রেজাউল আবেদীন

৩০ নভেম্বর, ২০১৬ ১৬:৪৫

শীতকালে যেভাবে ত্বকের যত্ন নিবেন

শীতকাল বা শীত ঋতু অনেকের জন্যই খুব উপভোগের আর কারো কারো জন্য খুবই যাতনার। কারণ ত্বকের জন্য এটা খুব নাজুক সময়। এই শীতে রুক্ষ আবহাওয়ার ঋতুতে বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকায় ত্বকের আর্দ্রতা ভাব কমে গিয়ে আমাদের ত্বক খুব সহজেই শুষ্ক হয়ে যায় ফলে ত্বক তাঁর নিজের আর্দ্রতা হারায়।

ত্বক ফেটে চৌচির হয়, এই ফাটা ত্বকের মাঝে নিজের অজান্তে ময়লা জমে। ফলে অনেকেই খানিকটা অস্বস্থি ও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। এই সময় ত্বকের জন্য চাই একটু বাড়তি যত্ন-আত্তি। আর সেই বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য কিছু বাড়তি যত্ন নেয়া খুব দরকারি ও প্রয়োজনীয়।

এই ভরা শীত মৌসুমে তাই শুষ্কতা থেকে নিজের ত্বক সুরক্ষার জন্য খুবই সহজ কিছু উপায় রয়েছে তা নর-নারী, শিশু-বৃদ্ধ সবারই জানা উচিৎ। ত্বকের যত্ন নেয়ার জন্য অতীব কার্যকারী কিছু টিপস নিচে দেয়া হল:

ক্রিম ব্যবহার করুন: শীতে নিয়মিত ভ্যাসেলিন জাতীয় ক্রিম ব্যবহার করুন। সকালে গোসলের পরে ও রাতে ঘুমাতে যাবার পূর্বে কিংবা বাইরে বেড়ানোর পূর্বে ক্রিম আলতোভাবে লাগিয়ে নিন। এতে আপনার ত্বকের আর্দ্রতা ভাব দূর হবে, ত্বক মসৃণ ও তৈলাক্ত থাকবে। ইউনিলিভার এর ভ্যাসেলিন ক্রিম আমাদের দেশে নিকটস্থ ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে পাওয়া যায়। যাদের তৈলাক্ত ত্বক তারা ক্লিনজিং ও ময়েশ্চারাইজিংয়ের জন্য অয়েল ফ্রি প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে পারেন, আর ক্রিম কেনার ক্ষেত্রে বাজারের সেরা ব্র্যান্ড থেকে বেঁচে নিন আপনারটা।

খাদ্যাভ্যাস বদলান: ত্বকের আর্দ্রতা দূর করে স্বাভাবিক রাখার জন্য খাদ্যাভ্যাস বদলানোও দরকার। শীত ঋতুতে আমাদের দেশে প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল পাওয়া যায়। এসব নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে খাওয়া উচিৎ। আজকাল আমাদের দেশে কিছু কিছু ধরনের চা পাওয়া যায় যেমন: গ্রিন টি, জিঞ্জার টি, হানি টি, (কাজী এন্ড কাজী বা অন্য ব্র্যান্ড এরও হতে পারে), তুলসী টি (রিগস হারবস বা অন্য ব্র্যান্ড এর হতে পারে)। শরীরের উষ্ণতা ধরে রাখার জন্য নিয়মিত এসব প্রাকৃতিক চা পান করা যেতে পারে। যাদের ডায়াবেটিকস নাই তারা চাইলে ঘুম থেকে উঠার পর ১ চা চামচ মধু খেতে পারেন, এতে শরীর চাঙ্গা হবে, উজ্জ্বলতা বাড়বে।

