সিলেট টুডে ওয়েব ডেস্ক

০৭ ফেব্রুয়ারি , ২০১৫ ১৫:৫৭

পাত্রের বয়স ১০৩, পাত্রীর ৯৯!

প্রেমের কোনও বয়স নেই। কোনও লজ্জাও নেই। জীবনের সায়াহ্নে গিয়েও ভালোবাসার মানুষটিকে নতুন করে পেতে চায় সকলে। বোধহয় এ জন্যই ১০৩ বছরে গিয়ে ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হলেন

প্রেমের কোনও বয়স নেই। কোনও লজ্জাও নেই। জীবনের সায়াহ্নে গিয়েও ভালোবাসার মানুষটিকে নতুন করে পেতে চায় সকলে। বোধহয় এ জন্যই ১০৩ বছরে গিয়ে ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হলেন মানুয়েল রিয়েলা। যদিও যাঁর সঙ্গে মানুয়েল বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন, সেই মার্তিনা লোপেজের বয়সও নেহাত কম নয়। সেঞ্চুরি করতে আর মাত্র এক বছর বাকি। বয়সের ছাপ দেহেও পড়েছে। তবুও দু’জনের মনে প্রেমের রঙ ফিকে হয়নি। তাই দীর্ঘ ৮০ বছরে যা করতে পারেননি, জীবনের অন্তিমলগ্নে গিয়ে সেই সাধই পূর্ণ করলেন প্যারাগুয়ের এই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। বিয়ের পর এই নব দম্পতিকে দেখতে গির্জার সামনে ভিড় জমিয়েছিলেন বুয়েনস্‌ এয়ারসের অগণিত মানুষ। যদিও মানুয়েল-মার্তিনার প্রেমকাহিনী শুরু আট দশক আগে, ১৯৩৩ সালে। সেই বছর গোলাপ হাতে মার্তিনাকে প্রেম নিবেদন করেছিলেন মানুয়েল। সেই প্রেম প্রত্যাখ্যান করতে পারেননি মার্তিনা।

তাই দেরি না করে ওই বছরই কাগজে-কলমে বিয়ে সেরে নেন এই প্রেমিক যুগল। তারপর মধুচন্দ্রিমাতেও যান। মধুচন্দ্রিমার সেরে আসার পরই ধর্মীয়ভাবে বিয়ে করবেন বলে ভেবেছিলেন এঁরা। কিন্তু মধুচন্দ্রিমার রেশ কাটতে না কাটতেই শুরু হয়ে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। যার জেরে দু’জনে সংসার শুরু করলেও সাড়ম্বরে ধর্মীয়ভাবে বিয়ে করার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেননি। তারপর এঁদের জীবনে আসে ৮টি সন্তান। সংসারের ঝক্কি সামলে, তাদের বড় করার চিন্তায় অধরা স্বপ্ন পূরণের কথা ভুলেই গিয়েছিলেন মানুয়েল-মার্তিনা। তবে এখন দু’জনের জীবনেই অখণ্ড অবসর। ৮ সন্তানের ৫০টি নাতি-নাতনি, ৩৫টি প্রপৌত্র-প্রপৌত্রী, তাঁদের আবার ২০টি সন্তান-সন্ততি নিয়ে ভরা সংসার লোপেজ -রিয়েলার। তাই তরুণ বয়সের সেই স্বপ্ন আর অপূর্ণ রাখতে চান না। এই জীবনেই সেই স্বপ্ন পূরণ করতে চান। আর এই স্বপ্ন পূরণ করার খেলায় পুরো পরিবারকে পাশে পেয়েছেন মানুয়েল দম্পতি। বিশেষত ছোট্ট নাতির আবদারেই এই বয়সে সেই পুরনো স্বপ্ন পূরণ করার সাহস পেয়েছেন বলে জানালেন লোপেজ। তাঁর কথায়, “ছোট্ট নাতিটার আবদারে আর না করতে পারিনি।’’

নাতি-নাতনিরাও দাদু-ঠাকুমার বিয়ের দিনটির কথা ভুলতে পারছে না। রবিবার সকালে একেবারে নববধূর সাজেই সাদা গাউন পরে, হাতে ফুলের তোড়া এবং মুখে সলজ্জ হাসি নিয়ে গির্জায় প্রবেশ করেছিলেন লোপেজ। মানুয়েলও নতুন আকাশি শার্ট পড়ে, হাতে আংটি নিয়ে হুইলচেয়ারে করেই গির্জায় হাজির হন। দু’জনেরই মুখের চামড়া কুঁচকে গিয়েছে। হাতে ফুলের তোড়া ধরারও যেন ক্ষমতা নেই। ক্রমাগত কাঁপছে দুটি হাত। নাতির বয়সি যাজককে সাক্ষী রেখে কম্পিত সেই দুটি হাতে আংটি বদল হল। বয়সের ভারে ন্যুব্জ এই দম্পতি চেয়ারে বসেই বিয়েটা সারলেন। একসঙ্গে সংসার করার এত বছর পরেও দু’জনের ভালোবাসায় এতটুকু ভাটা পড়েনি। তাই এই বয়সেও বিয়ের উত্তেজনা দু’জনের চোখে-মুখে স্পষ্ট। মানুয়েল-মার্তিনা যেন একেবারে নবদম্পতি। এঁরা বয়সের ভারে ন্যুব্জ হলেও স্মৃতিতে এখনও দৃঢ়। তাই যে বছর মানুয়েল তাঁকে প্রেম নিবেদন করেছিলেন, সেই বছরের কথা জিজ্ঞাসা করলে মার্তিনা গড়গড়িয়ে বলে যান, “সে বছরই ‘কিং কং’ সিনেমা প্রথম মুক্তি পায়। আর লন্ডনের পাতাল রেলের নক্সাও প্রকাশিত হয়।’’ শুধু লোপেজ নয়, মানুয়েলেরও সেই সমস্ত ঘটনা যেন চোখের সামনে ভাসছে। তাই প্রেমের প্রথম দিনটির কথা মনে রয়েছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে নববধূর দিকে তাকিয়ে কাঁপা-কাঁপা গলায় রিয়েলার ছোট্ট জবাব, “নিশ্চয়ই।’’ স্বামীর এই কথা শুনে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি লোপেজ। তাই জীবনের অন্তিমলগ্নে এসে নববধূর উপলব্ধি, “প্রেমের সত্যিই কোনও বয়স হয় না। শুধু জীবনে আরও কয়েকটা বসন্ত যদি বেশি পাওয়া যেত!’’

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত