বেঁচে থাকার দুঃসহ নির্ভারতা, ষষ্ঠ পর্ব : ১১ -১৪

 প্রকাশিত: ২০১৬-১০-১৭ ১০:৩৮:৪৭

কাজী মাহবুব হাসান:

বেঁচে থাকার দুঃসহ নির্ভারতা, ষষ্ঠ পর্ব (দ্য গ্র্যান্ড মার্চ) : ১১ -১৪
১১
একদলীয় মতবাদ ‘কিচে’র রাজত্বে, আগে থেকেই সব উত্তর দেয়া হয়েছে, সব প্রশ্নকে তাই সেটি বাতিল করেছে আগেই। তাহলে, এখান থেকে কি আমরা বুঝতে পারি, একদলীয় মতবাদ ‘কিচে’র সত্যিকারের বিরোধী হচ্ছে সেই মানুষটি, যিনি কিনা প্রশ্ন করেন? প্রশ্ন হচ্ছে ছুরির মত, যা মঞ্চের পেছনের সাজানো দৃশ্যপটকে দ্বিখণ্ডিত করে এবং আমাদের সুযোগ করে দেয় এর পেছনে কি লুকিয়ে আছে সেটি দেখার জন্য। আর আসলেই, ঠিক সেভাবে তেরেজার কাছে সাবিনা একদিন ব্যাখ্যা করেছিলো তার সেই চিত্রকর্মটির অর্থ: উপরিভাগে, যেখানে আছে একটি বোধগম্য মিথ্যা, আর তার নীচে দুর্বোধ্য সত্যটি দৃশ্যমান হয়ে আছে।

কিন্তু যে মানুষগুলো সংগ্রাম করছে এমন শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে, যাদের আমরা ‘একদলীয় মতবাদ নির্ভর’ শাসনব্যবস্থা বলি, এমনকি তারাও প্রশ্ন আর সংশয় নিয়ে কাজ করতে পারেননা; তাদেরও, দরকার নিশ্চয়তা আর সাধারণ সেই সত্যগুলো, যেন জনগণ তা বুঝতে পারে, সমষ্টিগত অশ্রুর উদ্রেক করতে পারে।

সাবিনার চিত্রকর্মের একবার একটি প্রদর্শনী হয়েছিল, যার ব্যবস্থাপনায় ছিল জার্মানির একটি রাজনৈতিক সংগঠন। প্রদর্শনীর ক্যাটালগটি হাতে পেয়ে প্রথম যে বিষয়টি সাবিনা লক্ষ্য করেছিল, সেটি ছিল তার একটি ছবি, যার উপরে কাটা তারের বেড়ার আরেকটি ছবি উপরিস্থাপিত করা হয়েছে। ভেতরে সে আবিষ্কার করেছিল এমন একটি জীবনী, যা পড়লে মনে হতো পারে কোনো শহীদ বা সন্তের জীবনী: সে নির্যাতন সহ্য করেছে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে, বাধ্য হয়েছে তার রক্তাক্ত জন্মভূমি পরিত্যাগ করতে, কিন্তু তারপরও সে তার সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। তার চিত্রকর্মই হচ্ছে সুখের জন্য সংগ্রাম - এটাই ছিল শেষ বাক্যটি।

সে প্রতিবাদ করেছিল, কিন্তু আয়োজকরা তাকে বুঝতে পারেননি।

‘তুমি কি তাহলে বলতে চাইছো কমিউনিজমের অধীনে আধুনিক শিল্পকলা নিপীড়নের শিকার হচ্ছে না’ ?

