বর্গমাইলের পদাতিক : ১৭-১৯

 প্রকাশিত: ২০১৬-১০-৩১ ২১:৫৪:০৭

রাজা সরকার:

ব র্গ মা ই লে র প দা তি ক
১৭
ঊর্মিলা বাজার করে ঘরে ফিরে এলো। বাচ্চারা মহা আনন্দে ঠোঙার খাবার ইচ্ছে মতো খেয়ে চলেছে। ঊর্মিলা খাবার দেখে অবাক। বাচ্চারা বললো—‘মামায় আনছে’। শুনে ঊর্মিলা শুধু ‘অ’ বলেই ঘরের এককোণে নামিয়ে রাখলও আলু পেঁয়াজের সঙ্গে আরও টুকিটাকি ভর্তি দুটো ব্যাগ। পরিশ্রম হয়েছে তার। ভারি শরীর নিয়ে সে বাচ্চাদের পাশে বসে পড়লো। ভাবতে লাগলো সুবোধ দোকানের খাবার আনতে গেল কেন? বাচ্চারা কি কিছু খেতে চেয়েছিলও? নাকি ওর নিজেরই খিদে লেগেছিল?—হতে পারে—সেই কোন সকালে শ্মশানে গিয়েছিল—ঘরে ঢোকার আগে স্নান টান করেছিল কিনা কে জানে—যা উড়নচণ্ডী ছেলে। কি যে মতি গতি তার কিছুই বুঝি না।

ঠিক রাত আটটায় ঘটনাটি ঠিকই ঘটলো। ঊর্মিলা তখন তপ্ত কড়াইয়ের সামনে। সামনে জম জমাট ভিড়। ঊর্মিলার জানার কথা নয় যে তার আগে সারাদিন সুবোধের মনে বয়ে গেছে ঝড়। নিজেরই মুখ নিঃসৃত কথা যে প্রতিমুহূর্তে এভাবে তাকেই প্রণোদিত করে যাবে এটা সুবোধ ভাবতে পারে নি। জীবনে এই প্রথম কথা-শব্দের শক্তি সুবোধ অনুভব করতে পারলো।

একটু আগেই ঘটনা স্থলের কাছাকাছি সুবোধ চলে যায়। কিন্তু সে পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেনি যে জাহানারা শেষপর্যন্ত বেরিয়ে আসবে। এটা বস্তির পেছন দিক। জায়গাটা অপরিষ্কার। লোকজন বিশেষ আসেনা। তার মধ্য দিয়ে ঠিক সময়ই দেখা গেল সন্তর্পণে বেরিয়ে আসছে জাহানারা। এতোটা ঝুঁকি জাহানারা নিতে পারলো? সুবোধ মনে মনে বুঝতে পারছে এর বিপদ কতটুকু। তাই জাহানারাকে নিয়ে সে দ্রুত মিলিয়ে গেল। কিছুটা হেঁটে, কিছুটা রিক্সায়, ইচ্ছাকৃত ভাবে এলোমেলো পথে সে নিউ জলপাইগুড়ি রেল স্টেশনে পৌঁছে গেল। সঙ্গে সঙ্গেই টিকিট কাউন্টারে লাইনে দাঁড়িয়ে দুটো শিয়ালদার টিকিট কেটে নিয়ে প্ল্যাটফর্মের ভিড়ে মিশে থাকার চেষ্টা করলো। কমল ঘরে না ফেরা অবধি জাহানারার অনুপস্থিতি নিয়ে কেউ ভাববে না।

