সিলেটটুডে ডেস্ক

১৯ মার্চ, ২০১৭ ২০:৫৬

বসন্তকালেই কেন বেশি আত্মহত্যা করে মানুষ?

আঠারো শতকের দিকে সংগৃহীত আত্মহত্যা বিষয়ক তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, শীতের তুলনায় বসন্তকালে মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেশি। আত্মহত্যার সাথে ঋতুর সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করছেন সুইডেনের উপসালা ইউনিভার্সিটির মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ফতিস পাপাদোপুলস। তিনি বলেন, আমরা যদি শীতকালকে ভিত্তি ধরি তাহলে দেখতে পাই বসন্তকালে আত্মহত্যার হার ২০ থেকে ৬০ শতাংশ বেড়ে যায়।

অন্ধকার দিনগুলোতে মানুষের মুড খারাপ থাকে এমন একটি ধারণার সাথে এই পর্যবেক্ষণটি সাংঘর্ষিক। তাহলে কেন এমন হয়?

গবেষক বলছেন, এর একটা কারণ হতে পারে যে, সেরোটনিন নামে একটি নিউরোট্রান্সমিটারের উঠানামা। এটিই মূলত মস্তিষ্কে মানুষের মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, রক্তে এই তরলটির পরিমান শীতকালের তুলনায় গ্রীষ্মকালে বেশি থাকে। সংগৃহিত রক্তের নমুনায় সেরোটনিন সংশ্লেষণ এবং দিনের কতোঘণ্টা জুড়ে সূর্যালোক থাকে এর মধ্যে ধনাত্মক সহসম্পর্ক রয়েছে।

এছাড়া এর সঙ্গে আরেকটি বিষয়ের যোগাযোগ আছে সেটি হলো: অবসাদ প্রতিরোধী ওষুধ এসএসআআই। এটি সেরোটনিন লেভেল বৃদ্ধিতে কাজ করে। এই ওষুধ সেবনের ফলে কিছু রোগীর মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা বেড়ে যায়- এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে।

অধ্যাপক পাপাদোপুলস বলেন, আমরা যখন অবসাদ প্রশমনকারী ওষুধ দিই তখন রোগীর স্বাভাবিক মেজাজ ফিরতে কমপক্ষে তিন থেকে চার সপ্তাহ সময় লাগে। এই সময়টাতে অনেকে শারীরিকভাবে অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে বা অস্থিরতা চলে আসে। এ অবস্থায় নিজের চিন্তার দ্রুত বাস্তবায়নের সম্ভাবনা প্রবল হয়। সূর্যালোকও হয়তো কিছু মানুষের মধ্যে এমনভাবেই কাজ করে।

অধ্যাপক পাপাদোপুলস ১২ হাজারের বেশি আত্মহত্যার ঘটনার ফরেনসিক এবং তারা যেই আবহাওয়ার মধ্যে এই কাজটি করেছেন সে সম্পর্কিত তথ্য উপাত্ত নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি দেখেছেন, সূর্যালোকিত দিনের দৈর্ঘ্যের সাথে আত্মহত্যার একটা সম্পর্ক আছে। কিন্তু আত্মহত্যার সাথে ঋতুর সম্পর্ক মিলাতে গেলে অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায় এ ধরনের যোগাযোগ পাওয়া যাচ্ছে না।

গবেষক বলছেন, এই সম্পর্কটা দেখা যাচ্ছে যারা আত্মহত্যার সময় অবসাদ প্রশমনকারী ওষুধ সেবন করছিলেন তাদের মধ্যে বেশি। বলা যায়, এই পর্য‌বেক্ষণকে সেরোটনার্জিক তত্ত্বের সপক্ষে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।

এ বিষয়ে আরেকটি তত্ত্ব আছে। বসন্তকালে ফুলের পরাগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা মস্তিষ্কের মধ্যে রাসায়নিক পরিবর্তন আনে। তবে গাছেদের প্রেমময় সময়টি মানুষের আত্মহত্যা প্রবণতার সাথে সম্পর্কিত কি না তার যথেষ্ট প্রমাণাদি নেই। এটিকে কষ্টকল্পনাই বলে থাকেন।

কিন্তু ফুলের পরাগ এবং নারীদের মধ্যে অহিংস আত্মহত্যার মধ্যে জোরালো সম্পর্ক থাকার প্রমাণ রয়েছে। কথাটি বলেছেন, ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের স্কুল অব মেডিসিন বিভাগের মনোরোগবিদ্যার অধ্যাপক টিওডোর পস্টোলাক।

তিনি বলেন, সাইটোকাইন থেরাপির সাথেও এর সম্পর্ক দেখা গেছে। এই থেরাপির ফলে রোগপ্রতিরোধকারী কোষগুলোর আচরণে পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে কিছু রোগীর মধ্যে আত্মহত্যার চিন্তা মাথাচাড়া দেয়।

তবে যাই হোক, সূর্যালোকিত দিনের দৈর্ঘ্যের সাথে আত্মহত্যার সম্পর্কটি এখনো পরিষ্কার নয়। অবশ্য কিছু মানুষের মধ্যে প্রভাব ফেলে তা স্বীকার করতেই হবে।

তাছাড়া অবসাদ প্রশমনকারী ওষুধের সঠিক ব্যবহার বিধি এখনো নির্ধারণ করা যায়নি। আর এ ধরনের ওষুধ আদৌ অবসাদ দূর করে কি না তা নিয়েও আছে সন্দেহ। আর অবসাদের সঙ্গে মেজাজ বা সূর্যালোকের সাথে আমাদের আচরণের সম্পর্কের বিষয়টিও পরিষ্কার নয়। তবে এই ক্ষেত্রটি আরো গবেষণার দাবি রাখে।

বিবিসি অবলম্বনে

আপনার মন্তব্য

আলোচিত