবে আমি স্বস্তি পেয়েছি। খুব শৈশবে বাবাকে হারিয়েছি। বাবার ছায়াহীন এ জীবনে সুধীসমাজ, বুদ্ধিজীবী আর রাষ্ট্রের কাছ থেকে আঘাত পেয়েছি বারবার। বারবার মরেছি। সেই আঘাত বা মৃত্যু যত না কষ্টের ছিল, তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছি যখন বাবার হত্যাকারীরা গাড়িতে দেশের পতাকা উড়িয়েছে। তাই আজ স্বস্তির সঙ্গে দাবি একটাই, বিচার করে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হোক।

আর দশটা শিশুর মতো বাবার আদর-সোহাগ কিছুই পাইনি। বাবাকে এভাবে হারানোর যে শূন্যতা তা কখনো ভাষায় বোঝানো যায় না। যাঁরা বাবাকে এভাবে হারিয়েছেন শুধু তাঁরাই অনুভব করতে পারেন। জীবনের এমন কোনো দিক নেই যেখানে বাবাকে হারানোর প্রভাব পড়েনি। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও জাতীয় জীবনের সব ক্ষেত্রেই প্রভাব পড়েছে। জীবনের প্রতিটা ক্ষণ একটি অদৃশ্য ব্যথা নিয়ে কাটছে। আজ সেই ব্যথা কিছুটা প্রশমিত হলো।

'৭৫ সালে জাতির জনককে হত্যার পর পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও দেশবিরোধীরা পুুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পায়। ফলে যাঁরা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন তাঁরা চলে যান আলোচনার আড়ালে। শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচার তো দূরের কথা, জাতিকে তাঁদের কথা ভুলিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা হয়েছে। ইতিহাস পরিবর্তনের চেষ্টা করা হয়েছে। দীর্ঘ ৪৪ বছর বুকে পাথর বেঁধে ধৈর্য ধরেছি। আজ সেই ধৈর্যের ফল পাওয়ার পথে।

স্বাধীনতার পর '৭৫ থেকে '৯৬ পর্যন্ত এই দেশে রাজাকার আলবদর ও তাদের পক্ষের শক্তি দেশ পরিচালনা করেছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার সুবাদে তারা দেশে-বিদেশে সব ক্ষেত্রে প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তার করেছে। আর জামায়াত তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্তিশালী করেছে। ফলে ২০০৯ সালে অওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই বিচার শুরু ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে সরকার। দেশ-বিদেশ থেকে আসা নানা হুংকারকে পাত্তা না দিয়ে বিচারকাজ শুরু করে তা শেষ করার পথে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগ এই বিচারের জন্য আন্তরিক ও সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। জাতির জনক হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন করার মধ্যমে জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাবা হত্যার বিচার সম্পন্ন করেছেন। জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন। তিনি বাবা হারানোর ব্যথা বোঝেন। তাই আমাদের বাবা হত্যারও বিচার করেছেন। তিনি বাপের বেটি। আমাদের বাবা হত্যার বিচার করার জন্য তাঁকে স্যালুট জানাই। আজ বাংলাদেশ নিয়ে আমি গর্বিত। বাংলাদেশকে স্যালুট জানাই।

শেষ কথা হলো, আমাদের বাবাদের আত্মা পরিপূর্ণ তৃপ্ত হবে তখন, যখন বিচার হবে সেই ঘাতক সংগঠনের। যেই সংগঠনের ছায়াতলে থেকে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে আলবদর-রাজাকাররা। হত্যা করেছে দেশের ৩০ লাখ মানুষকে। ইজ্জত লুট করেছে দুই লাখ মা-বোনের। বিচার করে নিষিদ্ধ করতে হবে সেই অপশক্তির সংগঠন জামায়াতে ইসলামীকে। বন্ধ করতে হবে তাদের আর্থিক শক্তির জোগানদাতা প্রতিষ্ঠানকে। তবেই এই বিচারের পরিপূর্ণতা আসবে। জামায়াতের বিচার করে নিষিদ্ধ করাই হোক একমাত্র দাবি”।

শাওন মাহমুদ তাঁর ফেসবুক প্রতিক্রিয়ায় লিখেন-

ভোর পাঁচটা থেকেই তোমাদের অনুভব করেছি আমার পাশে, ঘুমে চোখ জড়িয়ে যাওয়ার মুহূর্তে তোমরা বলে উঠছিলে শাওনমনি ওঠো, আজ আমাদের ফিরে আসার দিন, আমাদের খুঁজে পাওয়ার দিন। বদী, রুমি, জুয়েল, আজাদ, বকর, হাফিজ আর আলতাফ মাহমুদ সারা প্রভাত জুড়ে কানের কাছে একসাথে কম্পিত কণ্ঠে আমার হৃদয় জুড়ে বলে উঠছিল -
তোমার আমার ঠিকানা
পদ্মা মেঘনা যমুনা
জয় বাংলা

আপনার মন্তব্য

আলোচিত