সুবোধ হয়তো এই চিন্তাটা করার এখনও সময় পায় নি যে তার এই অজ্ঞাতবাসের একটা অধ্যায় শেষ হয়ে গেল আজ কিছুক্ষণ আগে। ঊর্মিলা, ঊর্মিলার বাচ্চারা, রেল-বস্তির জীবন-নামা—সুবলের পান সিগারেটের দোকান, মন্টুর চা’এর দোকান, বা দেবেন বা দেবেনের মতো অনেকের, দিনের বেলার ভাতের হোটেল, রাতের বেলায় রূপান্তরিত হয়ে যাওয়া মদের দোকান—সব তার থেকে ক্রমশ: বাস্তবিক দূরে দূরে সরে যেতে থাকলো। ট্রেন চলছে। ট্রেন চলুক। পার হয়ে যাক মাইলের পর মাইল। তারা এখন অনেক অনেক দূরত্ব চাইছে শুধু। ট্রেনের গতি ও দোলায় একটু পরেই হয়তো তাদের মস্তিষ্ক আর দুশ্চিন্তার ভার বইতে চাইবে না। বরং চাইবে ঘুম, ঘুমের মধ্যে একটু বিশ্রাম।

দোকান বন্ধ করে ঊর্মিলা হয়তো এদিক ওদিক চেয়ে খুঁজবে সুবোধ কোথায়। একসময় না পেয়ে হয়তো ভাববে বাবু আজ আবার মদ গিলছে হয়তো কোথাও বসে। কিছুটা রাগ হবে। হবে কিছুটা অভিমানও। কিন্তু ততক্ষণে সে গুছিয়ে তুলে নেবে দোকান। ফিরেও যাবে ঘরে। হয়তো এক সময় অনেক রাতেও সুবোধের না-ফেরার দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে শুয়েও পড়বে। মেয়েমানুষ, রাত বিরেতে কোথায় খুঁজতে যাবে সে?

১৮
দু’দিন পরের সন্ধ্যে। সমীর, মানস, অরিন্দমরা এসে দেখলও জায়গাটা বেশ থমথমে। এখানে ওখানে ভিড়, জটলা। দোকান পাট ঠিক খোলা অথচ খোলা নয়। দেবেনের দোকান খোলা।কিন্তু খদ্দের নেই।বোধ হয় মদ বেচা বন্ধ। কাছে যেতেই দেবেন নিচু স্বরে জানিয়ে দিল—চলে যান, আজ ঝামেলা আছে।

খবর পাওয়া গেল ঊর্মিলাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। সেই সূত্রে শহরের কোনো মহিলা সংগঠন একটু আগে এখানে মিটিং করে গেছে। তাদের সঙ্গে পুলিশও ছিল। তাদের বক্তব্য ছিল গ্রেপ্তারের নামে ঊর্মিলার উপর শারীরিক লাঞ্ছনা করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় মহিলা পুলিশ ছিলো না,--ইত্যাদি ইত্যাদি। মিটিং এ বস্তির উলঙ্গ ও অর্ধ-উলঙ্গ বাচ্চারাই ভিড় করেছিল বেশি। বস্তির পুরুষেরা দূরে দাঁড়িয়ে মহিলাদের বক্তৃতা-শ্রম উপভোগ করছিল। স্ত্রীলোকেরা মরদদের দাঁত খিঁচুনি খেয়ে বেড়ার আড়াল থেকে দেখছিল ভয়ে ভয়ে। এ ছাড়া পথ চলতি আমোদপ্রিয় মানুষেরা-তো ছিলই। সংক্ষিপ্ত মিটিং। কিন্তু তাতে এই অঞ্চলের সন্ধ্যেবেলাকার জীবন জীবিকা যেন কিছুটা এলোমেলো হয়ে গেল।

ঘটনা হলো, সুবোধ আর জাহানারা উধাও। অতঃপর কমল কর্তৃক পুলিশে ডায়েরি। অভিযোগ; ‘মেয়ে চালান’। সুবোধ এবং উর্মিলার বিরুদ্ধে। সে দিন রাত দুটো নাগাদ বাড়ি ফিরে কমল দেখতে পায় জাহানারা ঘরে নেই। দরজা বাইরের দিক দিয়ে টানা। কমল সাড়া না পেয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখে ঘর খালি। অভিজ্ঞ কমল ঘটনা নিয়ে রাতে আর কিছু না করে শুয়ে পড়ে। ভোরবেলা উঠে সে প্রথমে ঊর্মিলার কাছে খোঁজ করে জাহানারার। ঊর্মিলা শুনেতো অবাক। যে মেয়ে বস্তির বাইরে কখনো পা দেয় না, সে কিনা রাতে ঘরে নেই! চিন্তিত কমলের প্রতি সহমর্মিতায় সেও বেশ চিন্তান্বিত হয়ে পড়ল। কম-কথা বলা কমলের সঙ্গে সে-ই বেশি কথা বলল এবং আফসোস করল। শেষে কথা প্রসঙ্গে বলল যে সুবোধও কোথায় যে গেল—কাল রাতে সেও ঘরে ফেরেনি।