‘আমার শত্রু হচ্ছে ‘কিচ’, কমিউনিজম নয়’, সে ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের বলেছিল।

সেই সময় থেকেই সাবিনা নানা রহস্যময়তা যুক্ত করতে শুরু করে তার জীবনীতে, যখন সে যুক্তরাষ্ট্রে এসে পৌছায়, সে সক্ষম হয়েছিল সেই সত্যটা পুরোপুরি গোপন করতে যে, সে আসলে একজন চেক নাগরিক। এসবই ছিল ‘কিচ’ থেকে পালানোর জন্য তার মরিয়া একটি প্রচেষ্টা, যা অন্য মানুষরা তার জীবনকে বানাতে চেয়েছিল।

১২
অর্ধসমাপ্ত ক্যানভাসসহ একটি ইজেলের সামনে সাবিনা দাড়িয়ে, আর বৃদ্ধ একজন ব্যক্তি তার আর্মচেয়ারে বসে তার হাতের তুলির প্রতিটি আঁচড় লক্ষ্য করছিলেন।

‘আমাদের এবার বাড়ি ফেরার সময় হলো’, ঘড়ির দিকে নজর দিয়ে বৃদ্ধটি বলে উঠলেন।

সাবিনা তার প্যালেটটি নামিয়ে রাখে আর বাথরুমে যায় হাত ধোবার জন্য। আর বৃদ্ধ মানুষটি চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে তার ছড়িটির কাছে এগিয়ে যায়, টেবিলের সাথে হেলান দিয়ে সেটি রাখা ছিল। স্টুডিওর দরজা দিয়ে সরাসরি বাইরের একটি মাঠে যাওয়া যায়, তখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। পঞ্চাশ ফুট দূরেই, সাদা রঙের কাঠের তক্তা দিয়ে বানানো একটি বাড়ি। যেখানে নীচের তলার জানালায় আলো জ্বলছে, মুমুর্ষু দিনের প্রতি এই দুটি জানালায় আলো জ্বলার দৃশ্যটি সাবিনাকে আন্দোলিত করছিল।

সারাটা জীবনই সে ঘোষণা করেছে যে ‘কিচ’ হচ্ছে তার শত্রু। কিন্তু বাস্তবেই কি সেটি সে তার নিজের সাথে বহন করছে না? তার ‘কিচ’ ছিল বাড়ি সংক্রান্ত একটি চিত্র: প্রশান্ত, নীরব এবং সংহতিপূর্ণ ঘর, যেখানে শাসন করবে একজন স্নেহময়ী জননী আর একজন বিজ্ঞ পিতা। এটি সেই দৃশ্য যা তার মধ্যে দানা বেধেছিল তার বাবামায়ের মৃত্যুর পর পরই। যতই সাবিনার জীবন তার সবচেয়ে মধুরতম স্বপ্নের কম সাদৃশ্য হয়ে উঠেছে, আরো বেশী সে দৃশ্যটির জাদুময় আবেদনের প্রতি সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে, আর একাধিক বার সে চোখের পানি ফেলেছে, যখন অকৃতজ্ঞ কোনো কন্যা, ভাবালুতাপূর্ণ সেই চলচ্চিত্রে অবহেলিত বাবাকে যখন আলিঙ্গন করেছে, যখন মুমুর্ষু দিনের প্রতি উজ্জল হয়ে জ্বলছিল একটি সুখি পরিবারের ছোট একটি বাড়ির দুটি জানালা।

বৃদ্ধ এই মানুষটির সাথে তার পরিচয় হয়েছিল নিউ ইয়র্কে থাকার সময়। সে ধনী এবং চিত্রকর্ম পছন্দ করে, তার স্ত্রীর সাথে সে একা বাস করে, গ্রামের একটি বাড়িতে, এই বাসাটির ঠিক উল্টোদিকে কিন্তু তার নিজের জমিতেই ছিল একটি পুরোনো আস্তাবল। সেটিকে সে নতুন করে সাজিয়ে দিয়েছে সাবিনার জন্য একটি স্টুডিও হিসাবে এবং প্রায় সারাদিন ধরেই সে তার তুলির প্রতিটি ভঙ্গি অনুসরণ করে মনোযোগের সাথে ।

এখন তারা তিনজনই একই সাথে রাতের খাবার খেতে বসবে। বৃদ্ধা সাবিনাকে তার নিজের মেয়ে বলে ডাকে, কিন্তু সব ইঙ্গিতই যে কাউকে এর বিপরীতটাই বিশ্বাস করতে সুযোগ করে দেবে, সেটি হচ্ছে মূলত সাবিনাই হচ্ছে তাদের মা, এবং দুই সন্তান পুরোপুরিভাবে তার অনুরক্ত, তাকে তারা উপাসনা করে, সে চাইলে তার জন্য তারা যে কোনো কিছু করতে প্রস্তুত।