গোসল করুন কুসুম গরম পানিতে: শীতে প্রতিদিন পানি হালকা কুসুম গরম করে তা দিয়ে গোসল করুন। এর ফলে ত্বক ভালো থাকবে। গোসলের সময় আর্দ্রতা ধরে রাখার উপযোগী সাবান ক্রয় করে তাও ব্যবহার করতে পারেন। শরীরের সংবেদনশীল স্থানে গরম পানি ব্যবহারে সচেতন হওয়া উচিৎ। যাদের চুলে খুশকি জমে তারা ত্বকের ধরন বুঝে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেন। যেমন: এন্ট্রি ড্যানড্রাফ, নিজোডার ২%, রিজলভ থেরাপিউটিক শ্যাম্পু ২%।

ঠোঁটে জিহ্বা লাগাবেন না: ঠোঁটের উপর শীতে বেশ প্রভাব পড়ে। ঠোঁট শীতে ফেটে যায় তাই অনেকে বদ অভ্যাস বশত ঠোঁটের মাঝে জিহ্বা লাগিয়ে চাটেন। এরকম করলে ঠোঁট ফাটা বন্ধ না হয়ে বরং আরও বেশী ফাটবে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য খুব ভাল ব্র্যান্ডের “লিপজেল” ব্যবহার করুন। এসব লিপজেল ব্যবহারে বাহারি রকমের সুবাস দেয় এবং ঠোঁটকে কোমল ও নমনীয় রাখে।

কনুই ও পায়ের গোড়ালির যত্ন নিন:  পরিমানমত বা এক টুকরা লেবুর সঙ্গে চিনি লাগিয়ে অল্পসময় দুই হাতের কনুই ও দুই পায়ের গোড়ালিতে ঘষে কিছুক্ষণ রেখে তারপর ধুয়ে নিতে হবে। ভাল ব্র্যান্ডের “গ্লিসারিন” বাজার থেকে সংগ্রহ করে ফাটা স্থানে ব্যবহার করুন। এর ফলে কনুই এবং গোড়ালি ফাটা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।

প্রচুর পানি পান করুন: অনেকে শীত মৌসুম এলে পানি পান করা কমিয়ে দেন। আসলে এটা ঠিক নয়। ত্বককে পরিমানমত পানি পানের বিনিময়ে ভেতর থেকে আর্দ্র রাখতে চেষ্টা করুন। শরীরের ভিতর অংশ শুকিয়ে গেলে তার প্রভাব ত্বকের উপর পড়ে। সেজন্য ত্বকের শুষ্ক সমস্যা দূরীভূত করতে নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।

প্রতিদিন নিয়মিত গোসল করুন: ত্বককে মসৃণ ও সজীব-সতেজ রাখার মূলমন্ত্রই হল শরীরের ত্বক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। শীত ঋতুতে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে এর ফলে আবহাওয়া শুষ্ক হয়ে যায়। এ সময়ে বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণও বাড়ে কাজেই আমাদের শরীরে ও ধুলোবালি বেশি জমে। তাই ত্বক শুষ্ক রাখতে যে সকল যত্ন নেয়া দরকার তার অতি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো শরীরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। শীতে অনেকেই ১ বা ২ দিন অন্তর গোসল করেন, তাই এ কাজটি করতে হলে আলসেমি পরিহার করে প্রতিদিন গোসল করুন।

গরম কাপড় ও কেডস পরিধান করুন: শীতে ত্বকের নাজুক অবস্থায় মোটা কাপড় যেমন: সোয়েটার, জিন্স শার্ট, জিন্স প্যান্ট, চাদর, মাংকি টুপি, ব্লেজার, স্যুট, কেডস প্রভৃতি পরিধান করে বাইরে বেড়াতে পারেন।

এই সকল টিপস মেনে চললে এই শীতকাল আপনার এবং পরিবারের সবার জন্যই উপভোগের ও আনন্দদায়ক হবে বলে প্রত্যাশা করা যায়।

রেজাউল আবেদীন, সিইও এন্ড কনসালটেন্ট, থটওয়ার্স কনসালটিং এন্ড মাল্টি সার্ভিসেস ইন্টারন্যাশনাল এবং সহকারী পরিচালক(অর্থ), নর্থ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, সিলেট

আপনার মন্তব্য

আলোচিত