কমল আর বেশি দাঁড়ায় নি। ঊর্মিলার শেষের কথাটি তুলে নিয়ে মাথা নিচু করে সে চলে গেল। মনে মনে ‘সুবোধ’ নামটি নিয়ে ঘরে ঢুকে বিছানায় বসে কিছুক্ষণ ভাবলও। সন্দেহ জমাট বাঁধতে খুব বেশি সময় লাগে নি। দেখতে শুনতে-তো মনে হতো ভদ্র ঘরের ছেলে। অবশ্য টাকা আর মেয়েছেলের লোভের সামনে সব শালা সমান। চোরের উপর বাটপারি! মুখের গ্রাস কেড়ে নেয়ার শোধ তুলতে কমল একদম চেঁচামিচি করলও না। আরও কিছুক্ষণ ঘরে কাটিয়ে একসময় নিঃশব্দে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

পুলিশের খাতায় জাহানারার বস্তির নামটাই দেয়া হল। শিবানী। দেখানো হলও কমলের বিবাহিতা স্ত্রী। থানার বড়বাবু গোঁফের তলায় সরু করে হাসলেন। হেসে বললেন—ঠিক আছে, ঠিক আছে, যা দেখছি।

সুবোধকে পাওয়া যায়নি। তাই ঊর্মিলাকে তোলা হয়েছে। যারা টেনে হিঁচড়ে ঊর্মিলাকে ভ্যানে তুললো, তাদের কেউ কেউ ঊর্মিলার তেলে-ভাজা’র খদ্দের। পারলে প্রায় পাঁজা কোলে করে তুলে নেয় আর কি। মেয়ে পুলিশ ছাড়া ঊর্মিলাকে এরকম হেনস্থা হতে দেখে সরকারি কুয়োর পাড়ে ভিড় করে থাকা বস্তির মহিলারা চীৎকার করে পুলিশের উদ্দেশ্যে নিজস্ব ভাষায় গালাগাল করতে লাগলো। গালাগাল শুনে কোন কোন পুলিশ মুচকি হাসলও। অবশ্য ভ্যান চলে যেতেই গালাগাল এবার কমলের উদ্দেশ্যে বর্ষিত হতে লাগলো। তাদের কারো কারোর ইচ্ছে ছিল কমলের ঘর দুয়ার ভেঙে ফেলার। কিন্তু দু’একজন মাতব্বর গোছের বস্তিবাসী এই কাজ থেকে তাদের নিবৃতও করল। কারণ, তারা কমলের ক্ষমতা সম্পর্কে বিলক্ষণ জানে।

ঊর্মিলার বাচ্চারা গোলমালের মধ্যে আতংকে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে ফাঁকফোকর খুঁজছিল মা’কে ধরার জন্য। কিন্তু পুলিশের বেষ্টনী তারা ভেদ করতে পারলো না। শেষে যখন মা’কে নিয়ে ভ্যান-গাড়িটা চলে গেল, তখন তারা উচ্চস্বরে কাঁদতে শুরু করল।

এই সব হৈ চৈ গোলমালের ভেতর কখন যে রিপোর্টার এসেছিলো—তা কেউ টের পায় নি। টের পাওয়া গেল পরদিন সকালে। যখন স্থানীয় খবরের কাগজে বেরোল সচিত্র রিপোর্ট। ছবিতে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে ভ্যানে তোলার আগে ঊর্মিলাকে—কাপড় চোপড় ঠিক নেই—হাত ধরে আছে দু’দিকে দু’জন পুলিশ।