তাহলে কি সে নিজেই, এখন বৃদ্ধ বয়সের দ্বারপ্রান্তে, খুঁজে পেয়েছে সেই বাবামাকে, যাদের তার কাছ কেড়ে নেয়া হয়েছিল শৈশবে? নাকি সে অবশেষে সেই সন্তানদের খুঁজে পেয়েছে যে সন্তানদের সে নিজে কখনো জন্ম দিতে পারেনি?

সে খুব ভালোভাবেই সচেতন ছিল যে, বিষয়টি একটি বিভ্রম। এই বৃদ্ধ দম্পতির সাথে তার সময় কাটানো শুধুমাত্র সংক্ষিপ্ত একটি বিরতি। বৃদ্ধ খুবই অসুস্থ, এবং যখন তার স্ত্রী একা হয়ে যাবেন তার মৃত্যুর পর, তিনি কানাডায় তার ছেলের সাথে বসবাস করতে চলে যাবেন। আর সাবিনার বিশ্বাসঘাতকতার পথ তাহলে অন্যদিকে অব্যাহত থাকবে, এবং তার সত্তার গভীর থেকে একটি হাস্যকর ভাবপ্রবণ গান, এই দুটি উজ্জ্বল জানালা আর সুখি পরিবার যারা এর পেছনে থাকে, কখনো তার পথ খুঁজে নেবে বেঁচে থাকার দুঃসহ নির্ভারতায়।

যদিও গানটির সুর আন্দোলিত করে সাবিনাকে, তবে তার অনুভূতিগুলো গুরুত্বের সাথে সে কখনো নেয়নি। খুব ভালো করেই সে জানতো এই গানটি খুব সুন্দর একটি মিথ্যা। যত শীঘ্রই ‘কিচ’কে শনাক্ত করা সম্ভব হয় যে মিথ্যাকে সেটি প্রতিনিধিত্ব করছে, এটি আর ‘কিচ’ নয় এমন একটি প্রাসঙ্গিকতার বিষয়ে তা সরে যায়, এভাবে এটি এর সর্বব্যাপী ক্ষমতাকেও হারায় ও রূপান্তরিত হয় মানব দুর্বলতার মতো মর্মস্পর্শী কোনো রূপে। কারণ আমাদের মধ্যে কেউই সে মহামানব নয়, যারা ‘কিচ’ থেকে পুরোপুরিভাবে পালাতে পারে। যতই আমরা তা ঘৃণা করিনা কেন, মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে ‘কিচ’।

১৩
‘কিচে’র উৎস লুকিয়ে আছে বেঁচে থাকার আবশ্যিকতার প্রতি সেই মতৈক্যের সাথে।

কিন্তু এই বেঁচে থাকার ভিত্তিটি কি? ঈশ্বর? মানবতা? সংগ্রাম? ভালোবাসা? পুরুষ? নারী?

যেহেতু মতামতে ভিন্নতা আছে, বহু ধরনেরও ‘কিচ’ আছে, ক্যাথলিক, প্রোস্টেটান্ট, ইহুদী, কমিউনিস্ট, ফ্যাসিস্ট, গণতান্ত্রিক, নারীবাদ, ইউরোপিয়, আমেরিকান, জাতীয়, আন্তর্জাতিক।

ফরাসী বিপ্লবের সেইসব দিনগুলো থেকে, অর্ধেক ইউরোপকে ‘বাম’ আর অন্য অর্ধেককে ‘ডান’ হিসাবে চিহ্নিত করা হতো। কিন্তু সেই তাত্ত্বিক মূলনীতিটি যা তারা প্রচারণা করে, সেটি ব্যবহার করে তাদের সংজ্ঞায়িত করার কাজটি ছিল রীতিমত অসম্ভব এটি প্রচেষ্টা। এবং অবাক হবার কোনো কারণও নেই: রাজনৈতিক আন্দোলনগুলো যৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গির উপর ততটা বেশী নির্ভর করে না, যতটা বেশী সেটি করে এর সাথে যুক্ত কল্পনা, ছবি, শব্দ আর আদিরূপগুলোর উপর, একসাথে যেগুলো জড়ো হয়ে তৈরি করে একটি ‘রাজনৈতিক কিচ’।

