ওয়েব ডেস্ক

০৩ ফেব্রুয়ারি , ২০১৬ ০২:৪৩

শীতে শিশুর হাঁপানি হলে করণীয়

অ্যাজমা বা হাঁপানি হল ইম্যুউন জনিত শ্বাসনালীর এক ধরণের অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া। বংশানুক্রমিকভাবে এই রোগে আক্রান্ত শিশু, যাদের শ্বাসনালী খুবই সেনসিটিভ, বিভিন্ন উত্তেজক বস্তু বা অ্যান্টিজেনের সংস্পর্শে এসে উত্তেজিত হয়ে ফুলে উঠে। এর ফলে তাদের শ্বাসনালীর মধ্যে কফ এর নিঃসরণ বেড়ে যায় এবং শ্বাসনালী সংকুচিত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় শুরু হয় লাগাতার কাশি, শ্বাস কষ্ট, বুকে চাপ ইত্যাদি।
 
রোগের কারণ
হাঁপানি কোন সংক্রামক ব্যাধি নয়। শীতের এই সময়টি ছাড়াও বাড়ির আশে পাশে যদি কোনো পরিবেশ দূষণকারী কলকারখানা থাকে অথবা অতিরিক্ত ধোঁয়া, ধুলো-ফুলের রেণু ইত্যাদি থাকে তবে আপনার বাচ্চার হাঁপানি হতে পারে। শীতের সময় কুয়াশা, সোয়েটার, লেপ-কম্বলের মাইট বা কাপড়ের মাঝে থাকা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পোকা হাঁপানির অন্যতম কারণ।
 
রোগের লক্ষণ
হাঁপানি দেখা দিলে শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় শো শো শব্দ, আর একটু বড় শিশুদের বুকে চাপ, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা ইত্যাদি হয়ে থাকে। এছাড়াও অল্প কাজের পরিশ্রান্ত হওয়া বা হাঁপিয়ে উঠা, একটানা ঘুম না হওয়া, অল্প খেলাধুলায় হাঁপিয়ে যাওয়া, এসব হাঁপানি রোগের অন্যতম লক্ষণ।
 
হাঁপানি রোগের চিকিৎসা
হাঁপানি রোগের স্থায়ী কোন প্রতিকার নেই। এমন কোন ওষুধ নেই যা হাঁপানি রোগকে গোড়া থেকে নির্মূল করতে দেয়। এই রোগের আদর্শ চিকিৎসা হলো নেবুলাইজার বা ইনহেলারের মাধ্যমে ব্রংকোডাইলেটর জাতীয় ওষুধের মাধ্যমে শ্বাসকষ্টের উপশম করা। মুখে খাওয়ার থিওফাইলিন বা সালবিউটামল জাতীয় ওষুধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক বেশী। যেহেতু ইনহেল করা ওষুধ সরাসরি ফুসফুসে পৌঁছায়, তাই এক্ষেত্রে রোগীর (ওষুধের) খুব সামান্য অংশের প্রয়োজন হয়, এবং তা তাড়াতাড়ি কাজ করে। অনেকে অজ্ঞাতবশত:ইনহেলারকে শেষ এবং ক্ষতিকর চিকিত্সা মনে করে থাকেন যা একেবারে অমূলক।

চিকিত্সকরা সাধারণত দুই ধরণের ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন। প্রশমনকারী বা রিলিভার (সালবিউটামল) এবং প্রিভেন্টার বা প্রতিরোধক। প্রিভেন্টার হলো ষ্টেরয়েড, যার কাজ হলো শ্বাসনালীর সংবেদনশীলতাকে ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা। তাই এ ধরণের ওষুধগুলো নিয়মিত নিতে হয়। আর যদি কোন অ্যান্টিজেন বা অ্যালার্জেন শ্বাসনালীকে উত্তেজিত করে, কাশি, শুরু হয় বা নিঃশ্বাসের কষ্ট হয় তবেই রিলিভার জাতীয় ওষুধগুলো নিতে  হবে। অর্থ্যাৎ  প্রয়োজন এবং চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী (রিলিভার+প্রিভেন্টর) দুটোর মাধ্যমেই চিকিত্সা চালিয়ে নিতে হবে।

প্রিভেন্টার বা প্রতিরোধক প্রথমে দিনে দু’বার করে শুরু করার পর যদি ন্যুনতম ৬ মাস যদি রোগী রোগমুক্ত থকে তবে চিকিত্সক এ ওষুধের ডোজ কমিয়ে আনেন। আর এই কমডোজ যদি একবার করে দিয়েই রোগী দিব্যি ভালো থাকেন তবে তা ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেয়া হয়। হাঁপানির সমস্যা যেন কম হয় এজন্য মন্টিলুকান্ট জাতীয় ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিত্সকগণ।
 
রোগ প্রতিরোধ
হাঁপানি ঘনঘন দেখা দিলে শিশুর শরীর পরিমিত অক্সিজেন পায়না। আর অক্সিজেনের অভাবে দেহের বিভিন্ন কোষের গঠনবৃদ্ধি সঠিকভাবে হতে না পারায় শিশুটির গ্রোথ ফেউল্যুর হয়। এমনকি দীর্ঘমেয়াদি হঁপানির কারণে শিশুর বুকের গড়ন কবুতরের বুকের খাচার আকার ধারণ করতে পারে। এজন্য হাঁপানি প্রতিরোধের ব্যাপারে শিশুর বাবা-মাকে অধিক নজর দিতে হবে।

শীতের সময় গরম কাপড়গুলো ধুয়ে অথবা রোগে দিয়ে পড়তে হবে। এলার্জিক বা উত্তেজক বস্তু, খাবার, ধূলাবালি এসব থেকে শিশুকে দূরে রাখতে হবে। আশা করি শীতের এসময়টিতে আপনার সাবধানতা তথা স্বাস্থ্য সচেতনতায় শিশু হাঁপানি জাতীয় কষ্ট থেকে মুক্তি পাবে।
 
ডা. আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার
সহকারী অধ্যাপক, শিশু বিভাগ
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা

আপনার মন্তব্য

আলোচিত