মহিলা সংগঠনের মিটিং এ গ্রেফতারের সময় ‘মেয়ে পুলিশ’কেন আসেনি—জোর ছিল এ-টাতেই। পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণাতে জানানো হল যে আগামী কাল এই নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে মহকুমা শাসকের অফিসের সামনে ধর্না, বেলা ১ টায়। মাইক, প্যান্ডেল—ইত্যাদি নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে সেখানে। কেউ কেউ ভাবলো—যাক, বাঁচা গেল। ধর্মঘট ডাকে নি—এই রক্ষে।

১৯
ভিড় আর ভিড়। সুবিধে আছে ভিড়ের। নানা ভাষা, নানা জাত। স্টেশনের ওয়েটিং রুমের এককোণে ঠেলে ঠুলে জায়গা নিয়েছে সুবোধ আর জাহানারা। রাতের ঠাঁই। ট্রেনটা অনেক দেরিতে শিয়ালদা পৌঁছোয়। পৌঁছনোর পর তারা উভয়েই স্টেশনের ভিড় দেখে কিছুটা ঘাবড়ে যায়। কিন্তু মাথায় তখনও ধরা পড়ার আতংক। তাই শিয়ালদা স্টেশন খুব নিরাপদ মনে হলো না। ফলে তারা বেরিয়ে আবার লোকাল ট্রেনের টিকিট কেটে চলে আসে বালিগঞ্জ। এসে এই ওয়েটিং রুমে ঢুকে পড়ে। প্রকাশ্য স্টেশনে বসা বা ঘোরাঘুরি করার বিপদ আছে। মনে মনে ভাবলো কাজটা খারাপ হয়নি। রাতটা কাটুক। পরদিন সকালে যা করার করা যাবে।

দু’জন পাশাপাশি বসে যেন কিছুটা দম ফেলার সুযোগ পেল। মানুষের ঘেরাটোপে কিছুটা নিশ্চিন্তিও বোধ করলো। ফিরে তাকালো পাশে বসা জাহানারার দিকে। এতক্ষণ সময় পাশাপাশি চলা সত্ত্বেও সে জাহানারার দিকে ঠিকমতো তাকাতে পারে নি। এখন তাকিয়ে দেখছে। মাথায় ঘোমটা। কাপড়টা একটানা পরে থাকার দরুন যা হয়, একেবারেই খারাপ অবস্থা। জড়বৎ একজন মানুষ অথবা কাপড়ের একটা পুটুলি মাত্র। ঘর থেকে বের হওয়ার পর এখন পর্যন্ত সুবোধের সঙ্গে তার কোন কথা হয়েছে কিনা সুবোধ মনে করতে পারছে না। জাহানারার দিকে মুখ ঘুরিয়ে সুবোধ জিজ্ঞেস করল—‘বলি, সঙ্গে কিছু আছে’?

প্রায় দু’দিনের নিঃশব্দ অনুসরণ। ট্রেনের মধ্যে ঠেলা,ধাক্কা, ঘুমের মধ্যে পরস্পর আশ্রয় করা—হঠাৎ জাহানারার মনে হলো, যেন কতকাল কথা কওয়া হয়নি। নিজের কণ্ঠস্বর যেন নিজেরই আর মনে নেই। বিমূঢ় জাহানারা উত্তর দিতে গিয়ে ভীষণ শ্রান্ত বোধ করলো। তবু অনেকটা চাপা আর ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলে উঠলো—‘না’।

বলেই বুঝতে পারলো আর একটু বলা দরকার। সুবোধ উত্তর শুনে শুধু বলল—‘অ’। প্রায় সঙ্গেই জাহানারা বলে উঠলো,

--একখান চুড়ি আছে সোনার।

--থাক। কাপড়চোপড় আছে কিছু?

--একখান আছে, ছিরা, পরন যাইব না।

--হুম।

--আমারে বাপের কাছে দিয়া আসেন।

--যাওয়ার উপায় নাই।

--য্যামন কইরা পারেন, আপনের পায় পড়ি—

--উপায় নাই, বললাম তো। ধরা পড়লে আমি শ্যাষ, সাথে থাকলে তুমিও বাঁচবানা।

--হায় আল্লাহ্‌!

হাতে বিড়ি আর দেশলাই নিয়ে সুবোধ উঠে দাঁড়ালো। বলল,
--নড়বানা,এইখান থাইক্যা—আমি আসতাছি--

--যান কই, লইয়া যান আমারে—

ফিরে দাঁড়াল সুবোধ। কাছে এসে একটু ঝুঁকে বলল
--যাব না। ফেলে রেখে যাওয়ার জন্য সাধ করে আনিনি। বস চুপ করে। এখুনি আসছি।

ঘোমটার আড়াল থেকে যতক্ষণ সুবোধকে দেখা গেল এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকল জাহানারা। দৃষ্টির বাইরে যেতেই বুকটা তার কেমন ধড়াস করে উঠলো। টের পেল তলপেটে মারাত্মক মোচড়। সঙ্গে মাথা ঘোরানো। ক্রমে ঝাপসা হয়ে এলো চোখ। ধীরে ধীরে অসম্ভব ভারি হয়ে এলো শরীরটা। দেয়াল ঘেঁসে কোনরকমে কাত হয়ে শুয়ে পড়ল। তারপর আর মনে নেই।

মনে হলো অনেকক্ষণ। চোখ মেলে দেখে সুবোধ তার দিকে ঝুঁকে আছে। মুখে মাথায় জল—ভেজা ভেজা। ঘোমটার জন্য কাপড় না পেয়ে লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলল। জায়গাটা জলে ভিজে গেছে। সুবোধ ধরে ধরে একটু সরিয়ে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিলো। সামান্য পোটলা দুটির একটি খুলে শুকনো একটা কাপড়ের অংশ বের করে জাহানারার হাতে দিল।

পাশে রাখা—এতক্ষণ জাহানারার চোখে পড়েনি, একটা ঠোঙার মধ্যে কিছু খাবার আর প্লাস্টিকের বোতলে জল। সুবোধ ইশারা করলো ওগুলো খাওয়ার জন্য।

--আপনে খান—

--খেয়েই এনেছি। তাড়াতাড়ি খাও।

জাহানারা একটু মুখ ঘুরিয়ে খেতে লাগলো। বোঝা গেল খিদের তীব্রতা।

--বাড়ি গেলে বাপের ঘরে নেবে-তো?

--ক্যান--?

--ঠিক করে ভাইবা কও। তাড়াহুড়া নাই।

--না নিলে ওইখানেই মরুম।

--মরবাই যখন, তখন আর পলাইলা ক্যান?

জাহানারা চুপ। বিহ্বল চোখে এক পলক সুবোধকে দেখে চোখ নামিয়ে নিলো।

অনুচ্চ গলায় তাদের এই কথাবার্তাগুলো একান্ত তাদের মধ্যেই থেকে গেল।‘যান কই, লইয়া যান আমারে’—কথাগুলো সুবোধের মাথায় তখন থেকে রিন রিন করে বাজছে। কান্না-ভেজা এই আর্ততা'র সঙ্গে তার কি আগে কোনোদিন দেখা হয়েছিল?—মনে করতে পারছে না। ভেতরে ভেতরে খুব অস্থির লাগছে তার।

সুবোধ কথাগুলো ভাবতে ভাবতে কিছুক্ষণ পায়চারি করলও এদিক ওদিক। তারপর একসময় জাহানারার পাশে একটু জায়গা নিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসেও পড়ল। দেয়ালের একটা ঠাণ্ডা স্পর্শ এই সময় যেন সুবোধকে একটু বেশি মাত্রায় সচেতন করে তুলল। চোখে ঘুম, কিন্তু শরীর ত্রস্ত। একটু পরেই বোঝা গেল খাওয়ার পর জাহানারার ঘুম—কেঁপে কেঁপে ওঠা শ্বাস-প্রশ্বাস—বসে বসেই ঘুমোচ্ছে। ঘুমোক। ওর অনেক ঘুম দরকার।
[চলবে]

আপনার মন্তব্য