গ্র্যান্ড মার্চের সেই কল্পনা, ফ্রাঞ্জকে যা এত বেশী মত্ত করছিল, সেটি হচ্ছে একটি ‘রাজনৈতিক কিচ’, যা নানা সময়ের আর মানসিকতার বামপন্থীদের একসাথে যুক্ত করেছিল। দ্য গ্র্যান্ড মার্চ হচ্ছে ভ্রাতৃত্ব,সাম্যতা, ন্যায়বিচার ও সুখের পথে চমৎকার একটি মিছিল। এটি চলমান, সব প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে, কারণ বাধা থাকতেই হবে যদি এই মিছিলকে কোনো গ্র্যান্ড মার্চ হতে হয়।

প্রলেতারিয়েতদের একনায়কতন্ত্র অথবা গণতন্ত্র? ভোগবাদী সমাজকে প্রত্যাখ্যান অথবা আরো বেশী উৎপাদনের দাবী? গিলোটিন নাকি মৃত্যুদণ্ডের বিধান বিলোপ? সব কিছুই এখানে অপ্রাসঙ্গিক। যা কোনো বামপন্থীকে একজন বামপন্থী করে তা শুধু এটা অথবা অন্য কোনো তত্ত্ব নয়, বরং গ্র্যান্ড মার্চ নামের ‘কিচে’ যে কোনো তত্ত্বকে একীভূত করতে পারার তার ক্ষমতা।

১৪
ফ্রাঞ্জ অবশ্যই কোনো ‘কিচ’ পূজারী ছিল না। গ্র্যান্ড মার্চের কল্পনা কম বেশী তার জীবনে সেই একই ভূমিকা পালন করেছে যেমন উজ্জ্বল আলো জ্বলা দুটি জানালা নিয়ে অতিভাবপ্রবণ গান সাবিনার জীবনে করেছিল। কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে ভোট দিয়েছিল ফ্রাঞ্জ? আমার সন্দেহ সে আদৌ কখনো ভোটই দেয়নি; নির্বাচনের দিনে পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানোই শ্রেয়তর ছিল তার কাছে। যা অবশ্যই ইঙ্গিত করে না, গ্র্যান্ড মার্চের ভাবনা তাকে তার আন্দোলিত করেনা। সবসময়ই এমন কোনো স্বপ্ন দেখতে ভালো লাগে, যেখানে আমরা একটি আনন্দিত জনগোষ্ঠীর অংশ যারা শতাব্দীর পর শতাব্দী মিছিল করে সামনে অগ্রসর হচ্ছি, এবং ফ্রাঞ্জ পুরোপুরিভাবে কখনোই সেই স্বপ্নটি ভুলে যেতে পারেনি।

একদিন, কয়েকজন বন্ধু প্যারিস থেকে তাকে ফোন করেছিল। তারা কম্বোডিয়ার জন্য একটি বিশাল মিছিলের আয়োজন করেছে, তাকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছিল তারা সেখানে যোগ দেবার জন্য।

কম্বোডিয়া এর কিছুদিন আগেই আমেরিকার বোমা হামলা, গৃহযুদ্ধ, স্থানীয় কমিউনিস্টদের আকস্মিক ধ্বংসলীলার শিকার হয়েছিল, যা ক্ষুদ্র এই জাতির জনসংখ্যা এক পঞ্চমাংশকে হ্রাস করেছিল। এবং অবশেষে এটি দখল করেছে নিকটবর্তী ভিয়েতনাম, যে দেশটি তখন মূলত রাশিয়ার অনুগত। কম্বোডিয়া শিকার হয়েছিল ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের, চিকিৎসার অভাবে সেখানে মানুষের মৃত্যু ছিল নিয়মিত ঘটনা। একটি আন্তর্জাতিক মেডিকেল কমিটি বারবার অনুমতি চেয়েছে দেশটিকে প্রবেশ করার জন্য, কিন্তু ভিয়েতনামীরা তাদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে প্রতিবারই। ফ্রাঞ্জের ফরাসী বন্ধুদের পরিকল্পনা হচ্ছে একদল গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিমা বুদ্ধিজীবী কম্বোডিয়ার সীমানা অবধি মিছিল করে যাবেন এবং সারা পৃথিবীর সামনে এই মহাপ্রদর্শন পরাধীন এই রাষ্ট্রের আগ্রাসীদের বাধ্য করবে চিকিৎসকদের সেই দেশে প্রবেশ করার অনুমতি দেবার জন্যে।

