এম আর আখতার মুকুল

১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:৪৬

চরমপত্র

কী পোলারে বাঘে খাইলো? শ্যাষ। আইজ থাইক্যা বঙ্গাল মুলুকে মছুয়াগো রাজত্ব শ্যাষ। ঠাস কইর্যা একটা আওয়াজ হইলো। কী হইলো? কী হইলো? ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে পিঁয়াজী সা’বে চেয়ার থনে চিত্তর হইয়া পইড়া গেছিলো। আট হাজার আষ্ট শ চুরাশি দিন আগে ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট তারিখে মুছলমান-মুছলমান ভাই-ভাই কইয়া, করাচি-লাহুর-পিন্ডির মছুয়া মহারাজরা বঙ্গাল মুলুকে যে রাজত্ব কায়েম করছিলো, আইজ তার খতম তারাবি হইয়া গেলো।

বাঙ্গালি পোলাপান বিচ্চুরা দুই শ পঁয়ষট্টি দিন ধইর্যা বঙ্গাল মুলুকের ক্যাদো আর প্যাঁকের মাইদ্দে World-এর Best পাইটিং ফোর্সগো পাইয়া, আরে বাড়িরে বাড়ি! ভোমা ভোমা সাইজের মছুয়াগুলা ঘঁত্ ঘঁত্ কইরা দম ফ্যালাইলো। ‘ইরাবতীতে জনম যার ইছামতীতে মরণ।’ আতকা আমাগো চকবাজারের ছক্কু মিয়া ফাল পাইড়্যা উডলো, ‘ভাইসা’ব, আমাগো চকবাজারের চৌরাস্তার মাইদ্দে পাত্থর দিয়া একটা সাইনবোর্ড বানামু। হেইডার মাইদ্দে কাউলারে দিয়া লেখাইয়া লমু, ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বঙ্গাল মুলুকে মছুয়া নামে এক কিছিমের মাল আছিলো। হেগো চোটপাট বাইড়া যাওনের গতিকে হাজারে হাজার বাঙ্গালি বিচ্চু হেগো চুটিয়া—মানে কি না পিঁপড়ার মতো ডইল্যা শেষ করছিলো। এই কিছিমের গেনজামরেই কেতাবের মাইদ্দে লিইখ্যা থুইছে ‘পিপীলিকার পাখা উঠে মরিবার তরে।’ টিক্কা-মালেক্যা গেলো তল, পিঁয়াজী বলে কত জল?

২৫ শা মার্চ তারিখে সেনাপতি ইয়াহিয়া খান বাঙ্গালিগো বেশুমার মার্ডার করণের আর্ডার দিয়া কী চোটপাট। জেনারেল টিক্কা খান হেই আর্ডার পাইয়া ৩০ লাখ বাঙ্গালির খুন দিয়া গোসল করলো। তারপর, বঙ্গাল মুলুকের খাল-খন্দক, দরিয়া-পাহাড়, গেরাম-বন্দরের মাইদ্দে তৈরি হইলো বিচ্চু। ‘যেই রকম বুনোওল, সেইরকম বাঘা তেঁতুল।’

....

এলায় কেমন বুঝতাছেন? বিচ্চুগো বাড়ির চোটে হেই পাকিস্তান কেমতে কইর্যা ফাঁকিস্তান হইয়া গেলো? হেইর লাইগ্যা কইছিলাম, কী পোলারে বাঘে খাইলো? শ্যাষে আইজ থাইক্যা বঙ্গাল মুলুকে মছুয়াগো রাজত্ব শ্যাষ।    

(সংক্ষেপিত)

লেখকের ‘চরমপত্র’ (সাগর পাবলিশার্স, ২০০০) বই থেকে সংগৃহিত

আপনার মন্তব্য

আলোচিত