সিলেটটুডে ডেস্ক

১১ মে, ২০১৯ ১৪:২৭

লুপাস রোগের ঝুঁকি বেশি বয়সী নারীদের

নেকড়ের মতোই আকস্মিকভাবেই ‘লুপাস’ আক্রমণ করে মানুষকে। রোগ প্রতিরোধকারী সিস্টেম নিজের শরীরের বিরুদ্ধে কাজ করা শুরু করে। লুপাস মূলত কম বয়সী মেয়েদের রোগ। ১৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী মেয়েরাই এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।

রোগটি হলে শরীরের চর্ম, স্নায়ুতন্ত্র, রক্তসঞ্চালন তন্ত্র, কিডনি ইত্যাদি অঙ্গকে ক্ষতি করে থাকে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের জানান, চিকিৎসা বিজ্ঞানের এতো উন্নতির পরও এ রোগের সঠিক কোনো কারণ জানা যায়নি। এক লাখের মধ্যে ২০ থেকে ১৫০ জনের লুপাস হয়ে থাকে। ৯০ শতাংশ লুপাস আক্রান্ত কম বয়সী নারী। এদের ৬৫ শতাংশ রোগীর বয়স ১৬ থেকে ৫৫ বছর, ২০ শতাংশ ১৬ বছরের নীচে এবং ১৫ শতাংশ ৫৫ বছরের বেশি।

শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও কোষ আক্রান্ত হয় বলে এই রোগের লক্ষণ বিচিত্র। নানামুখী উপসর্গের কারণে রোগনির্ণয়ে প্রায়ই বিলম্ব ঘটে। জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের লুপাস ফাউন্ডেশন সম্প্রতি একটি সহজ চেকলিস্ট তৈরি করেছে, যা রোগ লক্ষণের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়ে সাধারণ মানুষও সতর্ক হতে পারেন। নিচের লক্ষণগুলো দীর্ঘ মেয়াদে বা একত্রে বেশ কয়েকটি উপস্থিত থাকলে আপনার লুপাস হয়েছে বলে সন্দেহ করতে পারেন।

ত্বক
সূর্যালোকের প্রতি সংবেদনশীল ত্বক, লাল চাকা, নাক থেকে গালে দুই পাশে প্রজাপতির পাখার মতো র‌্যাশ, অতিরিক্ত চুল পড়া।

সন্ধি ও পেশি
তিন মাসের বেশি সময় ধরে একাধিক অস্থি সন্ধিতে ব্যথা বা ফোলা, কারণ ছাড়া ক্লান্তি ও দুর্বলতা।

মস্তিষ্ক ও স্নায়ু

খিঁচুনি, অস্বাভাবিক আচরণ, যা এক ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয়, দীর্ঘমেয়াদি জ্বর, যার কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুস
বুকে ব্যথা, যা দীর্ঘ শ্বাস নিলে বাড়ে

নাক কান গলা
মুখের তালুতে দীর্ঘমেয়াদি ঘা

রক্ত ও রক্তপরিবহন তন্ত্র
রক্তশূন্যতা, রক্তে শ্বেতকণিকা বা অণুচক্রিকার অভাব, ঠান্ডায় আঙুলের রং পরিবর্তন (প্রথমে সাদা, তারপর নীল, শেষে লাল), প্রস্রাব লাল হওয়া, ফেনাযুক্ত হওয়া বা প্রস্রাবে আমিষ যেতে থাকা, মুখ চোখ পা ফুলে যাওয়া

লুপাস ছোঁয়াচে নয়, বংশগত রোগও নয়। এ রোগের কোনো নিরাময় নেই, তবে সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা করলে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। চিকিৎসা না করলে মৃত্যুঝুঁকি আছে।

সংবেদনশীল ত্বক থাকলে রোদে বেশি যাওয়া যাবে না, সানব্লক (এসপিএফ ৩০) লাগাতে হবে। লুপাস রোগী বিয়ে করতে পারবেন, সন্তানও নিতে পারবেন। তবে বিশেষ সতর্কতা জরুরি। জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য কনডম তাঁদের জন্য সবচেয়ে ভালো, জন্মবিরতিকরণ পিল অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ। তবে রোগের তীব্রতা কম হলে, কিডনি জটিলতা ও রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি না থাকলে স্বল্পমাত্রার বড়ি খাওয়া যায়।

তথ্য: ডা. রওশন আরা: মেডিসিন ও বাতরোগ বিশেষজ্ঞ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ

আপনার মন্তব্য

আলোচিত