যে বন্ধুটি ফ্রাঞ্জের সাথে কথা বলেছিল ফোনে, যার সাথে সে প্যারিসের রাস্তায় বহু মিছিল করেছে। প্রথমে এই আহবানে ফ্রাঞ্জ বেশ রোমাঞ্চ বোধ করেছিল, কিন্তু তারপর, যখন তার চোখ পড়ে ঘরের অন্যপাশে আর্মচেয়ারে বসা তার ছাত্রী প্রেমিকার উপর, যে তখন তার দিকে তাকিয়ে ছিল, আর তার চোখ চশমার গোল কাচের পেছনে আরো বড় দেখাচ্ছিল। ফ্রাঞ্জের মনে হয়েছিল তার সেই চোখগুলো যেন তার কাছে মিনতি করছে সে যেন না যায়। সুতরাং সে ক্ষমা চেয়ে অনুরোধটি প্রত্যাখ্যান করে।

কিন্তু যে মুহূর্তে ফোনটি রাখে তখনই ফ্রাঞ্জ তার সিদ্ধান্তের জন্য অনুশোচনা বোধ করতে শুরু করেছিল। সত্যি, সে এই পার্থিব প্রেমিকার দেখাশোনা করছে ঠিকই, কিন্তু সে অবহেলা করছে তার অপার্থিব ভালোবাসাকে। কম্বোডিয়া কি ঠিক সাবিনার দেশের মত নয়? একটি দেশ যাকে পরাধীন করে রেখেছে পার্শ্ববর্তী একটি দেশের কমিউনিস্ট সেনারা। একটি দেশ যে কিনা রাশিয়ার মুষ্টিবদ্ধ হাতে আক্রমণ অনুভব করেছে আগে। ফ্রাঞ্জ অনুভব করে তার প্রায় বিস্মৃত বন্ধুরা যেন তার সাথে যোগাযোগ করেছে সাবিনারই দেয়া গোপন নির্দেশে।

স্বর্গীয় সত্তারা সব জানেন আর দেখতে পারেন। যদি সে মার্চে যোগ দেয়, সাবিনা মুগ্ধ হয়ে তাকে উপর থেকে দেখবে, সে বুঝবে ফ্রাঞ্জ এখনও তার প্রতি অনুগত ও বিশ্বস্ত রয়েছে। ‘তুমি কি খুব বেশী মন খারাপ করবে যদি আমি এই মিছিলে যাই’? সে চশমা পরা মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করে। যে ফ্রাঞ্জ থেকে বিচ্ছিন্ন প্রতিটি দিনকে পরিমাপ করে বড় ক্ষতি হিসাবে, কিন্তু তারপরও ফ্রাঞ্জের কোনো ইচ্ছাকে অস্বীকার করতে সে পারে না।

কয়েকদিন পর বিশজন ডাক্তার আর প্রায় পঞ্চাশজন বুদ্ধিজীবীর (অধ্যাপক,লেখক, কূটনীতিবিদ, শিল্পী, অভিনেতা এবং নগরপালরা) সাথে ফ্রাঞ্জ একটি বড় জেট প্লেনে চড়ে প্যারিস থেকে তার যাত্রা শুরু করে, এছাড়াও তাদের সাথে ছিল প্রায় চারশ রিপোর্টার ও আলোকচিত্রী।
(চলবে)

আপনার মন্তব্য