শিরোনামহীন কিছু গল্প (প্রথম পর্ব)

 প্রকাশিত: ২০১৫-১০-১১ ২০:১৮:০২

সংগৃহীত

আদনান খান রবি :

"হ্যালো"
"ও, হ্যালো। কোথায় তুমি?"
"এই তো রেডি হচ্ছি।"
"ঘুম ভেঙেছে তাহলে?"
"শেষ কবে এতো সকাল ঘুম থেকে উঠেছি মনে নাই"
"দুঃখিত, আমি আসলে তোমার উপকারের কথা জীবনেও ভুলবো না।"
"এখনো ঘর থেকে বের হই নাই, এতো তাড়াতাড়ি কৃতজ্ঞতা জানাইলে কেমনে হবে? এখন রাখি, আশা করি দেখা হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি!"
"ও হ্যাঁ, এখন বের না হলে ৭ টা ২০ এর ট্রেন ধরতে পারবা না। মিডিলসবরো নেমে কল দিও।"

পৃথিবী বড্ড বিচিত্র জায়গা। এখানে কে কখন কিভাবে কার যে কি উপকারে লাগে কেউ জানে না। রাশেদ পরিচয়, সে গ্রেট ব্রিটেনের একজন অবৈধ নাগরিক। ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টের একজন সাধারণ কামলা। অথচ দুলারী, আসলেই দুলারী। দ্বিতীয় প্রজন্মের ব্রিটিশ নাগরিক। তিন ভাইয়ের এক বোন। আদরেই বড় হয়েছে। কোনো কিছুর অভাববোধ করেনি কখনোই।

"হ্যালো"
"কোথায় তুমি?"
"মিডলসবরো রেল ষ্টেশনে, তুমি?"
"আমি টাউন সেন্টারে"
"তাহলে টাউন সেন্টারে এসে কল দিচ্ছি।"

দুলারী, রাশেদের বন্ধু কাম কলিগ শাকিলের বউ। প্রেমের বিয়ে। দুলারী বাবা-মাকে ছেড়ে চলে এসেছে শাকিলের জন্য। এখন আবার দুজনের মধ্যে মনমালিন্য চলছে। রাগ করে ঘর ছেড়েছে দুলারী। তিন দিন থেকেছে এক বান্ধবীর বাসায়। সে বান্ধবী আবার স্বামী ও বাচ্চাকাচ্চার অসুবিধা হচ্ছে বলে দুলারীকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। এখন তার একটা বাসা দরকার। আর এই কারণেই সাহায্য দরকার রাশেদের। আসলে রাশেদ ছাড়া অন্য কেউ রাজি হয়নি এই ব্যাপারে সাহায্যের জন্য।

"পুরো পাগল লাগছে। ঘুম হয়নি কতদিন হলো?"
"আর ঘুম, জীবন আমাকে এরকম অবস্থায় এনে দাড় করাবে চিন্তায় করিনি।"
"কোথায় কোথায় বাসা ভাড়া হবে, কোন আইডিয়া আছে?"
"হ্যাঁ, লিস্ট আছে।"
"দেখে তো  মনে হচ্ছে খাওয়া দাওয়া হয়নি কিছুই। আমিও কিছু খাইনি। চলো, ম্যাকডোনাল্ডসে যাই।"

মিডিলসবরো, নর্থ ইস্ট ইংল্যান্ডের প্রাণকেন্দ্র। যদিও কাগজে কলমে শহর (টাউন), কিন্তু বিভিন্ন কারণে আশেপাশের নগর (সিটি) গুলো থেকেও জমজমাট। বিশেষ করে মানচিত্রে অবস্থান ও যোগাযোগব্যবস্থার কারণে। ইংল্যান্ডে শহর ও নগরের ডেফিনিশন আসলে নাগরিক সুযোগ সুবিধার উপর নির্ভরশীল নয়। এই দেশে যে সব এলাকায় একটি ক্যাথিড্রাল চার্চ আছে, সেগুলো নগর। আর টাউন কাউন্সিল থাকলেই শহর। অনেক গ্রাম আছে, যেখানে নাগরিক সুযোগ সুবিধা যেমন বাজার, ব্যাংকিং, যোগাযোগব্যবস্থা অনেক শহরের চেয়ে উন্নত। কিন্তু একটি টাউন কাউন্সিল নাই, তাই শহর বলে না কেউ! একিভাবে অনেক শহরেও নগরের চাইতে বেশী সুযোগ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও তারা নগর নয়! মিডিলসবরো এই রকমই একটি শহর। নর্থ-ইস্ট ইংল্যান্ড থেকে ইংল্যান্ডের যেকোনো জায়গায় যাতায়াতের জন্য মিডিলসবরো হয়েই যেতে হয়। যে কারণে এখানে সবগুলো ব্যাংকের ব্রাঞ্চ আছে, সব ধরনের ছোটবড় ব্রান্ডের শপ আছে। অনেক গুলো এশিয়ান সুপার মার্কেট আছে।

"এই ঘরটা কিন্তু খারাপ ছিলো না। ভাড়াও কম ছিলো। তাছাড়া তুমি তো এখন কাউন্সিলে বেনিফিটও ক্লেইম করবা না, তাতে শাকিলের এই দেশে নাগরিকত্ব পাওয়া অসম্ভব হয়ে যাবে।"
"না, না, এই ঘরে থাকা অসম্ভব। এতোগুলো পুরুষ মানুষ!"
"এখন অপশন? তোমার লিস্টের সবগুলা তো দেখা শেষ।"
"একটা বাকি আছে।"
"ঐটা তো শহর থেকে অনেক দূরে!"
"ঐটাই ট্রাই করি।"

অবশেষে বাসা মিললো। অনেকটা দুলারীর স্বপ্নের মতো। বাসাটি ভাড়া নিয়েছে মেয়ে। সেই মেয়েটি আবার এই বাসায় থাকে না, সে থাকে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে। ভাড়া অর্ধেক দিলেই হবে। কিন্তু সমস্যা হয়ে গেলো বাসায় ইলেক্ট্রিসিটির কার্ডে কি যেনো একটা ঝামেলা, আজ পুরো রাত বিদ্যুৎ থাকবে না। দুলারী তো ভয়ে শেষ। রাশেদকে অনুরোধ করলো থেকে যেতে। রাশেদ প্রথমে ইতস্তত করলেও পরে রাজি হয়ে গেলো।

দিনের আলো থাকতে থাকতেই ঘরদোর গুছানো শেষ করলো দুজনেই। রাতে বাইরে খাওয়া দাওয়া, একটু আধটু ড্রিংক। রাতে বাসায় ফেরার পর অদ্ভুত আবদার করে বসলো দুলারী। বললো, "এই অন্ধকারে একা ঘুমাতো পারবো না। আমার সেই সাহস নেই। আমার মাসিক চলছে, প্লিজ আমাকে কিছু করো না!"

পরদিন সকালে রাশেদ নাস্তা কিনে আনলো, সাথে কিছু বাজার পত্র। খাওয়া দাওয়ার পর বিদায় নেবার সময় দুলারী রাশেদের ঠোটে জোর করেই চুমু খেয়ে বললো, "ধন্যবাদ। তোমার ঋণ কোনদিনই শোধ করা সম্ভব নয়।"

রাশেদ চলে গেলো তার আপন ভুবনে, কাজের তাড়ায় পেছন ফিরে দেখা হয়নি তার! আর কোনদিন দেখাও হয়নি দুলারীর সাথে।

আপনার মন্তব্য